শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

কলম্বিয়ায় সরকার বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ডিলান ক্রুজ আসলে কে?
 তিনদিন হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় থেকে মারা যায় কলম্বিয়ার কিশোর বিক্ষোভকারী ডিলান ক্রুজ। এরপর ২৪ ঘন্টার বেশি সময় ধরে বিশ্ব জুড়ে ডিলান ক্রুজ ইনস্টাগ্রামে সবচেয়ে বেশি ট্রেন্ডিং, আর টুইটারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ট্রেন্ডিং খবর ছিল। ২৪ ঘন্টায় ডিলান শব্দটি ৩ লাখ ৫৫ হাজার বার টুইট করা হয়েছে।
কে ছিলেন ডিলান?

২৩শে নভেম্বর শনিবার বিকেল চারটার দিকে কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটার রাস্তা থেকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে শুরু করে। দুর্নীতি এবং সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারে আড়াই লক্ষ মানুষ দেশব্যাপী ধর্মঘট ডাকে।

বিক্ষোভকারী-পুলিশের মধ্যকার বিশৃঙ্খলার মধ্যে ডিলান হাতে পুলিশের ছোঁড়া একটি কাঁদানে গ্যাসের ক্যানিস্টার তুলে নেয়। গ্লাভস পড়া হাতে ক্যানিস্টার তুলে নিয়ে দাঙ্গা পুলিশ স্কোয়াডের দিকে ছুঁড়ে মারে ডিলান। এরপর দৌড়াতে শুরু করে ডিলান, কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একটি গুলি লাগে তার শরীরে। এরপর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ডিলান, নিথর।
সামাজিক মাধ্যমে অনেক ভিডিওতে দেখা যায় প্যারামেডিক এসে পৌঁছানোর আগে রাস্তায় পড়ে থাকা ডিলানকে ঘিরে রয়েছে অনেক মানুষ, একসঙ্গে অনেকে চিৎকার করে বলছে ‘গুলি করেছে’ এবং ‘গুলি করে মেরে ফেলেছে’। হ্যা, ওরা ডিলানকে মেরে ফেলেছে। সোমবার ডিলান মারা যায়। কিন্তু প্রথম দুইদিন বোগোটা হাসপাতালের আইসিইউতে ছিল ডিলান।
এক বিবৃতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘আমাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ডিলান ক্রুজ মারা গেছেন। তার পরিবার এবং ঘনিষ্টজনদের জন্য আমাদের সমবেদনা রইলো।’

ক্রুজের ঘটনার পর বিক্ষোভ নতুন গতি পেয়েছে, বিশেষ করে তার গুলিবিদ্ধ হবার এবং তার পরের কয়েক মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর।
গত সপ্তাহে কলম্বিয়া জুড়ে আন্দোলন শুরুর পর বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের নিপীড়নের অনেক অভিযোগ ওঠে, ডিলান যার অন্যতম।

বিক্ষোভের প্রতীক
১৮ বছর বয়সী ডিলানকে যতক্ষণে হাসপাতালে নেয়া হয়, তার আগেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তার ভিডিও এবং টুইটারে ট্রেন্ডিং হতে শুরু করেছে তার নাম।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, যেদিন ডিলান মারা যায়, ঐ একই দিনে বোগোটার স্কুল থেকে তার গ্রাজুয়েট হয়ে বেরুনোর কথা ছিল।

বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, ডিলান এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান, এবং মা, নানা ও দুই বোনের সাথে থাকতো।
স্কুলের বন্ধুরা তাকে ‘শক্তিমান’, ‘বুদ্ধিমান’ এবং সবার প্রিয় বলে বর্ণনা করেছে। কলম্বিয়ার দৈনিক এল তিয়েম্পো এক ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ডিলান ভলিবল খেলতে ভালোবাসত এবং একটু আরামপ্রিয় ছিল।
যদিও তার বন্ধুদের একজন জানিয়েছে, শিক্ষা ঋণ না পেয়ে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিল ডিলান, কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তারা এজন্য কোন আবেদন পায়নি।


কলম্বিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার এবং শনিবারের মধ্যে ৩৫১ জন বিক্ষোভকারী এবং ১৮২ জন পুলিশ আহত হয়েছেন। ডিলানের মৃত্যুর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিন জন নিহত হবার খবর নিশ্চিত করেছে।
রোববার হাসপাতালে বাইরে ডিলানের সুস্থতার জন্য শত শত মানুষ মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন।
সাংবাদিকেরা হাসপাতালের বাইরে অবস্থান নেন, ডিলানের সর্বশেষ খবর বিশ্বকে জানানোর জন্য।

যেখানে ডিলান গুলিবিদ্ধ হয়েছিল, সেটি সাধারণ সময়ে খুবই ব্যস্ত সড়ক। কিন্তু এখন সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন অনেকে।
অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় এবং আরেকটি প্রতিষ্ঠান বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে এবং সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছে, কলম্বিয়ায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনী হামলা চালিয়েছে যা ‘ক্ষমতার অপপ্রয়োগ’।
একই সঙ্গে সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে এবং শান্তিপূর্ণভাবে যাতে বিক্ষোভ করতে পারে, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান ডুকে বলেছেন, ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এতে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

ডিলানের মৃত্যুর পর দেশটির অন্য সব রাজনীতিকের মত প্রেসিডেন্টও শোক জানিয়েছেন। কিন্তু সরকারের সমর্থক কয়েকজন আইন প্রণেতা অবশ্য এ ঘটনার জন্য ডিলানের মা-বাবাই দায়ী, এমন মন্তব্য করেছেন।
তাদের বক্তব্য অপ্রাপ্তবয়স্কদের ঐ সময় বাড়িতে থাকার কথা, এবং আন্দোলনকারীরা ডিলানকে ব্যবহার করে বিক্ষোভ শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে - এমন অভিযোগ তুলেছেন তারা।

সামাজিক মাধ্যমে ডিলানের বিক্ষোভরত মুখের একটি ছবি ক্রমেই আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে, লাতিন অ্যামেরিকার লড়াই সংগ্রামের প্রতিবাদী স্বরূপ।
ডিলানের জীবনের শেষ কয়েক ঘন্টা যেন পুরো কলম্বিয়া এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে ছিল। তার সম্পর্কে সর্বশেষ খবরের অপেক্ষায় ছিল পুরো দেশ। তার ঘটনা অন্যদের সাহস আর প্রেরণা দিয়েছে বলে বলছেন বিক্ষোভকারীরা। সূত্র : বিবিসি।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন