এসএম উমেদ আলী, মৌলভীবাজার থেকে
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর উপর নির্মিত শেরপুর সেতু মেরামতের জন্য ১৩ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করার পর গত ১০ জুন শুক্রবার থেকে সকল যানবাহন ফেঞ্চুগঞ্জ-রাজনগর-মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল হয়ে যাতায়াত করছে। হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য তৈরি আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করায় স্থানে স্থানে রাস্তা ভেঙে গর্ত হচ্ছে। অনেক স্থানে এসব গর্তে পাথর বোঝাই ট্রাক আটকা পরে দীর্ঘ যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ-রাজনগর-মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল হয়ে মিরপুর পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১০৫ কিলোমিটার। পাথর বোঝাই ভারী ট্রাক ১০৫ কিলোমিটার এন ২০৮ এবং এন-২-২০৮ সড়কের ওপর দিয়ে চলাচল করায় রাস্তার অনেক স্থানে উঁচু-নিচু ঢেউয়ের মতো হয়ে গেছে এবং ভেঙে বিশাল বিশাল গর্ত হচ্ছে। প্রতিদিন পাথর বোঝাই ট্রাক রাস্তার একপাশে দেবে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে রাস্তার। এতে করে প্রতিদিন যেমন ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে, তেমনি সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাস্তার ভেঙে যে ক্ষতি হচ্ছে মেরামতে প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। অপরদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক বন্ধ হওয়ায় ভারী যানবাহন আঞ্চলিক মহাসড়কের দিয়ে যাতায়াতের ফলে মৌলভীবাজার জেলা শহরে মাত্রাতিরিক্ত যানজট বেড়েছে। যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছে মানুষের জীবন। হর্নের শব্দে রাস্তার আশপাশের বাসা-বাড়ি, দোকান-পাট, স্কুল-কলেজ অফিসগুলোতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পথচারীরা খুব আতঙ্ক নিয়ে রাস্তায় চলাচল করছেন। এছাড়া প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত জানান, ৩০-৪০ টন ওজনের পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য এ রাস্তা তৈরি হয়নি। এসব ভারী যানবাহন চলাচল করায় প্রতিনিই ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি জেলা প্রশাসক বরাবরে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধের বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। কি পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এধরনের রাস্তা প্রতি কিলোমিটার নতুনভাবে নির্মাণ করতে গেলে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এছাড়া পুরো রাস্তা মেরামত করলে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান বলেন, এত ভালো রাস্তা নষ্ট হচ্ছে দেখে আমারও কষ্ট হচ্ছে, রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি লিখেছি। সামাজিক সংগঠন আলোক ধারার যুগ্ম সম্পাদক হাসানাত কামাল জানান, ছিমছাম, পরিচ্ছন্ন, পিচঢালা শহরের চেহারাটা হঠাৎ করেই পাল্টাতে শুরু করেছে। এমন সাজানো, গোছানো, শান্ত শহর এদেশে কমই আছে। সেই শহরের বুকের ওপর দিয়ে যাচ্ছে বিশাল পাথর বোঝাই ট্রাক। সহ্য করতে না পেরে ক্ষতবিক্ষত মসৃণ পথটি পরিণত হয়েছে বিশাল বিশাল গর্তে। স্থানে স্থানে খানাখন্দ। এক সময় তাও গর্তে পরিণত হবে। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠবে সড়কটি। বলা হচ্ছে এটা সাময়িক। শেরপুর সেতুর মেরামত কাজ শেষ হলেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চালু হবে। কিন্তু যে ক্ষত তৈরি করে দিয়েছে তা কি সারাবে। অনেকের মতো আমিও সন্দিহান। কবে স্বাভাবিক হয়ে আগের অবস্থায় ফিরে আসবে শহরের সড়কগুলো। আর একবার ক্ষত হলে তা বারবার আক্রান্ত হবেই। অতি দ্রুত রাস্তার পূর্ণাঙ্গ মেরামতের দাবি করেন। যাত্রীবাহী বাস চলুক আমাদের আপত্তি নাই। শেরপুর সেতু চালুর আগ পর্যন্ত পাথরবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধের দাবি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন