মোহাম্মদ মিফতাহুল ইসলাম
এই তো কয়েক দশক আগেও আমাদের দেশে ঘরে ঘরে দূরে থাক, পুরো এলাকা খুঁজেও একটা ঘড়ি পাওয়া যেত না। তখনো মানুষ পবিত্র রমযান মাসে রোযা রাখতেন, নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই সেহরি খাওয়া বন্ধ করতেন, নির্ধারিত সময়েই ইফতার করতেন। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব হতো? আমাদের বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিষয়টি বিস্ময়কর মনে হলেও সে যুগের মানুষের কাছে তা অসম্ভব ছিল না।
সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি মূলত সূর্যের উদয় এবং অস্তের সাথে সম্পৃক্ত। তাই সে যুগে অনেকেই সূর্যের অবস্থান দেখে ইফতারের সময় নির্ধারণ করতেন। কিন্তু এটিই সময় নির্ধারণের একমাত্র পদ্ধতি ছিল না। বিশেষত সেহরির ক্ষেত্রে অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হতো, কেননা সূর্যোদয়ের অনেক আগেই সেহরির সময় শেষ হয়ে যায়। সাধারনত বিভিন্ন তারকার অবস্থান, পাখির ডাক শুনে সেহরির সময় নির্ধারণ করতেন অভিজ্ঞরা।
তবে এসব পদ্ধতিতে যে সব সময় সঠিকভাবে সময় নির্ধারণ করা সম্ভব হতো, তা কিন্ত নয়। এমনকি ইসলামের প্রাথমিক যুগেও সময় নির্ধারণে অনেক সময় দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়তে হতো। একবার দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.) এর শাসনামলে রমযান মাসের কোনো একদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। সাহাবায়ে কেরামগণ সূর্যাস্ত হয়ে গেছে ভেবে ইফতার করে ফেলেন। সূর্যাস্তের পূর্বেই আবার আকাশ মেঘমুক্ত হলে সাহাবায়ে কেরামগণ বুঝতে পারেন যে এখনো ইফতারের সময় হয়নি।
আমাদের দেশেও এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটত। বিশেষত মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখে সময় নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ত। তাছাড়া অনেক দিন এমনও হতো, পাখির ডাক শুনে হয়তো সেহরির সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে ভেবে তাড়াহুড়ো করে সেহরি করলেন, পরে ঘর থেকে বেরিয়ে তারকারাজির অবস্থান দেখে বুঝতে পারলেন, এখনো কয়েক ঘণ্টা সময় বাকি! হয়তো ঘুমের ঘোরে অন্য কোনো পাখির ডাক শুনে ভেবেছেন সেহরির সময়ের পাখি ডাকছে, কিংবা ঐ পাখিটিই কোনো কারণে ঐ দিন নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে পরের দিন অনেক হাসাহাসিও হতো।
আধুনিক যুগে কেউই ফুল, পাখি কিংবা তারকারাজির উপর নির্ভর করেন না। সবার ঘরেই সময় জানার প্রযুক্তি আছে। এসব প্রযুক্তির বদৌলতে যে সময় নিয়ে বিভ্রান্তি একেবারে শেষ হয়ে গেছে, তা কিন্তু নয়। পবিত্র রমযান মাসের আগমণের পূর্বেই আজকাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন রমযান মাসের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি মুদ্রণ করে বিতরণ করে থাকে। প্রায়ই এসব মুদ্রিত সময়-সূচির মধ্যে কয়েক মিনিটের পার্থক্য লক্ষ করা যায়। এ নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্কও হয়ে থাকে।
এ তো গেল এক ধরনের বিভ্রান্তি। এ ছাড়াও আগের যুগের মানুষ যে ধরনের বিভ্রান্তিতে পড়তেন, আজকালও অনেকেই ঠিক সেই রকমের বিভ্রান্তিতে পড়ে থাকেন। প্রায়ই শুনা যায় ঘড়ির কিংবা মোবাইলের টাইম নষ্ট হয়ে যাওয়াতে সেহরির সময় নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। ঠিক যেন ভুল সময়ে পাখির ডাক শোনা কিংবা মেঘাচ্ছন্ন আকাশে সূর্যাস্তের সময় ভুল বোঝার মতো!
তবু আধুনিক প্রযুক্তির সুবাদে সময় নিয়ে বিভ্রান্তি যে অনেক কমেছে, তা অনস্বীকার্য। আগের যুগের মানুষদের তুলনায় অনেক সহজে আমরা সেহরি ও ইফতারের সময় নির্ধারণ করতে পারছি, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও কোন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। এ জন্যে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতেই হয়।
ষ লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন