মোহাম্মদ আবদুল গফুর
আজ তেইশে জুন। আজ থেকে ২৫৯ বছর আগে ১৭৫৭ সালে পলাশীর ময়দানে বাংলার শেষ স্বাধীন নওয়াব সিরাজউদ্দৌলাকে এক যুদ্ধ প্রহসনের মাধ্যমে পরাজিত করে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপার থেকে আসা ইংরেজরা এদেশে তাদের রাজত্ব কায়েম করে বসে। পলাশীর বিপর্যয়ের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা সূর্য অস্ত যায়, এটা আমরা সবাই জানি। তবে কোন ঐতিহাসিক পটভূমিতে কী কী কারণে এটা সম্ভব হয় তা আমরা অনেকেই জানি না।
পলাশী বিপর্যয় বিশ্ব ইতিহাসের কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। পলাশী ট্র্যাজেডি ছিল পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী ও এদেশীয় ব্রাহ্মণবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সুপরিকল্পিত আঁতাতের ফসল। পলাশী বিপর্যয়ের মুখে সক্রিয় ছিল পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের মুসলিমবিরোধী ক্রুসেডীয় চেতনার ধারাবাহিকতা। ইতিহাস গবেষকদের জানা থাকার কথা ১০৯৫ থেকে ১২৭১ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় খ্রিস্টানরা মুসলমানদের হাত থেকে ফিলিস্তিন দখল করে নেবার লক্ষ্যে যে যুদ্ধাভিযান চালায় ইতিহাসে সেটাই ক্রুসেড নামে খ্যাত হয়ে আছে। পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের মুসলিমবিরোধী ক্রুসেডীয় চেতনার ধারাবাহিকতায়ই ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে পলাশী ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করে ইংরেজরা।
এই ষড়যন্ত্রে নবাব দরবারের আমলাদের সহযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রথমেই ইংরেজরা নবাব দরবারের জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ প্রমুখ হিন্দু অমাত্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ক্লাইভের সঙ্গে এসব অমাত্য এ বিষয়ে একমত হন যে সা¤্রাজ্যবাদবিরোধী নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সরিয়ে কোন মুসলমান অমাত্যকে সিংহাসনে বসাতে হবে, নইলে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে। সে হিসাবে তাদের মত ছিল মেরুদ-হীন ক্ষমতালোভী অমাত্য ইয়ার লুৎফে খানকে পরবর্তী নবাব করা। কিন্তু সুচতুর ক্লাইভ তাদের বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হন যে,সিরাজের বদলে শুধু একজন মুসলমানকে নবাব করলেই চলবে না। নবাবের আত্মীয়দের কাউকে পরবর্তী নবাব করতে হবে, যাতে বাইরের লোকেরা মনে করতে পারে এটা নবাব পরিবারের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ব্যাপার।
সেই নিরিখেই আসে নবাবের আত্মীয় সিপাহশালার মীর জাফর আলী খানের নাম। মীর জাফর আলী খান তো এ প্রস্তাবে মহাখুশী। এতদিনে তার জীবনের এক স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে দেখে ইংরেজরা যা বলবে সে অনুসারে কাজ করে যেতে রাজি হয়ে গেলেন। অবশ্য পরবর্তীতে মীর জাফর বুঝতে পারেন, দৃশ্যত তাকে নবাব করা হলেও মূল ক্ষমতা চলে গেছে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও তাদের সঙ্গে আঁতাতকারী হিন্দু অমাত্যদের হাতে। তিনি নবাবী ফলাতে গিয়ে সিংহাসনই হারিয়ে বসেন। তাকে সরিয়ে নবাব করা হয় তার জামাতা মীর কাসেমকে। মীর কাসেম অবশ্য ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া। ফলে তিনি অচিরেই ইংরেজদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ে সিংহাসন হারান। এর পর পুনরায় মীর জাফরের কপাল খুলে যায়। লজ্জায় মাথা খেয়ে তিনি শিখ-ি নবাব হন ইংরেজদের অধীনতা স্বীকার করে নিয়ে।
এবার পলাশী বিপর্যয়ের পেছনে এদেশীয় সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ভূমিকার কথা। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় উপমহাদেশের শত শত বছরের মুসলিম শাসনামলে এদেশে কখনও সাম্প্রদায়িকতার প্রাদুর্ভাব ঘটেনি। মুসলমান রাজা-বাদশাহদের শাসনামলে, এমন কি আওরঙ্গজেবের দরবারেও একাধিক হিন্দু অমাত্য ছিলেন। নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাহর দরবারেও জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ প্রমুখ হিন্দু অমাত্যগণ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এদেশের ইতিহাসে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প প্রথম সুপরিকল্পিতভাবে উস্কে দেয় মুসলিমবিরোধী ক্রুসেডীয় চেতনার উত্তরাধিকারী বৃটিশ সা¤্রাজ্যবাদী অপশক্তি। তারা নবাব সিরাজউদ্দৌলার দরবারের জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ প্রমুখ হিন্দু অমাত্যদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগের পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতের মুসলিমবিরোধী মারাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ভারতে মুসলিম শাসনের উৎখাত ঘটাতে তাদের প্ররোচনা যোগায়।
পলাশীর মাধ্যমে এদেশের শাসন ক্ষমতা কব্জা করে নেয়ার পর নব্য ইংরেজ শাসকদের অন্যতম নীতিই হয়ে দাঁড়ায় প্রশাসন, প্রতিরক্ষা, জমিদারি, আয়মাদারী, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রভৃতি সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হতে বেছে বেছে মুসলমানদের উৎখাত করে সেসব স্থানে ইংরেজ -অনুগত হিন্দুদের বসানো। পলাশী বিপর্যয়ের মাত্র ৩৭ বছরের মধ্যেই এদেশের পূর্বতন ভূমিব্যবস্থা বদলিয়ে ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত (পারমানেন্ট সেটেলমেন্ট) নামে নতুন ভূমিব্যবস্থার মাধ্যমে যে নব্য ইংরেজ -অনুগত জমিদার গোষ্ঠী সৃষ্টি করা হয়, তার সিংহভাগই ছিল হিন্দু। ইংরেজ আমলে এ ধরনের মুসলিমবিরোধী সাম্প্রদায়িক নীতি চালিয়ে যাবার ফলে এককালের স্বচ্ছল মুসলমানরা অচিরেই একটি অসহায় নি:স্বজনগোষ্ঠীতে পরিণত হলো।
মুসলমানরাও অবশ্য বিদেশী ইংরেজদের শাসন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করতে তারা বিভিন্নভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে লাগলেন। মজনু শাহের নেতৃত্বাধীন ফকীর আন্দোলন, মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার সংগ্রাম, হাজী শরীয়তউল্লাহ ও দুদু মিয়ার ফারায়েজী আন্দোলন, রংপুরের নূরুলদীন, সন্দ্বীপের আবু তোরাব, লক্ষ্মীপুরের নওয়াব আলী, ত্রিপুরার শমসের গাজী প্রমুখ কৃষক নেতার আন্দোলন, মহিশূরের হায়দার আলী, টিপু সুলতানের স্বাধীনতা সংগ্রাম, সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর জেহাদ আন্দোলন, সর্বোপরি ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের মাধ্যমে তারা স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে একের পর এক সংগ্রাম চালিয়ে যান। কিন্তু এ সব আন্দোলনই ব্যর্থ হয় বৃহৎ প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের অসহযোগিতার কারণে।
সর্বশেষে সিপাহী বিদ্রোহও ব্যর্থ হওয়ায় হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। সাহিত্য স¤্রাট বঙ্কিমচন্দ্র ‘সংবাদ ভাস্করের’ লিখলেন, ‘পাঠক সকল জয় জয় বলিয়া নৃত্য কর, হিন্দু প্রজাসকল দেবালয়ে পূজা দেও। আমাদের রাজ্যেশ্বর শত্রুজয়ী হইলেন।’
আর কবি ঈশ্বর গুপ্ত লিখলেন ঃ
‘চিরকাল হয় যেন বৃটিশের জয়।
বৃটিশের রাজলক্ষ্মী স্থির যেন রয় ॥
এমন সুখের রাজ্য আর নাহি হয়।
শাস্ত্রমতে এই রাজ্য রামরাজ্য কয় ॥’
সিপাহী বিদ্রোহও পর্যুদস্ত হওয়ায় মুসলমানদের উপর বৃটিশ সরকারের নির্যাতনের স্টীমরোলার নতুন করে নেমে আসে। এই পরিস্থিতিতে উত্তর ভারতের স্যার সৈয়দ আহমদ খান, বাংলার নবাব আবদুল লতিফ প্রমুখ তদানীন্তন মুসলিম নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের ধ্বংসের হাত হতে রক্ষার লক্ষ্যে সাময়িকভাবে হলেও সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ও উন্নত করে তোলার প্রয়াস পান। এই সহযোগিতার আভাস পেয়ে ইংরেজ সরকারের প্রশ্রয় পুষ্ট খৃস্টান মিশনারীরা ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে নেমে পড়লে এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠেন যশোরের এক গ্রাম্য দর্জি, ইতিহাসে যিনি খ্যাত হয়ে আছেন মুন্সী মেহেরুল্লাহ নামে।
সহযোগিতা যুগের শেষ নেতা নবাব সলিমুল্লাহর আমলে ১৯০৫ সালে প্রধানত প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে ইংরেজ সরকার বাংলা- বিহার- উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত তদানীন্তন বৃহৎ বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিকে বিভক্ত করে ঢাকা রাজধানীসহ ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ নামের একটি নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করলে দীর্ঘ অবহেলিত পূর্ববঙ্গের উন্নয়নে কিঞ্চিৎ সুযোগ হবে বিবেচনায় এর প্রতি সমর্থন জানান সলিমুল্লাহ। বঙ্গভঙ্গ হলে পূর্ববঙ্গে অবস্থিত জমিদারিতে তাদের প্রভাব হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কায় কলকাতা প্রবাসী হিন্দু জমিদাররা এর বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন সৃষ্টি করে বসেন। যে হিন্দু নেতৃবৃন্দ সব সময় ইংরেজ শাসকদের প্রতি সমর্থন দিয়ে এসেছেন তাদের এই আকস্মিক রুদ্ধমূর্তিতে ভয় পেয়ে ইংরেজ সরকার ছয় বছরের মাথায়ই ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করে তাদের পুরনো মিত্রশক্তিকে খুশী করেন।
বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হন নবাব সলিমুল্লাহ। তার ক্ষোভ প্রশমনের লক্ষ্যে সরকার সলিমুল্লাহর অন্যতম দাবী ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে। এতেও কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের আপত্তি। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তাদের যুক্তি ছিল বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে নাকি বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদের মত পাপ হবে। এবার তাদের যুক্তি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নাকি বঙ্গসংস্কৃতি বিভক্ত হবে। তবে তাদের আরেক যুক্তিতে থলের আসল বিড়াল বেরিয়ে পড়লো। বলা হলো, পূর্ববঙ্গের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান চাষাভূষা তাই তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ তারা অশিক্ষিত চাষাভূষা আছে তাই থাক। তাদের শিক্ষা বা উচ্চশিক্ষার কোন প্রয়োজন নেই।
হিন্দুদের বিরোধিতার কারণে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ১০ বছর পিছিয়ে যায়। এর মধ্যে এক বুক ব্যথা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা সলিমুল্লাহ ১৯১৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তার দুই সহযোগী নওয়াব আলী চৌধুরী ও একে ফজলুল হকের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় ১৯২১ সালে এর যাত্রা শুরু করে। তবে এরপরও পূর্ববঙ্গের সকল স্কুল-কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন থাকে। এ সীমাবদ্ধতা থেকে পূর্ববঙ্গের স্কুল-কলেজ মুক্তিলাভ করে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
বাংলার মুসলমানদের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার বিরুদ্ধে সকল হিন্দু নেতাই যে একাট্টা ছিলেন তা নয়। ব্যতিক্রমী নেতাদের অন্যতম ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। তিনি বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯২৩ সালে একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ মুসলিম নেতাদের সঙ্গে ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ নামে এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন যার মাধ্যমে মুসলমানদের জনসংখ্যানুপাতিক ভিত্তিতে সরকারি চাকরির নিশ্চয়তার চেষ্টা করা হয়। এর বিরুদ্ধে ও কংগ্রেসের সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাদের এই অন্যায় মনোভাবের ব্যাপারে দেশবন্ধু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গিয়েও ব্যর্থ হন। এই অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করলে বেঙ্গল প্যাক্টের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে পড়ে। কৃষ্ণনগর কংগ্রেসে এই প্যাক্ট বাতিল ঘোষিত হলে ঘড়ির কাঁটা পেছনের দিকে চালানোর অপচেষ্টা চালানো হলে দেশ বিভাগ অনিবার্য হয়ে পড়ে।
১৯৪০ সালে এই করুন বাস্তবতার পটভূমিতেই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি স্বরূপ ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে। ১৯৪৬ সালে বৃটিশ শাসিত ভারতবর্ষে যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তার প্রধান ইস্যুই ছিল ভারতবর্ষ একটি অখ- রাষ্ট্র হিসাবে স্বাধীনতা লাভ করবে না, পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাসমূহে একাধিক স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে। নির্বাচনে শেষোক্ত অবস্থানের প্রতিই সংশ্লিষ্টদের সমর্থন প্রমাণিত হওয়াতে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চল হিসাবে আমরা প্রথম স্বাধীনতা লাভ করি। পরে ২৪ বছর ধরে ভাষা আন্দোলনসহ নানা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ও সর্বশেষে ১৯৭১ সালের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের পূর্ণ বাস্তবায়ন হিসাবে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়।
এখানে একটা ঘটনা বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের প্রাক্কালে একটা সুযোগ এসেছিল উপমহাদেশের সকল বাংলাভাষী এলাকা নিয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। এ প্রস্তাবের উদ্যোক্তা ছিলেন মুসলিম লীগের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম এবং কংগ্রেসের শরৎচন্দ্র বসু প্রমুখ নেতা। কিন্তু ১৯০৫ সালে যারা বঙ্গভঙ্গকে বাংলা মায়ের অঙ্গচ্ছেদের মত পাপ হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন তাদের উত্তরসূরিরাই এবার বাংলা মায়ের অঙ্গচ্ছেদের লক্ষ্যে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাদের অন্যতম নেতা ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী এমনও ঘোষণা করেন, ভারত ভাগ না হলেও বাংলা ভাগ হতেই হবে। নইলে নাকি বাঙালি হিন্দুরা চিরতরে বাঙালি মুসলমানদের গোলাম হয়ে পড়বে! অর্থাৎ বাঙালি মুসলমানদের চেয়েও অবাঙালি হিন্দুদের গোলামি করতে তাদের এই উন্মাদ হয়ে উঠার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় তাদের কাছে বাংলা প্রীতির চাইতেও মুসলিম বিদ্বেষ অনেক বেশি মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। এটা আর যাই হোক তাদের অসাম্প্রদায়িকতার প্রমাণ বহন করে না।
ইতিহাসে পলাশীর শিক্ষা এখানে যে পলাশী ছিল পশ্চিম সা¤্রাজ্যবাদের ক্রুসেডীয় চেতনার ধারাবাহিকতায় সা¤্রাজ্যবাদী ও এদেশীয় সাম্প্রদায়িক অপশক্তির আঁতাতের ফসল। সা¤্রাজ্যবাদের ঐ ক্রুসেডীয় চেতনা এখনও মুসলিম উম্মার বিরুদ্ধে সক্রিয়। তার রক্তাক্ত প্রমাণ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাজুড়ে দৃশ্যমান। সা¤্রাজ্যবাদের এ অপকর্মের স্বাভাবিক সহযোগী দক্ষিণ এশীয় আধিপত্যবাদ, যার শিকার বাংলাদেশও। সুতরাং সাধু সাবধান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন