ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ও সৈয়দপুর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পাড়ে সিসি ব্লক স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। নদীর পাড়ে ব্লক স্থাপন করায় স্থানীয় মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বিগত কয়েক বছরে মেঘনার প্রবল ভাঙনের মুখে উপজেলার দুুটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে কয়েকশ’ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়। হুমকির মুখে পড়ে উপজেলার প্রায় দেড় লাখ বাসিন্দা। ভাঙন আতঙ্কে বহু মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৬-২০১৭ সাল থেকে দৌলতখানে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১.৩ কি.মি. এলাকায় সিসি ব্লক স্থাপন, জিওব্যাগসহ জরুরি ও আপদকালীন কাজ শুরু করে। দৌলতখান-বোরহানউদ্দিনে মেঘনার তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় সিসি বøক স্থাপনের ফলে ভবানীপুর ও সৈয়দপুর ইউনিয়নের যেসব মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছিলেন তারা বসত ভিটার নিশ্চয়তা পেয়ে নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
সরেজমিনে ইউনিয়ন দুুটি ঘুরে জানা যায়, গত কয়েক বছরে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনের মুখে সৈয়দপুর ও ভবানীপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তলিয়ে যায় কয়েক শ’ একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে কয়েকশ’ পরিবার। দুটি মাধ্যমিক ও কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ও বহু স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সিসি ব্লক স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হলে মেঘনার ভাঙন থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
সৈয়দপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত প্রথমিক শিক্ষক সাফিজল ইসলাম জানান, মেঘনার প্রবল ভাঙনের ফলে তাঁর ২ একর জমির বাড়িটি হুমকির মুখে পড়ে। দিশেহারা হয়ে পরিবার নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেই। ব্লক স্থাপনের ফলে বসতভিটাসহ বাড়িটি রক্ষা পায়। এখন ওই বসতভিটায় নতুন ঘর নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে স্বস্তিতে বসবাস করছি।
ভবানীপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম নবী নবু বলেন, মেঘনার তীব্র ভাঙনে এলাকার অনেক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছিলেন। যারা বেড়িবাঁধে বসবাস করছিলো তাদের মধ্যে সবসময় ভাঙন আতঙ্ক ছিলো। এখন সিসি বøক স্থাপন করায় মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তিনি আরো বলেন। ভোলা-২ আসনের এমপি আলহাজ আলী আজম মুকুলের নিরলস প্রচেষ্ঠায় ইউনিয়নের মানুষ নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে।
সৈয়দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ভুট্টু তালুকদার জানান, বøক স্থপনের কাজ শুরু হওয়ার ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে এখন ভাঙন আতঙ্ক নেই। যারা নিরাপদ স্থানে তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা এখন আগের স্থানে ঘর নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাবস করছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ আলী আজম মুকুল ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যখনই রাষ্ট্র পরিচালনার দ্বায়িত্ব গ্রহণ করে তখনই অবহেলিত এলাকার উন্নয়ন হয়। দৌলতখান-বোরহানউদ্দিনের মানুষের প্রাণের দাবি ছিল মেঘনার ভাঙন রোধ করা। সাড়ে ৫শ’ কোটি ব্যায়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পোল্ডার ৫৬/৫৭ রক্ষার প্রকল্পের মাধ্যমে ভাঙন কবলিত দু’টি উপজেলার সাড়ে ৯ কিলোমিটার নদীর তীর এলাকা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়া এ দু’টি উপজেলার নদী তীর নিয়ন্ত্রণে আরো ১১শ’ কোটি টাকার ২টি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মানুষের বিনোদনের জন্য দৌলতখানে মেঘনার তীরে ইকো পার্ক নির্মাণ করা হবে। জেলা পরিষদের তত্বাবধানে ইতোমধ্যে জরিপ শুরু হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন