মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

প্রতি ইঞ্চি ভূমির ওপর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুনশী আবদুল মাননান
সীমান্ত নদীর ভাঙনে বাংলাদেশ ভূমি হারাচ্ছে। সীমান্ত নদীর বাংলাদেশমুখী ভাঙনে বাড়িঘর, জমিজিরাত, ফসলের ক্ষেত নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতীয় অংশে চর ও ভূমি জেগে উঠছে। এই জেগে ওঠা চর ও ভূমি ভারতের দখলে চলে যাচ্ছে। এভাবে গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশের ৫০ হাজার একর ভূমি ভারতের দখলভুক্ত হয়েছে। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের কাগজপত্রে হারানো ভূমির হিসাব থাকলেও তার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ভূমি উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপও নেই।
সীমান্ত নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকার পেছনে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণ লক্ষ্য করা যায়। ভারত সীমান্ত নদীগুলোতে তার দিকের তীর সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে, নদীশাসন করেছে এবং ভাঙন প্রতিরোধ শক্ত বাঁধ নির্মাণ করেছে। এ ব্যবস্থার ফলে নদীগুলো সর্বত্র বাংলাদেশমুখী ভাঙনপ্রবণ হয়ে উঠেছে। নিরাপদ রয়েছে ভারতীয় দিকের তীর। বাংলাদেশ সীমান্ত নদীগুলোর তার দিকের তীর সংরক্ষণে পরিকল্পিত তেমন কোনো কার্যব্যবস্থা নেয়নি। ভাঙন প্রতিরোধক বাঁধ নির্মাণেও যথার্থ মনোযোগ দেয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু প্রকল্প নিলেও তা ঠিকমতো বাস্তবায়ন করেনি বা করতে পারছে না। অর্থাভাব এর একটি বড় কারণ। দ্বিতীয় বড় কারণ বিএসএফের বাধা। বিএসএফ এ ধরনের প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে দিতে চায় না বা করতে দিচ্ছে না। সীমান্ত নদীর ভাঙন প্রতিরোধে বাজেটে বড় কোনো অর্থের বরাদ্দ থাকে না। এ ব্যাপারে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যে অভিমত ইনকিলাবে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, সীমান্ত নদীর ভাঙন প্রতিরোধের কাজ জোরদার করতে মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। বরং দেখা গেছে, বাজেটে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ অভিমতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট নয় অর্থ মন্ত্রণালয়। কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং অর্থমন্ত্রী। পর্যবেক্ষকদের মতে, অর্থ বরাদ্দ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ নিয়ে যত প্রশ্নই থাকুক সীমান্ত নদীর ভাঙন রোধ করতে না পারার উল্লেখযোগ্য নিয়ামক কারণ হলো, বিএসএফের প্রতিবন্ধকতা। বিএসএফ বাধা সৃষ্টি করে কাজ বন্ধ বা বিলম্বিত করে, যা তার নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পর থেকে সুরমা, কুশিয়ারা, ফেনী, সুমেস্বরী, মুহুরী, করতোয়া, মহানন্দা, ধরলা, দুধকুমার, আত্রাই, তিস্তা, ইছামতী, কালিন্দীসহ সীমান্ত নদীগুলোতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে তীরবর্তী মসজিদ, মন্দির, হাটবাজার, স্কুল-মাদরাসা, অফিস-আদালত, ব্রিজ-কালভার্ট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর সীমান্ত নদীগুলো দুই দফা ভাঙনের তা-ব সৃষ্টি করে। বর্ষায় ভাঙন ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। স্বাধীনতার পর থেকে সীমান্ত নদীর ভাঙনে দেশ কী পরিমাণ ভূমি হারিয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে নেই। এটা পরম আশ্চর্য বললেও বোধকরি কম বলা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন সাবেক মহাপরিচালক ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, শুধু ইছামতী নদীর ভাঙনেই বাংলাদেশ সাড়ে ৪ হাজার একর ভূমি হারিয়েছে। আর সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে হারিয়েছে কমপক্ষে ৩৫ হাজার একর ভূমি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাতক্ষীরার দেবহাটায় ইছামতির ভয়াবহ ভাঙনের আশঙ্কায় এখন ৮টি গ্রামের মানুষ সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামীতে দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গাধর, সংকোশ, ফুলকুমার, তিস্তা, ধরলা প্রভৃতি নদী আরো ভাঙনপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে। অনুরূপভাবে সুরমা-কুশিয়ারা ভাঙনে বেপরোয়া হয়ে পড়তে পারে। প্রতিবেদনে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, সুরমা-কুশিয়ারার ভাঙন রোধে এখনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ-পদক্ষেপ নেয়া না হলে জকিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা কয়েকটি দ্বীপে পরিণত হবে এবং এসব দ্বীপের মালিকানা নিয়ে দেখা দেবে বিভিন্ন সমস্যা।
ইনকিলাবেরই আরেক প্রতিবেদনে জানা গেছে, আপার সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের কাজ দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ ঝুলে আছে। বিএসএফের বাধার কারণে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। সময় ও বাজেট বাড়ছে অথচ কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য সিলেটে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিণত আনা। কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের সহায়তা করা এবং বছরে অন্তত ৮৭ হাজার টন ফসল উৎপাদন করা। জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, কানাইঘাট, সিলেট সদরের বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৫৩ হাজার ৮২০ হেক্টর ও নিট চাষযোগ্য ৩৫ হাজার ৬০০ হেক্টর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর এলাকায় সেচ সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে প্রকল্পটি গৃহীত হয়। ২০০১-০২ অর্থবছরে গৃহীত প্রকল্পের কাজ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১২ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত ১০ বছর পার হয়ে গেছে এবং ব্যয় ১৫০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় রয়েছে সুরমা নদীর বাঁ তীর এবং কুশিয়ারা নদীর ডান তীরের ১৫৫ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্নির্মাণ, ২০ কিলোমিটার নতুন বাঁধ নির্মাণ এবং জকিগঞ্জ থেকে কুশিয়ারার উজানে নদী খনন, ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পানি নিষ্কাশন ও ১৭৩ কিলোমিটার সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ৫টি পানি নিষ্কাশন স্লুইস গেট, দুটি ব্রিজ, একটি পাম্প স্টেশন ও ৮১২টি সেচ কাঠামো নির্মাণ। উল্লেখ করা যেতে পারে, ভারত কুশিয়ারা নদী খননের কাজে আপত্তি জানিয়ে ও বাধা দিয়ে প্রকল্পের কাজ আটকে দিয়েছে। ভারতের আপত্তির মূল কথা, কুশিয়ারা নদী খননের কাজ সম্পন্ন হলে ভারত প্রয়োজনীয় পানি থেকে বঞ্চিত হবে। এই খননের মাধ্যমে বাংলাদেশ কুশিয়ারা থেকে অতিরিক্ত পানি টেনে নেবে। বাংলাদেশের তরফে বারবার বলা হয়েছে, নদীর তলদেশ থেকে পলি সরিয়ে একে নাব্য করাই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। তাছাড়া এর ফলে কুশিয়ারার ভাঙন প্রবণতা হ্রাস পাবে। বাংলাদেশের কথায় ভারত কর্ণপাত করছে না। ভারতের খোঁড়া যুক্তির একটা বড় কারণ সম্ভবত এই যে, কুশিয়ারার ভাঙনে বাংলাদেশ প্রতি বছর ভূমি হারাচ্ছে যা শেষ পর্যন্ত ভারতের দখলে চলে যাচ্ছে। এই ভূমি দখল অব্যাহত রাখতেই ভারত কুশিয়ারার খননসহ আপার সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের বাস্তবায়নে বাধা প্রদান করছে। কুশিয়ারার উজানে ভারত বাঁধ, গ্রোয়েন, ইটভাটা নির্মাণ করে নদীর গতিপথে পরিবর্তন আনায় নদী অধিকতর বাংলাদেশমুখী ভাঙনপ্রবণ হয়ে পড়েছে। এটি ভারতের ভূমি দখলের একটি কৌশল, যা সে প্রতিটি সীমান্ত নদীর ক্ষেত্রেই ব্যবহার করছে। সুরমা-কুশিয়ারার ভাঙনে বাংলাদেশ যে হাজার হাজার হেক্টর ভূমি হারিয়েছে তার পুরো বিবরণ এখানে দেয়া সম্ভব নয়। সংক্ষেপে উল্লেখ্য, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের নথিপত্রে থাকা আলিগড় নামে একটি গ্রাম এখন ভারতের দখলে। এ ছাড়া মাজরগাঁও, উজিরপুর, অমলশিদ, গজুকাটা, লক্ষ্মীবাজার, সুলতানপুর মানিকপুর, পূর্ব জামচর, সেনাপতির চর, ভালুয়া উত্তরকূল, মুন্সীবাজার, দীঘলে, ভূইয়ামুড়াসহ ২০টি গ্রামের অধিকাংশ এলাকা ভেঙে ওপারে চর জেগেছে। ভারত বাংলাদেশের এসব ভূখ-ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে দখলে নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। ওপারে জেগে ওঠা এসব ভূখ-ে বাংলাদেশিরা যেতে চাইলে বিএসএফ বাধা প্রদান এমন কি গুলিবর্ষণ করতেও দ্বিধা করে না।
ভারত বাংলাদেশের দখলিকৃত ভূখ- ফেরত দেবে, এটা আশা করা বাতুলতা বলেই মনে হয়। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশ একদিকে ভাঙন ঠেকিয়ে ভূমি রক্ষা করতে পারেনি, অন্যদিকে ভূমি পুনরুদ্ধারে জোরালো কোনো উদ্যোগও নিতে পারেনি। বাংলাদেশের ব্যর্থতার সুযোগটি ভারত ষোলোআনা কাজে লাগাচ্ছে। ভারত শুরু থেকেই বাংলাদেশের ভূমি দখলের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে আসছে। সে প্রতিটি সীমান্ত নদীর দিকে তীর সংরক্ষণ ও বাঁধ-গ্রোয়েন নির্মাণ করে ভাঙন বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সব সীমান্ত নদীই এখন বাংলাদেশ অভিমুখে ভাঙছে এবং ভারত মধ্যে ¯্রােত নীতির দোহাই দিয়ে ওপরে জেগে ওঠা ভূমি দখল করে নিচ্ছে। নদীকে সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত করার সময় মধ্য ¯্রােতকে সীমান্ত রেখা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। নদী ভেঙে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ায় মধ্য¯্রােত রেখায়ও পরিবর্তন ঘটছে। ভারত পরিবর্তিত মধ্য ¯্রােতকে সীমান্ত রেখা হিসেবে গণ্য করছে। ফলে বাংলাদেশের ভূমি এই নিয়মে ভারতের অংশ হয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে মধ্য¯্রােত নীতি আর এখন গ্রহণ করা হচ্ছে না। এর বদলে প্রথম সীমান্ত রেখা হিসেবে যে ম্যধ¯্রােতকে নির্ধারণ করা হয় তাকেই স্থায়ী সীমান্ত হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে। এই নীতি অবলম্বিত হলে বাংলাদেশের ভূমি হারানোর আশঙ্কা থাকত না এবং ইতোমধ্যে যে ভূমি ভারতের দখলে চলে গেছে তা ফেরত পেতেও কোনো বেগ পেতে হতো না। বাংলাদেশ এই বিষয়টি শক্তভাবে তুলে ধরতে পারছে না। এমনকি আন্তর্জাতিক সংস্থায়ও যাচ্ছে না। ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে ভূমি হারাচ্ছে দেশ এবং তা ভারতের দখলভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে পাওয়া ভূখ- এভাবে বেহাত হয়ে যাবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিস্মিত হতে হয় এই ভেবে যে, স্বাধীনতার পর থেকে সীমান্ত নদীর ভাঙন এবং ভূমি হারানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলেও কোনো সরকারই ভাঙন রোধ ও ভূমি রক্ষায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং বিষয়টিকে উপেক্ষা করে গেছে। সরকারের দায়িত্ব দেশের প্রতিইঞ্চি জমির উপর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা। এ দায়িত্ব পালনে সে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে কত সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। কত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপন্ন হয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। সঙ্গত কারণেই এ অবস্থা প্রলম্বিত হতে পারে না, চলতে পারে না। বিশেষভাবে বিচলিত হওয়ার মতো বিষয় এই যে, বর্তমান সরকার, সমালোচকদের ভাষায়, ভারত ভোষণে ও ভারত বন্দনায় অষ্টপ্রহর এতই মশগুল যে, দেশের কোনো স্বার্থ দেখার সময় যেন তার নেই। সরকার এখন ভারতকে দিতে উদারহস্ত এবং এতেই তার অপার সন্তুষ্টি। সীমান্ত নদীর ভাঙন রোধ এবং হৃত ভূমি ফেরত আনার ব্যাপারে তার জোর আগ্রহ থাকার কথা নয়। আলামতেও তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্ত নদীর ভাঙন রোধের কর্মসূচীতে বাজেটে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ কমে যাওয়া এর একটি নজির। আমাদের জানা মতে, ভারতের দখলিকৃত ভূমি উদ্ধারের ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে কোনো ফোরামেই কোনো কথাবার্তা হয়নি। সরকার বিষয়টি আমলে না আনাতেই আলোচনা হয়নি। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিএসএফ বাধা প্রদান করছে, এই বিষয়টি নিয়েও সরকারের কোনো উচ্চবাচ্য নেই। এ রকম উদাসীনতা ও জাতীয় স্বার্থবিমুখতা যে কোনো বিবেচনায় দুর্ভাগ্যজনক।
এ কথা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, দিল্লীর সরকারের সঙ্গে ঢাকার সরকারের একটা একান্ত ও গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দিল্লীতে সরকার পরিবর্তন হলেও এ সম্পর্কের ওপর তার কোনো প্রভাব পড়েনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের প্রতি একমাত্র ভারতই সমর্থন জানায়। এই রাজনৈতিক সমর্থন দান ও তা অব্যাহত রাখার কারণে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা এতটাই কৃতজ্ঞ যে, ভারত যা চাইছে, অবলীলায় তা দিয়ে দিচ্ছেন। এর আগে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর ভারত কথিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা দমনে ভারতের চাওয়া অনুযায়ী কাজ করছেন তারা। এর পর ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট নামে করিডোর সুবিধা দিয়ে দিয়েছেন। ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য মাসুল নির্ধারিত হয়েছে টন প্রতি ১৯২ টাকা। কোর-কমিটি এই মাশুল ১০৫৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল। ১০৫৮ টাকার জায়গায় মাত্র ১৯২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে ভারতের ইচ্ছায়। একে মাসুল ছাড়া ট্রানজিট বলাই যুক্তিসঙ্গত। এ নিয়ে প্রথম দিকে নীরবতা লক্ষ্য করা গেলেও আস্ত আস্তে প্রতিবাদ উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। জনমনেও ক্ষোভ বিস্তার লাভ করছে। সরকার ভারতকে সব সমুদ্র ও নৌ বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দানের আয়োজনও সম্পন্ন করেছে। এভাবে একে একে ভারতের সব চাওয়া সরকার পূরণ করলেও বাংলাদেশ কিন্তু তেমন কিছুই পায়নি। অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি, সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধের নিশ্চয়তা পায়নি, বাণিজ্য অসমতা দূর করতে সহায়তা পায়নি এবং আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প ও টিপাইমুখ বাঁধের ক্ষতির আশংকা থেকে রেহাই পায়নি। এবং বহুল আলোচিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এখন হিমঘরে জায়গা করে নিয়েছে।
কিছু না পেয়েই সরকার খুশি। তার কোনো ক্ষোভ ও বিকার নেই। ইতোমধ্যেই খবর যাওয়া গেছে, ভারত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। টিপাইমুখ বাঁধের কাজ অনেকদিন ধরেই চলছে। বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে যে দু’টি প্রকল্প, তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সরকার টুঁশব্দটি করছে না। অতীতে ভারত বহুবার বলেছে, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু সে করবে না। এ কথা যে নিতান্তই কথার কথা মাত্র, তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না।
জাতীয় স্বার্থের প্রতি সরকারের এ রকম বেনজর কাম্য হতে পারে না। চাইবা মাত্র ভারতকে সবকিছু দিয়ে দেয়ার বিষয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের মনে রাখা উচিত, এই ক্ষোভ-অসন্তোষ এক সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। ভারতেরও খেয়াল রাখা উচিত বাংলাদেশ সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একতরফাভাবে সব কিছু নিয়ে নেয়ার মতলব হাসিলের পরিণতিও শুভকর হতে পারে না। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও স্বার্থ নানাভাবে ক্ষুণœœ ও ব্যাহত হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে জোর অভিযোগ উঠছে তখন সরকারের হুঁশে আসা দরকার অনিবার্য প্রয়োজনেই আজ জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং সংববদ্ধ উদ্যোগ-পদক্ষেপই কেবল জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, স্বার্থ নিরাপদ ও নিশ্চিত করতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন