এম এ মতিন, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে
সংসারে টানাপড়েন আছেই। অচল শরীর আর অর্থ কষ্ট দুই রয়েছে আষ্টেপিষ্ঠে চেপে। অভাব খুব বেশিই তাড়া করে চলছে। ধারদেনা করে মনের জোরে ঝুঁকি নিয়ে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সবজি চাষ করে সাফল্য মিলছিল না। সবজি চাষে লোকসান অথবা সামান্য লাভ। এতে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। সন্তানদের লেখা পড়া তিন বেলা তিন মুঠো ভাত জোটাতেই কষ্টের শেষ নেই শারীরিক প্রতিবন্ধী আবুল হোসেনের। তবে সব কষ্ট আর অভাবকে দূরে ঠেলে সুখ আর সাফল্যের হাসি নিয়ে বাড়ির ওঠনে হাজির কলমি শাক। কয়েক বছরের ব্যর্থতাকে চেপে ধরে লাভের মুখ দেখালো সবুজ কলমি শাকে। অন্যের জমিতে হাজার টাকা খরচের কলমি শাকে লাখ টাকার বাণিজ্য হলো শারীরিক প্রতিবন্ধী আবুল হোসেনের। এ প্রতিবন্ধীর সাফল্য দেখে এলাকায় অন্য বেকার যুবকেরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। গাজীপুরের শ্রীপুরে এমনি প্রতিবন্ধী যুবক আবুল হোসেনকে পাওয়া গেল। উপজেলার মাওনা ইউনয়নের ৯নং ওর্য়াডের সর্ব পশ্চিমে বদনীভাঙ্গা গ্রামের ইসমাঈল হোসেনে বড় ছেলে সে। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও মনের জোরে কলমি শাক চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। চাষি আবুল হোসেন জানান, কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে তেমন সাফল্য পাওয়া যাচ্ছিল না। কয়েকবার সামান্য লাভ হলেও লোকসান হয়েছে অনেক। এরি মধ্যে পুঁজি কমে গেছে। তাই অন্যের এক বিঘা পতিত জমি সামান্য টাকায় ভাড়া নিয়ে কলমি শাক আবাদ শুরু করি। আবুল জানান, বৈশাখ মাসে কলমি শাকের বীজ বপন করার এক মাস পরেই বিক্রির উপযুক্ত হয়। পরে কয়েক দফা শাক বিক্রি করা হয়েছে। আবুল আরো জানান, শাক কেটে বিক্রির পনের থেকে বিশ দিনের মধ্যে আবার গাছের কাটা গোড়ালি থেকে নতুন শাক ছেড়ে চারা জন্ম নিয়ে শাক হয়। এভাবে অগ্রহায়ন মাস পর্যন্ত শাক কেটে বিক্রি করা যাবে। আবুল জানান, ছয় মুঠি করে (৭-৮ টাকা কেজি) এক পাল্লা ধরে সপ্তাহে তিন বার শাক কেটে বিক্রি করা হয়। প্রতিবার এক থেকে দেড় হাজার টাকার শাক আড়তে বিক্রি করা যায়। এতে সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার শাক বিক্রি করা হয়। এবার প্রায় দেড় লাখ টাকার কলমি শাক বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। আবুলের বাবা ইসমাঈল হোসেন জানান, জন্ম থেকেই আবুল শারীরিক প্রতিবন্ধী। অচল শরীর নিয়ে বেশি চলাফেরা করতে পারে না। তবে বসে বসে অনেক পরিশ্রম করতে পারে সে। শাক সবজির প্রতি ছোট বেলা থেকেই তার আগ্রহ বেশি। এক বিঘা ক্ষেত এক হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে আর শাক বীজ কামলা নিয়ে আরো হাজার দেড়েক টাকা খরচ হয়েছে তার। শাক বিক্রি হবে এক থেকে দেড় লাখ টাকা। প্রতিবেশী ওয়াসিম ফকির জানান, অর্থ কষ্ট থাকলেও সন্তানদের লেখাপাড়ায় অনেক বেশি সচেতন আবুল হোসেন। তার বড় ছেলে জাহিদুল ইসলাম লিখন এস এস সি তে ভাল রেজাল্ট করে কলেজে পড়ছে। ছোট মেয়ে লিজা স্থানীয় স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া লেখা করে। কলমি শাক চাষে তার সাফল্যে এলাকায় বেকার অনেকে এ কাজে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আবুলের স্ত্রী লতিফা বেগম জানান, কলমি শাক আমাদের অর্থ কষ্টকে দূর করেছে। এবার লাভের টাকায় দুটি হালের বলদ কিনব। অল্প কিছু জমিও কট (এগ্রিমেন) রাখব। সন্তানদের লেখা পড়ায়ও খরচ করব। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ এস এম মূয়ীদুল হাসান জানান, কলমি শাক একবার চাষ করে অনেক দিন একই কায়দায় এক চারা থেকেই ফসল পাওয়া যায়। আবুল হোসেন শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও সবজি চাষে লোকসানে সাহস না হারিয়ে সে কৃষিতে লেগে ছিল। কলমি শাক চাষে সাফল্য পেয়ে কৃষিতে তার আরো আগ্রহ বাড়ল। শরীরের চেয়ে মনের জোরে এগিয়ে গিয়ে সে যে সাফল্য পেয়েছে তাতে আমরাও খুশি। কৃষি কাজের পরামর্শসহ সকল সহযোগিতা তাকে দেবে কৃষি অফিস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন