শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

এবার সাড়ে ১৪ কোটি টাকার চাপে জাবি ভিসি

জাবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

‘দুই কোটি টাকা ছাত্রলীগকে ঈদ সেলামি হিসেবে দেয়া হয়েছে’ এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর চরম চাপে পড়েন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তার অপসারণের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। আন্দোলনের মুখে এক পর্যায়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ^বিদ্যালয় ও হল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় সিন্ডিকেট। তবে গত ৫ ডিসেম্বর থেকে ক্যাম্পাস খুলে দেয়া হয়। এমন অবস্থায় গণমাধ্যমে নতুন খবর বের হয়েছে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলমান তিনটি ছাত্রী হলের নির্মান কাজে সাড়ে ১৪ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে’। এই খবরে নতুন চাপে পড়েছেন ভিসি। ফের নতুন উদ্যেমে আন্দোলনে নেমেছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টারজান পয়েন্ট এলাকা থেকে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সড়ক পদক্ষিণ করে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান মেয়েদের তিনটি হলের কাজ থেকে সাড়ে ১৪কোটি টাকা গায়েব হয়েছে। আসলেই সেই টাকা গায়েব হয়েছে, নাকি কারও পকেটে গিয়ে ঢুকেছে? আমরা বলতে চাই বরাবরের মতো বিগত প্রত্যেকটি চুরি, লুটপাট ও সিডিউল ছিনতাই সহ কয়েকটি ঘটনার যেমন বিচার হয়নি, তেমনি এই সাড়ে ১৪কোটি টাকা গায়েবের ঘটনার বিচার না হলে জাহাঙ্গীরনগর আবার উত্তাল হবে।’
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনের সংগঠক ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘আমরা কতজন এই দুর্নীতির বিরোধিতা করছি তা বিষয় নয়। আপনি একজন ভিসি বা অভিভাবক হিসেবে ব্যর্থ। তদন্ত প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান রেখে আপনি সাময়িকভাবে সরে যান। আর নয়তো যতক্ষণ না আপনার অপসারণ হবে ততক্ষণ এই আন্দোলন জারি থাকবে।’

প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য গত বছরের ২৩ অক্টোবর ১৪৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী পরিষদ (একনেক)। এই প্রকল্পের অধীনে এক হাজার আসন বিশিষ্ট ছেলেদের ৩টি ও মেয়েদের ৩টি হলের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে ইতিমধ্যে মেয়েদের ৩টি হলের (১৭, ১৮ এবং ১৯নং হল) কাজ শুরু হয়েছে। এই হলগুলোর মহাপরিল্পনার সিডিউলের সাথে তিন জায়গায় অসঙ্গতির লক্ষ করা গেছে। এই কারণে সাড়ে ১৪ কোট টাকার হিসাব পাওয়া যাচ্ছেনা। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী- ছেলে ও মেয়েদের জন্য ৬টি ১০ তলা বিশিষ্ট আবাসিক হলের ফাইন্ডেশন হবে পাইল ফাউন্ডেশন পদ্ধতিতে, প্রতিটি হলের নিচতলা সহ অন্যান্য সব তলায় থাকবে গ্যাস সংযোগ এবং প্রতিটি হলেই থাকবে আলাদা সীমানা প্রাচীর। তবে এর ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে নির্মাণাধীন তিনটি হলের কাজের সিডিউলে। সরেজমিনে নির্মাণাধীন এলাকা ঘুরে ডিপিপি’র সাথে কাজের মিল পাওয়া যায়নি। পাইল ফাউন্ডেশনের বিপরীতে ম্যাট ফাউন্ডেশনে নির্মাণ হচ্ছে হল তিনটিতে।

ডিটেইলস প্রজেক্ট প্ল্যান (ডিপিপি) অনুসারে, মেয়েদের তিনটি আবাসিক হল দুই হাজার ২২৫ বর্গ মিটার ফাউন্ডেশনের উপর নির্মাণ করা হবে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী, পাইল ফাউন্ডেশনে প্রতি বর্গ মিটারের খরচ ধরা হয় ৪০ হাজার ৫৩৩ টাকা আর ম্যাট ফাউন্ডেশনে খরচ ধরা হয় ২৮ হাজার ৭৫২ টাকা। পাইল ফাউন্ডেশন অনুযায়ী প্রতিটি হলের জন্য এতে মোট খরচ হওয়ার কথা ৯ কোটি ১লাখ ৮৬হাজার টাকা। অন্যদিকে ম্যাট ফাউন্ডেশন অনুযায়ী কাজ করলে খরচ হবে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। এর ফলে প্রতিটি হলের ফাউন্ডেশনেই ২ কোটি ৬২ লাখ ১৩ হাজার করে ৩টি হলে মোট ৭ কোটি ৮৬ লাখ ৩৮ হাজার ১৭৫ টাকা কম খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু এ টাকার কোন হদিস মেলেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের শিডিউলে।

ডিপিপি অনুযায়ী প্রতিটি হলের নিচতলার গ্যাস সংযোগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে সাত লাখ ৭৯ হাজার টাকা এবং অন্যান্য তলার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৪ লাখ ৮৯ হাজার। কিন্তু নির্মাণাধীন তিনটি হলের শিডিউলে গ্যাস সংযোগের কথা উল্লেখই নেই। এছাড়া প্রতিটি আবাসিক হলের সীমানা প্রাচীরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক কোটি ৮৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা। নির্মাণাধীন তিনটি হলের কোন সিডিউলেই এই সীমানা প্রাচীর তৈরীর কথা বলা হয়নি।

ডিটেইলস প্রোজেক্ট প্ল্যান (ডিপিপি) অনুযায়ী মেয়েদের প্রতিটি হলের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৭ কোটি ২৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা। তবে এই হলের কাজের শিডিউলে অসংগতি ও কাজের ঘাটতি দেখানোর পরেও শিডিউলে মোট খরচ দেখানো হয়েছে ৭৭ কোটি ২৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

এসব বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. নাসির উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা ও ডিপিপি’র নিয়ম মেনেই কাজ হচ্ছে। গ্যাস সংযোগ তো থাকতেই হবে। আর পাশাপাশি অবস্থিত প্রতিটি হলে সীমানা প্রাচীর দিলে ঘিঞ্জি দেখা যেতে পারে। কোন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কাজ না করে টাকা নিতে পারবে না। ফাউন্ডেশনের কাজ পাইল না ম্যাট পদ্ধতিতে হবে সেটা নির্ভর করবে মাটির পরীক্ষার পর। যেহেতু আমাদের মাটি ভাল তাই পাইল করার প্রয়োজন নেই।’ ডিপিপি অনুযায়ী পাইল, প্রাচীর ও গ্যাস সংযোগের কাজ না দেখিয়েও বরাদ্দের সব টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘শিডিউলে এ কাজগুলো দেখানো উচিত ছিল। হয়তো আমাদের একটু ভুল হয়েছে। তড়িঘড়ি করে কাজ করতে গিয়ে এমনটা হয়েছে।’ প্রকল্পের নিয়োগপ্রাপ্ত কনসালটেটিভ ফার্মের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু মাটি পরীক্ষার পর পাইলের প্রয়োজন হচ্ছে না তাই আমরা ম্যাট ফাউন্ডেশনেই কাজ শুরু করেছি। তবে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান যে পদ্ধতিতে কাজ করবে সে পদ্ধতির ব্যয়ের টাকাই দেওয়া হবে।’

আর্থিক অনিয়মের আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘যদি টাকা বেঁচে থাকে তাহলে সে টাকা সরকার পাবে।’

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
MA Hossain ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
১৪ কোটির চাপ উপর থেকে আসতেছে নাকি ...?
Total Reply(0)
Nurul Islam ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
নারী উন্নয়নের রোলমডেল!!
Total Reply(0)
Rekha Akter ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
ওর ব্যাপারে আমার রুচিতে কোনো কিছু লেখার ইচ্ছে হচ্ছে না
Total Reply(0)
Mohd Islam ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
ভিসি র হাতে শত শত কোটি টাকা খরচের জন্য ক্ষমতা দিলে । যে কেউ চাইলেই চুরি করবে, কারণ জীবনে কখনো এত টাকা দেখেনি, তাই শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হোক- শিক্ষকতায়, টাকা পয়সা নয় । এই মহিলা দেখতেই চুরের মত লাগছে । এর উপর আওয়ামী শিক্ষক
Total Reply(0)
Mayin Uddin ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
নিশ্চয়ই আল্লাহ যা করেন বান্দার ভালোর জন্যই করেন ওদের সবকিছু দিনদিন পরিস্কার হচ্ছে
Total Reply(0)
Muslim Hossain ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ, মানুষের অবয়বে মিলে !
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন