অ্যাজমা হচ্ছে ক্রনিক এবং জীবনসংশয়ী মারাত্মক একটি ফুসফুসের রোগ, যেখানে বায়ুনালিতে প্রদাহ ও ফুলে যাওয়ার কারণে শ্বাসপ্রশ্বাস কষ্টকর হয়ে পড়ে। আমাদের দেশের সঠিক কোন পরিসংখান জানা না থাকলেও আমেরিকায় প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ অ্যাজমায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে ১০ মিলিয়নই (এর মধ্যে তিন মিলিয়ন শিশুও আছে) ভুগছেন অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমায়। তাই বলা যায় আমাদের দেশেও অ্যাজমার প্রকোপ কম নয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক ও নিয়মিত চিকিৎসা ও পরিকল্পিত জীবনযাপনের মাধ্যমে এ রোগীরা অ্যাজমার তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা : অ্যাজমা রোগীদের মধ্যে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক। অনেক উপসর্গ আছে, যেগুলো সব ধরনের অ্যাজমা রোগীর মধ্যেই দেখা যায়। যেমন কাশির সাঁই সাঁই শব্দ, নিঃশ্বাস ছোট ও দ্রুত হয়ে আসা এবং বুক চেপে আসা। কিছু অ্যালার্জেনের কারণে অ্যালার্জিক অ্যাজমার তীব্রতা বেড়ে যায়। অ্যালার্জেনের মধ্যে আছে ধুলোর জীবাণু, পোষা প্রাণীর লোম ও বর্জ্য, পুষ্পরেণু ছত্রাক ইত্যাদি। একটি জটিল ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে এ অ্যালার্জেনগুলো ফুসফুসের বায়ুনালিগুলোতে প্রদাহ ঘটায় এবং সেগুলো ফুলে ওঠে। এর ফলে কাশি এবং শ্বাসকষ্টসহ অ্যাজমার উপসর্গগুলো দেখা যায়।
অ্যালার্জিক অ্যাজমার কারণ আইজি-ই : অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমার সূত্র হিসেবে অ্যালার্জেনগুলোকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ রোগের মূল কারণ হচ্ছে এক ধরনের এন্টিবডি, যার নাম আইজি-ই। কোনো অ্যালার্জেন শরীরে প্রবেশ করলে তার প্রতিক্রিয়ায় এ এন্টিবডি তৈরি হয়। তারপর আইজি-ই এবং অ্যালার্জেন মিলিতভাবে কিছু শক্তিশালী রাসায়নিক দ্রব্যের নিঃসরণ ঘটায়। এগুলোকে বলা হয় মেভিয়েটর। এদের দ্বারাই শ্বাসতন্ত্রের বায়ুনালিতে প্রদাহ ঘটে এবং সেগুলো ফুলে যায় অর্থাৎ আইজি-ই এন্টিবডি হচ্ছে অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমার গোড়ার কারণ।
রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা : এজন্য রোগীকে অ্যাজমা বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। তিনি খুঁজে বের করবেন কোন কোন অ্যালার্জেন আপনার রোগের ট্রিগার হিসেবে কাজ করছে। একইসঙ্গে তিনি আপনার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন, যাতে আপনি অ্যালার্জেনগুলো থেকে দূরে থাকতে পারনে। অবশ্যই সব ধরনের অ্যালার্জেন থেকে পুরোপুরি মুক্ত থাকা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে ডাক্তার আপনাকে কিছু ওষুধ দেবেন, যেগুলো আইজি-ই এন্টিবডিকে নিষ্ক্রিয় করে, ফলে প্রদাহ হতে পারে না। তবে কোন ধরনের ব্যবস্থাপনা আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ও ফলপ্রদ হবে, তা খুঁজে বের করতে ডাক্তারকে আপনার সহযোগিতা করতে হবে।
অধ্যাপক (অব:), অ্যালার্জি বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
দি এলার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা সেন্টার, ০১৭২১৮৬৮৬০৬।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন