দেশের সকল নাগরিকদের টেকসই ডিজিটাল জাতীয় পরিচয়পত্রের সুবিধা দিতে শুরু হয়েছে স্মার্টকার্ড বিতরণ কর্মসূচী। স্মার্টকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে ব্যক্তির চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি এবং দশ আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে। যা নিরাপত্তার দিকটি সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে বজায় রাখবে বলে বলছেন এর বিশেষজ্ঞরা। অনেকের মনে প্রশ্ন এই স্মার্টকার্ড কী, কেন, তা কি ভাবেই বা সংগ্রহ করতে হবে।
স্মার্টকার্ড কি?
জাতীয় পরিচয়পত্রের ডিজিটাল সংস্করণকেই বলা হয় স্মার্টকার্ড। স্মার্টকার্ডে দেশের নগরিকদের ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। এই কার্ডের মাধ্যমে নাগরিক সম্পর্কে জানা যাবে। স্মার্টকার্ডে নিরাপত্তামূলক নানা সুবিধা থাকার কারণে তা সহজেই নকল করা যাবে না। ব্যক্তিগত নানা সেবা নেয়া যাবে এই স্মার্টকার্ডের সাহায্যে।
যেসব তথ্য থাকবে এই কার্ডে
স্মার্টকার্ডে প্রত্যেক নাগরিকের বিস্তারিত তথ্য থাকবে। এগুলো হলো ব্যক্তির নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, পেশা, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, জন্মতারিখ, রক্তের গ্রুপ, জন্ম নিবন্ধন সনদ, লিঙ্গ, জন্মস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দৃশ্যমান শনাক্তকরণ চিহ্ন, ধর্ম। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্মার্টকার্ডে থাকবে ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের মণির ছবি।
এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট নম্বর, আয়কর সনদ নম্বর, টেলিফোন ও মোবাইল নম্বর, মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, স্বামী বা স্ত্রীর নাম ও পরিচয়পত্র নম্বর (থাকলে) এবং মা-বাবা, স্বামী বা স্ত্রী মৃত হলে সে-সংক্রান্ত তথ্য, অসামর্থ্য বা প্রতিবন্ধী হলে সেই তথ্যও উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আগের জাতীয় পরিচয় পত্রে বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে পিতার নাম ব্যবহারের সুবিধা ছিলো না। এবার তা যুক্ত করা হয়েছে। নারীরা স্বামীর নামের পরিবর্তে চাইলে বাবার নাম যুক্তের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
স্মার্টকার্ড যে কাজে লাগবে
জাতীয় পরিচয়পত্র যে কাজ লাগতো সেই কাজগুলো করা যাবে স্মার্টকার্ডে। মূলত ২২ ধরনের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র কাজে লাগবে। স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স করা ও নবায়ন, ট্রেড লাইসেন্স করা, পাসপোর্ট করা ও নবায়ন, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, চাকরির আবেদন, বিমা স্কিমে অংশগ্রহণ, স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক হিসাব খোলা, নির্বাচনে ভোটার শনাক্তকরণ, শেয়ার আবেদন ও বিও হিসাব খোলাসহ আরও নানা কাজে লাগবে।
যেভাবে পাওয়া যাবে র্স্মাটকার্ড
স্মার্টকার্ড পেতে নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী সশরীরে নির্দিষ্ট বিতরণ কেন্দ্রে আসতে হবে। সঙ্গে অবশ্যই মূল জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসতে হবে। যারা ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি তাদের মূল নিবন্ধন স্লিপ নিয়ে আসতে হবে।
তবে যে যাদের মূল জাতীয় পরিচয়পত্র বা নিবন্ধন স্লিপ হারিয়ে গেছে তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করে, জিডির মূল কপি নিয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় অথবা থানা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
কোথায় আপনার স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে সে সম্পর্কে তথ্য জানতে প্রথমে যেতে হবে এ লিংকটিতে: nidw.gov.bd/। তারপর সেখানে বাম পাশে থাকা সাইডবারে ‘স্মার্ট জাতীয় বিতরণ তথ্য’ তে ক্লিক করতে হবে। তাহলে নতুন একটি পেইজ চালু হবে। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্রের আইডি কার্ডের নম্বর অথবা যারা জাতীয় পরিচয়পত্র পায়নি কিন্তু স্লিপ পেয়েছেন তারা স্লিপে দেয়া নম্বর, জন্মতারিখ ও নিরাপত্তামূলক নম্বর দিয়ে সাবমিটে ক্লিক করতে হবে । তারপর আপনার স্মার্টকার্ড কোথা থেকে সংরক্ষণ করবেন তা জানা যাবে।
যাদের কাছে ওয়েবসাইটে গিয়ে তথ্য জানতে কঠিন মনে হয় তাদের জন্য সহজ সমাধান হলো ফোন কল। যেকোনো মোবাইল নম্বর হতে ১০৫ নম্বরে ফোন দিয়ে কল সেন্টারের মাধ্যমে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিরতণের সম্পর্কিত তথ্যাদি জানা যাবে।
এসএমএসের সাহায্যেও জাতীয় স্মার্টকার্ড বিতরণ সম্পর্কে তথ্য জানা যাবে। এর জন্য প্রথমে ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে sc লিখে স্পেস দিয়ে nid লিখতে স্পেস দিয়ে আপনার ১৭ সংখ্যার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর লিখে ১০৫ নম্বরে পাঠিয়ে দিতে হবে। যাদের ১৩ সংখ্যার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর তাদের আইডি নম্বরের আগে জন্ম সাল যোগ করতে হবে।
উদাহরণ : sc nid 19***************
যারা ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি তারা sc লিখে স্পেস দিয়ে f লিখে স্পেস দিয়ে নিবন্ধন স্লিপের ফরম নং লিখে স্পেস দিয়ে d লিখে স্পেস দিয়ে yyyy-mm-dd ( বছর-মাস-দিন) এই ফরম্যাটে জন্ম তারিখ লিখে ১০৫ নম্বর পাঠাতে হবে।
উদাহরণ : sc f 2***** d yyyy-mm-dd
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে
যারা কাগজে লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেলেছেন, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। তারপর যেকোনো সোনালি ব্যাংক/ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে নির্ধারিত ফি (জরুরি ফি ভ্যাটসহ ৩৪৫ টাকা) জমা দিয়ে বিতরণ কেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে জিডির কপি ও টাকার রশিদ জমা দিতে হবে। তারপর স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হবে।
নিবন্ধন স্লিপ হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে
যাদের ভোটার নিবন্ধনের সময় প্রদান করা নিবন্ধন স্লিপ হারিয়ে গেছে, তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি রেজিস্টারে ভোটারের নাম, পরিচয়পত্র নম্বর ও ভোটারের স্বাক্ষর নিয়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো জিডি করতে হবে না।
জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি, কিন্তু স্লিপ আছে
যেসব ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি, কিন্তু নিবন্ধন স্লিপ আছে, তাদের মূল নিবন্ধন স্লিপসহ স্মার্ট কার্ড বিতরণের নির্ধারিত কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হবে।
অনলাইনে স্মার্ট কার্ড সংশোধন করবেন যেভাবে
স্মার্ট কার্ড নিয়ে কমবেশি অনেকেই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। কারো কার্ডে তথ্য ভুল থাকতে পারে, আর এই ভুল কার্ড সংশোধনের জন্য অনেক রকম ঝামেলাও পোহাতে হয়। অনেকের পরিচয়পত্র ছিল, হারিয়ে গেছে বা পরিচয়পত্রে ভুল তথ্য রয়েছে সংশোধন করা প্রয়োজন—এমন অনেকেই আছেন বুঝতে পারছেন না, তারা কীভাবে নতুন পরিচয়পত্র পাবেন বা ভুল তথ্য ঠিক করবেন সেটাই এখানে জানানো হল।
জেনে নিন যেভাবে করবেন-
প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করতে এই লিংকে যান https://services.nidw.gov.bd/registration এরপর-
১. প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী পূরণ করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।
২. আপনার কার্ডের তথ্য ও মোবাইলে প্রাপ্ত এক্টিভেশন কোড সহকারে লগ ইন করুন।
৩. তথ্য পরিবর্তনের ফর্মে তথ্য হালনাগাদ করে সেটির প্রিন্ট নিয়ে নিন।
৪. প্রিন্টকৃত ফর্মে স্বাক্ষর করে সেটির স্ক্যানকৃত কপি অনলাইনে জমা দিন।
৫. তথ্য পরিবর্তনের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় দলিলাদি কালার স্ক্যান কপি অনলাইনে জমা দিন।
এবার “রেজিষ্ট্রেশন ফরম পূরণ করতে চাই” ক্লিক করুন।
এবার ফরমটি সঠিক ভাবে পুরণ করুন-
* এন.আই.ডি নম্বরঃ (আপনার এন.আই.ডি নম্বর যদি ১৩ সংখ্যার হয় তবে অবশ্যই প্রথমে আপনার জন্মসাল দিয়ে নিবেন উদাহরণঃ আপনার কার্ড নাম্বার ১২৩৪৫৬৭৮৯১০০০ ও জন্মসাল ১৯৯০ আপনি এভাবে দিবেন১৯৯০১২৩৪৫৬৭৮৯১০০০)
* জন্ম তারিখঃ (কার্ড দেখে সিলেক্ট করুন)
*মোবাইল ফোন নম্বরঃ (আপনার সঠিক মোবাইল নাম্বার দিন কারণ মোবাইলে ভেরিফাই কোড পাঠাবে)
* ইমেইলঃ (ইচ্ছা হলে দিতে পারেন না দিলে সমস্যা নাই, ইমেইল আইডি দিলে পরবর্তীতে লগইন করার সময় ভেরিফাই কোড ইমেইলে সেন্ড করতে পারবেন যদি মোবাইল হাতের কাছে না থাকে)
* বর্তমান ঠিকানা: বিভাগ জেলা উপজেলা/থানা সিলেক্ট করুন ভোটার হবার সময় যা দিয়েছিলেন।
* স্থায়ী ঠিকানা: বিভাগ জেলা উপজেলা/থানা সিলেক্ট করুন ভোটার হবার সময় যা দিয়েছিলেন।
* লগইন পাসওয়ার্ড: পাসওয়ার্ড অবশ্যই ৮ সংখ্যার হতে হবে বড় হাতের অক্ষর ও সংখ্যা থাকতে হবে যেমনঃ InfoPedia71
এবার সঠিক ভাবে ক্যাপচার পূরণ করুন ছোট হাতের বড় হাতের অক্ষর বা সংখ্যা যা দেওয়া আছে তাই বসান তবে স্পেস দিতে হবেনা । এবার “রেজিষ্টার” বাটন ক্লিক করে দ্বিতীয় ধাপে চলে যান।
ফরম টি সঠিক ও সফল ভাবে রেজিস্টার করার পর দেখুন আপনার মোবাইলে ভেরিফাই কোড এসেছে ও ব্রাউজারে ঐ কোড সাবমিট করার অপশন এসেছে, যথাযথ স্থানে আপনার মোবাইলের ভেরিফিকেশন কোড বসান ও রেজিস্টার বাটনে ক্লিক করুন।
সঠিক ভাবে কোড প্রবেশ করার পর আপনার Account Active হয়ে যাবে এবার একটি পেইজ আসবে আপনাকে লগইন করতে বলা হবে অথবা লগইন লিংক https://services.nidw.gov.bd/login
লগইন করতে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর (১৩ সংখ্যার হলে অবশ্যই প্রথমে আপনার জন্মসাল দিয়ে নিবেন) জন্মতারিখ ও আপনার দেওয়া পাসওয়ার্ড দিয়ে ভেরিফাই কোড কিভাবে পেতে চান তা সিলেক্ট করতে হবে।
এবার আপনার সিলেক্ট করা অপশন মোবাইলে বা ইমেইল থেকে ভেরিফাই কোড বসিয়ে লগইন করুন।
নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা আপনার ডাটাবেজের সব তথ্য দেখা যাবে এবার। নিচের যেকোনো অপশনে চাহিদা অনুযায়ী ক্লিক করুন আর তথ্য হালনাগাদ করুন। এভাবেই আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন কিংবা ছবি পরিবর্তন করতে পারবেন খুব সহজেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন