‘অভিযোগ করলে তদন্ত করে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারবো’
কামরুজ্জামান টুটুল, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ভিক্ষুদের ভিক্ষার জমানো টাকা নিয়ে পালিয়েছে সরকার নিবন্ধিত একটি মাল্পিপারপাস। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মাল্টিপারপাসটির কর্ণধার (সভাপতি) ইসমাইল হোসেন পালিয়ে গেছেন। পরিকল্পিতভাবে পালানোর সময় সাথে নিয়ে গেছেন নিজের বড় ছেলেকে। এ দিকে গ্রাহকরা লাখ লাখ টাকা এই সমিতিতে জমা রেখে নিদারুণ অর্থ কষ্টে দিনাদিপাত করছে। অনুসন্ধানে এমনই বেশ কয়েকজন গ্রাকককে খুঁজে বের করা হয়েছে যারা যাকাত ফিতরা আর ভিক্ষা করা টাকা জমিয়েছিলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের বাকিলা বাজারের বেকারত্ব বহুমুখী সমবায় সমিতি নামের একটি সমবায় প্রতিষ্ঠানে। হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া গ্রামের স্বামী হারানো নারী আয়েশা বেগম(৪০)। ১৪ বছর আগে স্বামী জাহাঙ্গীর আলম মারা যান। ৩ মেয়ে ১ ছেলের মধ্যে ছেলে মানসিক রোগী। বড় মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন সুখ নেই। দুই মেয়ে মাথার উপর রয়েছে অবিবাহিত। দ্বিগুণ লাভের আশায় স্থায়ী আমানত ১০ হাজার টাকা জমা রাখেন ৪ বছর মেয়াদে আর মাসিক সঞ্চয় করা টাকা জমা রয়েছে ৫ হাজার টাকা। যার মেয়াদ শেষ হবার কথা আসছে বছর। কান্না জড়িত কণ্ঠে আয়েশা বেগম বলেন, মেঘ হলে ঘরে পানি পড়ে, পানি পড়লে ঘরের বিভিন্ন স্থানে পাতিল বাটি আর থালা পেতে রাখতে হয়, দুইটা মেয়ে কিভাবে বিয়ে দিবো সেই চিন্তা মাথায় রেখে ফিতরা আর জগাতের টাকা মিলিয়ে সমিতিতে ১০ হাজার টাকা রেখেছি। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দৈনিক যা পাই তা থেকে জমিয়ে ৫শ’ টাকা করে মাসিক সঞ্চয় করেছিলাম এখন স্থায়ী আর সঞ্চয়ের টাকা সবই নিয়ে ভেগেছে তারা আল্লাহর গজব পড়বে তার উপর। একই গ্রামের মুন্সী গাজী বাড়ির মৃত গোলাম হোসেনের স্ত্রী শেফালী বেগম (৩৫) ইনকিলাবকে জানান, বিভিন্ন মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করি। কাজ না থাকলে বিভিন্ন বাড়িতে ভিক্ষা করি। ঈদে ফিতরা জাকাত নিয়ে ছোট ছোট তিন ছেলে আর ২ মেয়ে নিয়ে বেঁচে আছি। একটি মেয়ে গার্মেন্টে চলে গেছে। আরেকটা মেয়ে চাঁদপুর শহরে একজনের বাসায় কাজ করতে দিয়েছি। এতো কষ্ট করে ২টাকা ৫ টাকা করে করে টাকা জমিয়ে বাকিলা বাজারের ঐ সমিতিতে জমা দিয়েছিলাম। গত জানুয়ারি পর্যন্ত আমার ৩১ হাজার টাকা জমা হয়েছিলো আসছে বছর মেয়াদ পূর্ণ হবার কথা ছিল। ভেবেছিলাম টাকা উঠিয়ে ঘরের কাজ করবো বা মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে দেবো এখন আমার সবই গেল। ফুলছোঁয়া গ্রামের মুন্সী বাড়ির পাশের বাড়ির মৃত সামছল হকের স্ত্রী খুরশিদা বেগম। বাকিলা বেকারত্ব দূরীকরণ সমিতিতে ৪০ হাজার টাকা পাওয়ার আশায় ৩ বছর আগে স্থায়ী আমানত হিসেবে ২০ হাজার টাকা জমা রখেছিলেন। যা আসছে বছর একত্রে ৪০ হাজার টাকা পেলে ঘরের কাজ করবেন বড় আশা মনে ছিল। আবার বিভিন্নজন থেকে পাওয়া সহযোগিতা ফিতরা জাকাতের টাকা মিলিয়ে প্রতিমাসে একই সমিতিতে মাসে ৫শ’ টাকা করে মাসিক সঞ্চয় জমিয়েছিলেন যার পরিমাণ প্রায় ৪৩ হাজার টাকার মতো হয়েছিল বলেই কাপড়ের আঁচলে চোখের পানি মুছলেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেকারত্ব দূরীকরণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড ইসলামী জনকল্যাণ ও দারিদ্র্য বিমোচোন প্রকল্প নিয়ে ২০০৯ সালে সমিতিটি নিবন্ধন নেয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে। যার গভঃ রেজিস্ট্র্রেশান নং-০৮/চাঁদ/০৯। যার প্রধান কার্যালয় ফকির বাজার সড়ক, বাকিলা বাজার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর। হঠাৎ করে চলিত বছরের শুরুর দিকে সমিতির সভাপতি নিজে সকল কাগজপত্র সমিতির অন্য কর্মকর্তার কাছ থেকে বুঝে নিয়ে তিনি নিজেই অফিসে তালা মেরে চাবি নিয়ে নিরুদ্দেশ হন। তবে একাধিক বিশ^স্থ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে তিনি ঢাকা ভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য কাজ করছেন। আবার বেকারত্ব দূরীকরণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতির স্ত্রী বিউটি বেগম সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন। আবার স্ত্রী‘র ভাই নাজির আহম্মেদ ঢালী রয়েছেন সহ-সভাপতি পদে। ঠিক এ বিষয়টি অনেকে আক্ষেপ করে বলেন সরকার নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হবার পরেও কি করে পরিবার কেন্দ্রিক সমিতি হতে পারে বা একবারের জন্য কি এতো অনিয়ম অডিটে ধরা পড়েনি নাকি ঈসমাইলের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সমাজসেবার কতিপয় কর্মকর্তারা জানতো! এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আলো রানী সরকার ইনকিলাবকে বলেন, বেকারত্ব দূরীকরণ সমিতিটি পালিয়েছে বলে আমরা অবগত আছি। অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে সরকারের আইন রয়েছে সেই মোতাবেক ঐ সকল গরীব লোকজন জেলা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলে আমরা তদন্ত করে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারবো বলে আশা রাখি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন