শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

অস্তিত্ব সঙ্কটে যমুনা

আবু কওছার, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

শ্যামনগরের একসময়ের প্রমত্তা যমুনা নদীর শেষ অংশটুকুও দখল করলেও দেখার কেউ নেই। স্থানীয়রা প্রতিদিন জমির অগ্রভাগ দাবি করে একট্ ুএকটু করে যমুনাকে গিলে ফেলছে। জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসন কারও কোন মাথা ব্যাথা নেই। 

কদাচিৎ প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি বা পরিবেশ সচেতন ব্যক্তি যমুনা দখলকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও অজ্ঞাত কারণে কর্তৃপক্ষের নীরবতার সুযোগে ভ‚মিদস্যুরা অব্যাহতভাবে দখল বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে শ্যামনগরের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত আদি যমুনার বিভিন্ন অংশ ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারি এসব জায়গা দখলের পর তা নাকি রীতিমত লাখ লাখ টাকায় হাত বদলও হচ্ছে। সামগ্রিক বিষয়ে পাউবো কর্তৃপক্ষ অবহিত থাকার পরও তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসব জায়গা উদ্ধারে কোন উদ্যোগই নিচ্ছে না।
উল্লেখ্য শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদী ছিল এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। তাছাড়া এলাকার পানিবদ্ধতা দূরিকরণে দীর্ঘসময় ধরে এ নদীটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসলেও গত কয়েক দশকে প্রভাবশালীদের দখল বাণিজ্যে মৃতপ্রায় নদীটি সরু খালে পরিনত হয়েছে। দখলদারদের আগ্রাসনে কালের স্বাক্ষী যমুনা এখন পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, দখলদারদের অব্যাহত অপতৎপরতায় গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে শ্যামনগর সদরসহ আশপাশের এলাকায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। গোটা বর্ষা মৌসুম ধরেই উপজেলা পরিষদ এলাকা, হাসপাতাল ও নকিপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, উত্তর বাদঘটা, নকিপুর বাজার, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, নকিপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাছড়াহাটিসহ আশপাশের বহু এলাকা দীর্ঘ সময় ধরে পানিতে নিমজ্জিত থাকে।
আবুল খায়ের ও আজিজুল ইসলামসহ অনেকেরই দাবি যমুনা অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় বর্ষার সময় সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন অংশ একে অপরটি থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কেবলমাত্র পানিবন্দী অবস্থার সৃষ্টি হওয়াতে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, নিশ্চিহ্ন হওয়ার অপেক্ষায় থাকা যমুনার চর ও পাড়ে শ’ শ’ স্থাপনা গড়ে তুলেছে স্থানীয়রা। কেউ কাঁচা আবার কেউ পাকা ইমারত নির্মাণ করে দিব্যি দখল করে রাখার পাশাপাশি পাশবর্তী অংশে নতুন করে মাটি ভরাট করে সীমানার আয়তন বাড়িয়ে নিচ্ছে। অনেকে আবার যমুনা পাড়ের একাধিক স্থানে স্থাপনা নির্মাণ করে তা ভাড়া দেয়ার পাশাপাশি এক থেকে দেড় দুই লাখ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাদঘাটা গ্রামের কয়েকজন জানান, সম্প্রতি জহুর গাজীল ছেলে একব্বার গাজী যমুনা পাড়ে তার দখলে থাকা জমি জনৈক রুবেল মিয়ার কাছে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। পরবর্তীতে রুবেল মিয়া সেখানে একতলা আলিশান বাড়ি তৈরী করে বসতি গড়ার পর বিল্ডিং বাড়ির পাশে মাটি ফেলে যমুনার আরও কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে।
স্থানীয়দের আরো অনেকে জানান, যমুনা রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও উক্ত দপ্তরের একটি মানুষও গত এক দশকে যমুনা দখলকারীদের বিরুদ্ধে তৎপরতা দেখায়নি। যার ফলে অতি উৎসাহী হয়ে সময়ের স্বাক্ষী প্রমত্ত¡া যমুনা সম্পূর্নভাবে গিলে খেতে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা বিনা বাঁধায় অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
জাহিদুল ইসলাম ও হাফিজুর রহমানসহ অনেকে অভিযোগ করেন, স্থানীয় একটি ভূমিদস্যু গ্রæপ অর্থের বিনিময়ে যমুনা পাড়ে বসবাসরতদের একাধিক জাল কাগজ তৈরি করে দিয়েছে। এসব কাগজকে পুঁজি করে যমুনাকে গিলে খাওয়ার প্রতিযোগীতায় সামিল ব্যক্তিরা সরকারি এসব জমি স্ট্যাম্প এর উপর লেখালেখি করে বেঁচা বিক্রি করছে।
কয়েকটি চক্র ইতিপূর্বে ইউনিয়ন তহশীল অফিস সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে যমুনার উপর বন্দোবস্তসুত্রে পাকা স্থাপনা তৈরি করেছে বলেও জানায় স্থানীয়রা। এসব দখলবাজ ভূমিদস্যুদের অপতৎপরতার কারণে আদি যমুনা এখন অনেক জায়গায় বদ্ধ পুকুরে পরিনত হয়েছে বলেও দেখা মেলে।
এ বিষয়ে যমুনা বাঁচাও আন্দোলন কমিটির নেতা সাবেক অধ্যক্ষ আশেকই এলাহী বলেন, শ্যামনগর সদরের পানিবদ্ধতা দূরিকরণে চন্ডিপুর থেকে শ্মশ্মানঘাট পর্যন্ত যমুনা খনন খুবই জরুরি।
আদি যমুনার শেষ চিহ্ন রক্ষার জন্য অতিসত্ত¡র চন্ডিপুর এলাকা থেকে শ্মশ্মানঘাট পর্যন্ত যমুনাকে দখলমুক্ত করে তা পুনঃখননের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীসহ জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এলাকাবাসী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন