তানোর (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা : রাজশাহীর তানোরের বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ আলুক্ষেতে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। পচন রোগে আলুগাছ মরে যাচ্ছে এতে ফলনহানির আশঙ্কায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অথচ কৃষি বিভাগ নির্বিকার রয়েছে। কৃষকদের সচেতন করতে তাদের দৃশ্যমান তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। আবার অনুমান নির্ভর হয়ে কৃষকরা বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহার করেও ফসল রক্ষা করতে পারছে না। সরেজমিন তানোরের তালন্দ ইউপির কালনা গ্রামের আলুখেতে দেখা গেছে, অধিকাংশ আলুখেতে পচন রোগে আক্রান্ত হয়ে আলুগাছ পচে (মরে) যাচ্ছে। কৃষকরা অনুমান নির্ভর হয়ে উচ্চ দামে বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহার করে আলুগাছ রক্ষা করতে পারছে না। স্থানীয় আলুচাষিরা জানান, সম্প্রতি গত কয়েকদিনের শৈত প্রবাহ, মেঘলা আকাশ ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারণে আলুগাছে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে জমি ইজারা নিয়ে আলুচাষে প্রতি বিঘায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা ও নিজস্ব জমিতে প্রতি বিঘায় প্রায় ২৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, তানোরে চলমি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলুচাষ করা হয়েছে। এদিকে তানোরের আমান কোল্ড স্টোরেজের বীজ আলু রোপণ করে প্রায় পাঁচ হাজার কৃষক সর্বস্বান্ত হয়েছে। আমান কোল্ড স্টোরের বীজ আলু দিয়ে রোপণ করা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর আলুখেত সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব কৃষকরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি দিয়েছেন কিন্তু এখনো কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। তানোরের তালন্দ ইউপির কালনা দক্ষিণপাড়া গ্রামের কৃষক রইস উদ্দীন (৫৫) বলেন, এবার তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে আলুচাষ করেছেন। পচন রোগে ইতিমধ্যে তার আলুখেতের সিংহভাগ গাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। একই এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলাম (৩৮) বলেন, পচন রোগে আক্রান্ত তার আলুখেতে তিনি বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহার করেছেন, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের (উপসহকারী কর্মকর্তা) মাঠকর্মীদের নাগাল পাচ্ছেন না কৃষকরা, ফলে তারা বাধ্য হয়ে অনুমান নির্ভর কীটনাশক ব্যবহার করছেন। এতে কীটনাশক ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও কপাল পুড়ছে কৃষকের। তানোরের তালন্দ ইউপির আড়াদিঘী মাঠের বিস্তীর্ণ আলুখেতে দেখা দিয়েছে পচন রোগ। তানোরের সরঞ্জাই ইউপির সরণজাই মাঠে ১২ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন কৃষক সাজ্জাদ হোসেন, প্রায় ৬ বিঘা জমিতে মুকলেসুর রহমান ও প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে আলুচাষ করেছেন কৃষক আব্দুল খালেক। তারা বলেন, তাদের মাঠে প্রায় দুইশ’ বিঘা জমির আলুগাছে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, তার জানা মতে কোথাও আলুগাছে পচন রোগ ধরেনি আলুর গাছ ভালো অবস্থায় আছে, আলুগাছে পচন রোগ দেখা দিলে কৃষকরা যদি তাদের কাছে পরামর্শ নিতে না আসেন তাহলে তো তাদের করণীয় কিছু নাই। তিনি বলেন, তার জানা মতে এখনো তানোরের কোথাও আলুগাছে পচন রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনো খবর তার কাছে নাই।
মন্তব্য করুন