মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে
শুল্ক বৈষম্যের কারণে দেশে সিগারেট শিল্প দিনে দিনে উন্নতি লাভ করলেও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বিড়ি শিল্প সেক্টর। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক কারখানা। বিড়ি শিল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে গত দেড় দশকে এই সেক্টরে একের পর এক বিড়ি কারখানা বন্ধের কারনে বেকার পেশাচ্যুত হয়েছে ৩৩ লাখ বিড়ি শ্রমিক। বিড়ি শিল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, দেশে দীর্ঘদিন ধরেই তথাকথিত তামাক বিরোধী সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার কওে কৌশলে সিগারেট বান্ধব বাজেট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলতি বছরে সংসদে উত্থাপন করা করা বাজেটে সিগারেটের নিম্ন সøাবে সিগারেটের শুল্ক ধরা হয়েছে ৩১ দশমিক ৪৮ টাকা, অন্যদিকে বিড়ির বেলায় এই হার ধরা হয়েছে ৬২ দশমিক ৮৭ টাকা। বিষয়টি অসহনীয় মনে করে যৌথভাবে আন্দোলনে নেমেছে বিড়ি শিল্প মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা প্রেস কনফারেন্স ও মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। বিড়ি শিল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া বিভিন্ন তথ্যে দেখা গেছে, দেড় দশক আগে দেশে ছোট বড় ২শ’ ১৮টি কারখানার অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু বিড়ি ও সিগারেটের বাজেট বৈষম্যের কারণে বর্তমানে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল সহ সারাদেশে মাত্র ৭৫টি বিড়ি কারখানা কোনোমতে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। সম্পূর্ণ শ্রম ঘন এই শিল্পের ক্রমশ বিলুপ্তির কবলে পড়ে ইতোমধ্যেই পেশাচ্যুত হয়েছে ৩৩ লাখ বিড়ি শ্রমিক। বাজেটে কিভাবে ধারাবাহিক ভাবে বৈষম্য তুলে ধরে সম্প্রতি বগুড়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিড়ি মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের যৌথ কমিটির আহ্বায়ক এ্যাড, আনোয়ার হোসেন রানা জানিয়েছেন, যেখানে ২০০১-০২ সালের বাজেটে প্রতিহাজার বিড়ির বিপরীতে ব্যান্ডরোলের মাধ্যমে অগ্রিম শুল্ক ধার্য করা হয় ৩০ দশমিক ৯০ টাকা। সেখানে চলতি প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক ধরা হয়েছে ১শ’ ৫৭ দশমিক ২৮ টাকা। অপরদিকে ২০০৩-০৪ অর্থবছরে সিগারেটের নিম্ন সøাবের শুল্ক ধরা হয়েছিল ৩৫ টাকা। পরের বছরই ৪র্থ সøাব ধার্যের কৌশল অবলম্বন করে শুল্ক হার কমিয়ে ৩২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। আর চলতি বছরে এই শুল্ক হার কমিয়ে ৩১ দশমিক ৪৮ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। যা কৌশলে দেশে বিড়ি শিল্পকে ধ্বংস করে দেওয়ার যড়যন্ত্রেরই অংশ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, মূলত বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানীকে সাবেক আমলের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মতোই শুল্ক সুবিধা দেয়া হচ্ছে। অথচ বৈষম্যমূলক শুল্ক সুবিধার বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করে মুনাফার টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিড়ি শিল্পের দেশীয় উদ্যোক্তারা তাদের অর্জিত মুনাফা দেশেই বিনিয়োগ করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে তিনি আকিজ গ্রুপ, নাসির গ্রুপ, জামিল ও আবুল খায়ের গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ শিল্পোদ্যোগের উল্লেখ করেন। এছাড়াও সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানী গুলো একই ফর্মুলা প্রয়োগ করে ফিলিপাইনের মতো দেশে প্রথমে বিড়ি শিল্প ধ্বংসের পর দেশীয় সিগারেট কোম্পানীগুলোকেও অকেজো করে দিয়ে তাদের পূর্ণ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন