গংগাচড়া (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা
ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে নতুন পোশাক তৈরিতে পুরোদমে চলছে সবার হাত। শুধু কাজ আর কাজ। গঙ্গাচড়া তাঁত শ্রমিকরা ব্যস্ত ও উজ্জীবিত। ফলে এ কাজে যুক্ত হয়ে অনেকেই তাদের ভাগ্য বদলাচ্ছেন। তাঁতিপাড়ার মানুষের ঈদ ও বেনারশি একই সুতোয় গাঁথা। তাই ঈদের কেনাকাটা শুরু হওয়ায় এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। সারা বছরের কেনাকাটা আর ঈদের কেনাকাটায় থাকে পার্থক্য। এ সময় কেনাকাটায় থাকে উৎসবমুখর। ঈদের যত আনন্দ তার একটি হচ্ছে পরিবার-পরিজন নিয়ে কেনাকাটা করায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অফিসের কাজ শেষ করে বিকেলেই নেমে পড়েন অনেকে কেনাকাটায়, যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। ঈদ মানেই নতুন জামা, নতুন পোশাক। নতুন পোশাক ছাড়া ঈদ আনন্দ যেন একেবারেই অসম্ভব। তাই ঈদের কেনাকাটায় ধুম পড়েছে মার্কেট, শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে। বিভিন্ন বিপণিবিতানগুলোতে যেমন ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়, তেমনি সড়কগুলোয় দিনদিন যানজটের মাত্রা বেড়েই চলেছে। তাই অনেক ক্রেতাই যানজট ও ভিড় এড়াতে ঈদের কেনাকাটায় অন্যরকম আনন্দ উপভোগ করার জন্য শহর ছেড়ে বেনারশি পল্লীর ডাকে ছুটে এসেছেন গঙ্গাচড়ার তালুক হাবুর বেনারশি পল্লী। তাই বেনারশি পল্লীতে দিনের আলোই বদলে যাচ্ছে ভিড়ের ধরণ। এ সময় তরুণ-তরুণী ও পুরুষ ক্রেতাদের চেয়ে নারী ক্রেতাই বেশি দেখা যায়। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই তাঁতিদের চোখে-মুখে বিরাজ করছে আনন্দের ঝিলিক। বেনারশি পল্লীতে তৈরি শাড়ি, থ্রিপিস ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে এর চাহিদা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে গত মালিকরা আশঙ্কা করছেন স্থানীয়ভাবে প্রসেসিং ও কাটিং ব্যবস্থা না থাকায় এবং সময় মতো অর্ডারের কাপড় সরবরাহ করতে না পাড়ায় উৎপাদিত কাপড়ের বাজার ব্যবস্থা গড়ে না উঠা শ্রমিক সংকট, স্থানীয়ভাবে সুতা না পাওযায় বর্তমানে বেনারশি পল্লীটি হুমকির সম্মুখীন। প্রতিদিন শহর থেকে গ্রামে ছুটে আসে ডাক্তার, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ বিভিন্ন পেশাজীবী লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে আসে হাবু তাঁতিপাড়া বেনারশি পল্লীতে। মুলাটলও ধাপ এলাকা থেকে সাহীনা, ফরিদা সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শপিংমলগুলোতে যেসব বেনারশি শাড়ি পাওয়া যায় তার মধ্যে হাবু বেনারশি পল্লীর উৎপাদিত কাপড় দাম অনেক কম মান অনেক ভালো এবং টেকসই। তাই নিজেরা যেমন ব্যবহার করছেন পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনকেও উপহার হিসেবে দিচ্ছেন। তবে উৎপাদিত শাড়িগুলোর রয়েছে বৈচিত্রপূর্ণ নাম বেনারশি, বারবুটা, কুচিকাটা, ফুলকলি প্রভৃতি। এক একটা শাড়ি সর্বনিম্ন ১ হাজার ৫০০ উপর থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ফাইয়াজ বেনারশির স্বত্বাধিকারী ফরিদা রহমান জানান, সংসারের অভাব-অনটনের কারণে স্বামী আব্দুর রহমান মিরপুরে কাজ শিখেন। আর সেই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে নিজে এলাকায় গড়ে তোলেন তাঁত শিল্প বেনারশি পল্লী। এক সময় প্রায় ৬শ তাঁত থাকলে বর্তমানে অধিকাংশই বন্ধ রয়েছে। নিশাত বেনারশির স্বত্বাধিকারী আব্দুল কুদ্দুস জানান, বিভিন্ন উৎসবে বেনারশির শাড়ির চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। তবে সুতা ও উৎপাদিত কাপড় প্রসেসিং এবং কার্টিং স্থানীয় ভাবে ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। বেনারশি পল্লীর কারিগর গফুর, আব্দুর মজিদ, সাইফুল, মোসলেমা, কুলসুম জানান এক একটি শাড়ি তৈরি করতে সময় লাগে দুই থেকে তিন দিন এবং শাড়ি প্রতি ৮শ থেকে ১ হাজার ৫শ টাকা পাওয়া যায় আর থ্রিপিসে পান ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা তা দিয়ে সংসার চালান। কারিগরা আক্ষেপ করে বলেন এই টাকা দিয়ে হামার সংসার আর চলে না। কারণ একজন রাজমিস্ত্রি কাম করে পায় ৫০০ কাটা আর হামরা হাড়খাটুনি পরিশ্রম করে পাই ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। তবে বেনারশি শাড়ি-থ্রিপিস এর চাহিদা বেড়ে যাওযায় তাঁতের কারিগর এতদিন যারা বাইরে ছিল তারাও নিজ এলাকায় ভিড়তে শুরু করেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন