নজরুল ইসলাম, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে
রাজবাড়ী জেলা শহরের ড্রাইআইস ফ্যাক্টরি এলাকায় আট বছর আগে নির্মাণ করা হয় অত্যাধুনিক ‘জেলা মর্গ’। ওই মর্গে মধ্যে রয়েছে এক সাথে চারটি লাশ রাখার ব্যবস্থা। তবে বাস্তবতা হলো, ওই হিম ঘরের কথা জানেন না খোদ সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরাই। সেই সাথে অব্যবস্থাপনার পরিপূর্ণ এখন মর্গটি। জঙ্গলে পরিপূর্ণ চারপাশ। বৈদ্যুতিক লাইট নেই বললেই চলে। রাত মানেই সেখানে ভুতুরে পরিবেশ। আনাগোনা বাড়ে নিশাচর প্রাণী আর মাদক সেবীদের। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে জেলার একমাত্র এ মর্গটি পরিচালিত হয়ে আসছে। আধুনিক ওই মর্গটি ২০০৮ সালের ৩০ জুলাই উদ্বোধন করা হয়। সে সময় থেকেই ওই মর্গটির একপাশের রুমে লাশ কাটা-সেলাই এবং অপর রুম হিমঘর হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে নিয়মিতভাবে লাশের ময়না তদন্তের স্বার্থে কাটা-সেলাইয়ের কাজ রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা করে আসলেও হিমঘরটি রয়েছে অবহেলা আর অনাদরে। এ হিমঘরে একসাথে চারটি লাশ রাখা যায়। অথচ এ তথ্য জেলার বেশিরভাগ বাসিন্দাসহ সদর হাসপাতালের খোদ চিকিৎসকদেরও জানা নেই। যে কারণে ওই হিমঘরের ব্যবহার হচ্ছে না বললেই চলে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আট বছরের মধ্যে চলতি বছরে দু’টি লাশ রাখা হয় সেখানে। আর ওই লাশ রাখা বাবদ সরকারের আয় হয় দুই হাজার টাকা। জেলার একমাত্র এ মর্গটি সর্বদাই জঙ্গলে পরিপূর্ণ থাকে। যা দেখে বোঝা যায় সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির নেই কোন অভিভাবক। প্রায় প্রতিমাসেই এখানে ১০/১২ লাশ আসে। এরমধ্যে কিছু লাশ থাকে পচা। আর ওই পচা লাশ যে দিন এখানে আসে সে দিন সামনের রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল হয় কষ্টের। দুর্গন্ধে পুরো এলাকা যায় ছেয়ে। তারা শুনেছেন এখানে একটি হিমঘর রয়েছে। তবে কখনো ওই ঘরে লাশ রাখতে তারা দেখননি। অথচ লাশ নিয়ে অনেককেই বিপদে থাকতে দেখেছি। এখানে বিকালের দিকে কোন লাশ আসলে সে লাশ কাটা-সেলাই করা হয় না। মর্গের মধ্যে অথবা বাইরে সারা রাত ফেলে রাখা হয় সে লাশ। যদি মর্গের হিমঘরটির সঠিক ব্যবহার করা সম্ভব হতো। তা হলে লাশের পরিবারের সদস্যরা থাকতেন নিশ্চিন্ত। তারা হিমঘরে লাশটি রেখে পরবর্তী দিন চিকিৎসকের কাটা-সেলাই শেষে তা নিয়ে গিয়ে সৎকার করতে পারতেন। তিনি বলেন, মর্গটি অপরিচ্ছন্ন থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাদের। পুলিশ সদস্যরা অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ দাফনের জন্য তা তাদের কাছে স্থানান্তর করে থাকেন। বিগত বছরের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১২ জুন পর্যন্ত পুলিশ ১৩টি বেওয়ারিশ লাশ আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম রাজবাড়ী জেলা শাখার কাছে হস্তান্তর করে। তিনি আরো বলেন, এ মর্গে হিম ঘর থাকলেও বিষয়টি জেলাবাসীর অজানা। ফলে কখনো কখনো রাজবাড়ীর লাশ বাধ্য হয়ে ফরিদপুরের হিমঘরে নিয়ে রাখা হয়। তিনি মনে করেন, জরুরি ভিত্তিতে হিমঘর থাকার বিষয়টি সাধারণ মানুষকে জানানো প্রয়োজন। এতে ওই মানুষগুলো লাশ নিয়ে আর বিপাকে পড়বে না এবং তারা নিশ্চিন্ত মনে লাশটি মর্গে রাখতে পারবে। এতে ওই পরিবারটির উপকার হবে এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল থেকে জেলা মর্গটির দূরত্ব প্রায় তিন কিলো মিটার। সেখানে নেই কোন নৈশপ্রহরী। রয়েছে মাত্র একজন ডোম। তিনি আরো বলেন, মর্গে মধ্যে যে একটি হিম ঘর রয়েছে তা তিনি কয়েকদিন আগেই জেনেছেন। দীর্ঘ আট বছরে ওই হিমঘরে মাত্র দুইটি লাশ রাখা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন