দক্ষিণ এশিয়ার লোকসংগীতের সর্ববৃহৎ আসর ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টের পঞ্চম আসর শেষ হলো গত শনিবার মধ্যরাতে। বরাবরের মতো এবারের আসরটিও বসে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে। সান ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এই আয়োজন গত ১৪ নভেম্বর শুরু হয়।
এবারের আসরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬টি দেশ থেকে ২০০ জনেরও বেশি লোকশিল্পী ও কলাকুশলী অংশ নিয়েছেন। প্রতিবারের মতো এবারও দর্শকরা বিনামূল্যে শুধুমাত্র অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সরাসরি উপভোগ করেন।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এই উৎসবে ছিল শ্রোতাদের উপচেপড়া ভিড়। পুরো আয়োজনটিও ছিল দৃষ্টিনন্দন। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া লোকসংগীতের সুরের মূর্ছনা শ্রোতাদের মাতোয়ারা করে রাখে। বাউল গানের উচ্ছ্বাসে জমে উঠে এবারের ফোক ফেস্ট। লোকসংগীতের আবেদন কখনোই ফুরিয়ে যায় না। হাজার বছর পরও এসব গানের আবেদন বরং বেড়েই চলেছে। সব বয়সের মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয় এই ভাটি অঞ্চলের গান।
তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনের প্রথম দিন দর্শক মাতিয়েছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত বাউলশিল্পী শাহ আলম সরকার, ভারতের দালের মেহেন্দি ও জর্জিয়ার শেভেনেবুরেবি। এ ছাড়া নৃত্য পরিবেশন করেছেন প্রেমা ও ভাবনা নৃত্য দল।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নেন বাংলাদেশের মালেক কাওয়াল, ম্যাজিক বাউলিয়ানার কামরুজ্জামান রাব্বি ও শফিকুল ইসলাম। ‘আমি তো ভালা না ভালা লইয়াই থাইকো’ গানটি গেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হন শিল্পী কামরুজ্জামান রাব্বি। দ্বিতীয় দিনে আরও গেয়েছেন বাউল ও সুফি গানের শিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিন, কাজল দেওয়ান, অন্যতম আকর্ষণ ছিল পাকিস্তানের হিনা নাসরুল্লাহ ও মালির হাবিব কইটে অ্যান্ড বামাদা। লোক গানের উৎসবের শেষ দিনে সন্ধ্যা থেকেই সঙ্গীতপ্রেমীদের ঢল নামে আর্মি স্টেডিয়ামে। সন্ধ্যা থেকে জনসমাগম শুরু হতে থাকলেও রাত ১০টা পর্যন্ত বনানী থেকে বিমানবন্দর সড়কে প্রচুর ভিড় ছিল। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকতে বিশাল লাইন পড়ে যায়।
শেষ দিনে ছিল অন্যান্য দিনের মতোই দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় আর বাঁধভাঙা উল্লাস। শেষদিন দর্শক মাতিয়েছেন বাংলা লোকসংগীতের অনন্য নাম আব্দুল মালেক কাওয়াল, জনপ্রিয় লালন সংগীতশিল্পী চন্দনা মজুমদার, রাশিয়ার কারেলিয়া অঞ্চলের জনপ্রিয় ব্যান্ড সাত্তুমা এবং উপমহাদেশের বিখ্যাত সুফি ব্যান্ড পাকিস্তানের জুনুন।
ফোক ফেস্টের শেষ দিনের সর্বশেষ পরিবেশনার জন্য মঞ্চে ওঠে পাকিস্তানের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল জুনুন। জুনুনের সদস্যরা একে একে মঞ্চে উঠতেই চারিদিকে শুরু হয় তুমুল হর্ষধ্বনি। জুনুনের সঙ্গে এদিন মেতে ওঠে আর্মি স্টেডিয়ামে সমবেত হওয়া লক্ষাধিক সঙ্গীতপ্রেমী মানুষ। রাত ১২টায় সাঙ্গ হয় এ বছরের ফোক ফেস্টের আয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন