শিমের সবুজ ডগায় সাদাবেগুনি ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠ। কচি শিমের গন্ধ বাতাসে ভাসছে চারদিক। বিস্তৃত দিগন্তে শোভা পাচ্ছে অসংখ্য শিমের বাগান। এ দৃশ্য এখন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ও উচাখিলা ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে। শিম চাষীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জানা যায়, বিস্তীর্ণ জমিতে শিমের মাচায় পরিচর্যা কাজে ব্যস্ত চাষীরা। কেউ আবার বাজারে নেয়ার জন্যে শিম তুলছেন। অল্প সময়ে অধিক লাভ হয়াতে বর্তমানে অনেকেই শিম চাষে ঝুঁকছেন। গ্রামীণ পথের দু’পাশের জমিতে অসংখ্য বাগানে ফুটন্ত সাদাবেগুনি ফুল চাষিদের হৃদয়ে আনন্দের ঢেউ তুলছে। কচি শিমের গন্ধ আকৃষ্ট করে পথিকের মন।
চাষিরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে শিমের ফলন বৃদ্ধি ও দাম ভালো পাওয়ায় এবার যেন চাষিদের উৎসাহের শেষ নেই। সারাদিন খামারে পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা। এলাকার প্রায় সব জমিতেই এখন শিম চাষ হচ্ছে। পরিত্যক্ত, অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে মাচা করে খমার পদ্ধতিতে চলছে শিম চাষ।
জানা যায়, এ বছর রাজিবপুর ইউনিয়নে ৫শ’ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। প্রতি বিঘা শিম চাষে খরচ পড়েছে ২৫ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি বিঘায় শিম উৎপাদন হবে ১৩৫ মন। ১৫ টাকা কেজি ধরে ১৩৫ মন শিমের মূল্য আসে ৮১ হাজার টাকা। চাষির খরচ ব্যয় বাদে বিঘা প্রতি আয় হবে ৫৫ হাজার ৫শ’ টাকা। প্রতি হেক্টরে শিম উৎপাদন হবে ৬ লাখ ৫ হাজার ৭০ টাকার খরচ বাদে আয় হবে ৪ লাখ ১৪ হাজার ৫শ’ ৮৫ টাকা। এ হিসেবে ৫শ’ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩০ কোটি ২৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার শিম উৎপাদন হবে খরচ বাদে আয় হবে ২০ কোটি ৭২ লাখ ৯২ হাজার ৫শ’ টাকা।
চাষি সুফিয়া খাতুন জানান, তিনি ৫ বছর ধরে শিমসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করছেন। এ বছর ১ একর ৫০শতক জমিতে শিমের চাষ করেছেন। এতে প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আশা করছেন এবার ৩ লাখ টাকার উপরে বিক্রি হবে তার। লাভ থাকবে ২ লাখ টাকারও বেশি। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ফুল থেকে শিম আসতে শুরু হয়েছে। পৌষের প্রথম থেকে মাঘের শেষ পর্যন্ত শিমের পরিপূর্ণ মৌসুম থাকবে। বর্তমানে অনেক কৃষকই শিম তুলতে শুরু করেছেন। পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় এবার শিমের বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন এই নারী কৃষক।
শিম চাষি শহিদুল ইসলাম ও আবু তাহের জানান, শিমের ফলন এ বছর ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে। গত বছর লাভ হয়াতে এবার আরও বেশি জমিতে শিমের আবাদ করেছেন তারা। উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হবেন এমনটাই আশা তাদের।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাধন কুমার গুহ মজুমদার জানান, এবার ঈশ্বরগঞ্জে শিমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ উপজেলায় প্রায় সব গ্রামেই কম বেশি শিম চাষ হয়েছে। তবে সিংহভাগ শিম চাষ হয়েছে রাজিবপুর ইউনিয়নে। আমরা চাষিদের বিভিন্ন রোগবালাই সম্পর্কে ধারণা ও পরামর্শমূলক সহায়তা অব্যাহত রেখেছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন