যাত্রীদের নিরাপদ বাহন ট্রেন। সারাদেশে দুই হাজার ৯২৯ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে মানসম্পন্ন রেললাইন মাত্র ৭৩৯ কিলোমিটার। গণ ১০ বছরে এক হাজার ৯৬১টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর এতে নিহত হয়েছেন ২৬৩ জন। অধিকাংশ দুর্ঘটনাই ঘটেছে লেভেল ক্রসিংগুলোতে। স¤প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর উদ্বেগের মধ্যে দেশের মানুষ।
এমন সময় লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা রোধে সুখবর দিলেন নাটোরের সিংড়া পৌরসভার গোডাউনপাড়া এলাকার মৃত রওশন আলীর ছেলে মনোয়ার হোসেন মিঠু।
তিনিপল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বগুড়া কার্যালয়ে মিটার রিডার হিসেবে কর্মরত। কাজের অবসরে দুর্ঘটনা প্রতিরোধের আগাম সিগন্যাল আবিস্কারে কাজ করেন বলে তিনি জানান। অটোসিগন্যাল ট্রান্সমিটার নামে একটি যন্ত্র। তার দাবি যন্ত্রটি লেভেলক্রসিংয়ের ব্যরিয়ার (বার) স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওঠা-নামা করবে।
এ যন্ত্রটি কীভাবে কাজ করবে জানতে চাইলে? মিঠু বলেন, যন্ত্রটি ট্রেনের সঙ্গে লাগানো থাকবে। এটি লেভেল ক্রসিংয়ের বারের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকবে। ক্রসিংয়ে ট্রেন পৌঁছানোর পাঁচ-সাত মিনিট আগেই যন্ত্রটির সংকেত পেয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ক্রসিংয়ের বারটি নেমে যাবে। ট্রেন চলে যাওয়ার পর সেটি আবার উঠে যাবে। এক্ষেত্রে মানুষের কোনো সাহায্য লাগবে না। ফলে লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে। যন্ত্রটি ব্যবহারে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। মনোয়ার জানান, রেলের জন্য এ প্রযুক্তি আবিস্কারের পাশাপাশি মহাসড়কের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতেও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। এ গবেষক বলেন, সারাদেশে যেসব রেল দুর্ঘটনা ঘটছে তার বেশিরভাগই ঘটছে লেভেলক্রসিংগুলোতে। অনেক স্থানে নেই গেটম্যান। ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে তথ্য আদান-প্রদানসহ ট্রান্সমিটার আবিস্কারে তিনি ১০ বছর ধরে গবেষণা করে যাচ্ছেন। মনোয়ার জানান, চলতি বছর ৭জুলাই তার গবেষণার বিষয়ে যাচাইয়ে রাজশাহী রেল কর্তৃপক্ষের সাবেক ডিজিএম হারুন অর-রশিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। তারা তার প্রযুক্তি দেখে প্রশংসা করেছেন। এর আগে তিনি রেল লাইনের সিøপার তুলে ফেলা ও লাইনচ্যুতির কারণে ট্রেন দুর্ঘটনা রোধেও ট্রান্সমিটার আবিস্কার করেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবনুযায়ী গত ১০বছরে সড়ক-রেল-নৌপথ ও আকাশপথে ৬ হাজার ৪৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭ হাজার ৭৯৬ জন। একই সঙ্গে এ দুর্ঘটনায় আরও ১৫ হাজার ৯৮০ জন আহত হয়েছেন। এদিকে ডবিøউবিবি ট্রাস্টের গবেষণা অনুযায়ী ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত রেলওয়েতে এক হাজার ৮টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১১৫ জন। পত্রিকার হিসাবনুযায়ী গত ১০ বছরে নিহত হয়েছেন ২৬৩জন।
নাটোর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার অশোক চক্রবর্তী বলেন, কয়েক মাস আগে বিষয়টি লোকমুখে জানার পর মনোয়ার হোসেন মিঠুর সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং তাকে রাজশাহীতে রেলের পশ্চিমাঞ্চল অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিই।
রাজশাহীতে পশ্চিমাঞ্চল রেলের বর্তমান জিএম মিহির কান্ত গুহ বলেন, রেলের কোনো কিছু আবিস্কারের বিষয়ে কিছুই জানি না। নাটোরের জেলা প্রশাসক মোহম্মদ শাহরিয়াজ বলেন, মিঠুর উদ্ভাবিত প্রযুক্তির কার্যকারিতা দেখতে হবে। বর্তমান সিস্টেমের তুলনায় উন্নত ও টেকসই হলে এক্ষেত্রে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।
রেলওয়ে সচিব মোফাজ্জল হোসেন বলেন, মিঠু তার আবিস্কৃত প্রযুক্তির বিষয়ে কথা বলেছে। একবার দেখাও করে গেছে। তার প্রযুক্তি কাজ করে কি-না তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য পশ্চিমাঞ্চল রেলের সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন বিভাগে গিয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি পাইলটিং করারও পরামর্শ দিয়েছি। তিনি জানান, বর্তমান সিস্টেমের তুলনায় উন্নত প্রযুক্তি এবং টেকসইয়ের নিশ্চয়তা পেলে রেল তা গ্রহণ করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন