উপজেলা হয়ে পৌঁছাচ্ছে রাজধানী পর্যন্ত
বিয়ানীবাজার (সিলেট) উপজেলা সংবাদদাতা
পবিত্র রমজান মাসেও বিয়ানীবাজারের সীমান্ত এলাকায় চলছে জমজমাট মাদক বাণিজ্য। ভারতীয় কতিপয় মাদক ব্যবসায়ীর সহায়তায় দুবাগ ইউনিয়নের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা নিরাপদে চালিয়ে যাচ্ছে এই ব্যবসা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গজুকাটা সীমান্তসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ও কুশিয়ারা নদীপথে আসা ভারতীয় মাদকদ্রব্য এলাকার মাদক সেবীদের চাহিদা মিটিয়ে পার্শ¦বর্তী জেলা ও উপজেলায় পাচার করছে চক্রটি। স্থানীয় সীমান্তরক্ষী বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে প্রতিদিন গজুকাটা এলাকা দিয়ে মাদক প্রবেশ করছে এ নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সচেতন মহল এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, মাদক ব্যবসা ও পাচার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনই ব্যবস্থা না নিলে যুবসমাজ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি দুবাগ ইউনিয়নের গজুকাটা এলাকায় গিয়ে চোখে পড়ল এক ভয়াবহ চিত্র। গজুকাটা মসজিদের সন্নিকটের রাস্তায় উপস্থিত হতেই এক যুবক কাছে চলে আসল। নাম মঞ্জুর, পরিচয় দিয়ে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বলে জানায়। বাংলাদেশ সীমান্তে অবাদে চলাফেরা প্রসঙ্গে জানায়, আমরা ৪০/৪৫ পরিবার কাঁটাতারের ভেতরে বসবাস করায় বিজিবি আমাদের কোনো প্রকার হয়রানি করে না। মঞ্জুর জানালেন, তারা ভারতীয় ও বাংলাদেশীরা একত্রেই বসবাস করছেন। সামান্য বাঁশের বেড়া দিয়েই সীমানা নির্ধারণ রয়েছে এখানে। তাই তারা অবাধে যাতায়াত করতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। তবে ভারতীয়রা পার্শ¦বর্তী দুবাগ বাজারে গিয়ে সওদা কিনে আনতে পারলেও বাংলাদেশীরা কাঁটাতারের বেড়া পাড়ি দিয়ে ভারত যেতে পারেন না বলে মঞ্জুর জানান। কথা বলার একপর্যায়ে মঞ্জুর কিছু লাগবে কিনা জানতে চাইলেন। কি কি আছে জানতে চাইলে জানালেন, সব ধরনের মদ, ফেনসিডিল তাদের কাছে আছে। দাম কত জানতে চাইলে জানালেন, আমরা ভারতীয় দামে বিক্রি করি। পাশের একটি বাংলাদেশী ঘর দেখিয়ে বলল ওইঘর থেকে কিনলে ডাবল টাকা লাগব। মদের বোতল দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করলে তিনি বেশ ক’ বোতল মদ নিয়ে এলেন, একেক বোতল মদের দাম একেক রকম জানালেন। এও বললেন, বেশি দাম দিলে নতুন ব্র্যান্ডের মদ তার কাছে রয়েছে। এ সময় গজুকাটা এলাকার ক’জন যুবক ও একজন ইউপি সদস্য এসে হাজির হলেন। তার সামনেও এই প্রতিবেদকের পরিচয় পাওয়ার পরও মঞ্জুর কোনো ধরনের ভয় না পেয়েই অকপটে ব্যবসার কথা বলছে। যখন মদ কিনব না জানালাম তখন সে অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে চলে গেল। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গজুকাটা এলাকার ভারতীয় নাগরিক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ফকির আলীসহ এখানে বসবাসকারী অধিকাংশ পরিবার বিভিন্ন ধরনের মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। ভারত থেকে মাদকদ্রব্য এনে তাদের বাড়িতে স্টক করে বাংলাদেশী মাদক ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দিচ্ছে। সম্প্রতি একজন মাদক ব্যবসায়ী ব্যবসা নিরাপদ করার জন্য ভারতীয় এক মাদক ব্যবসায়ীর মেয়েকে বিয়ে করারও তথ্য বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় ও বাংলাদেশীরা একই এলাকায় পাশাপাশি বসবাস করায় নিরাপদে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয়দের পাচার করা মাদককে কেন্দ্র করে শুধুু দুবাগ এলাকায় প্রায় ৩৫/৪০ জন মাদক ব্যবসায়ী নিরাপদে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্রটি জানায়, মাঝেমধ্যে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ দুবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য উদ্ধার করলেও থানা পুলিশের দালাল ‘ক’ অধ্যাক্ষরের ব্যক্তির সাথে কপিতপয় মাদক ব্যবসায়ীর যোগাযোগ থাকায় তারা ওই ব্যক্তির মাধ্যমে লিয়াজোঁ করে নিরাপদে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, কুশিয়ারা নদীপথে নৌকা দিয়ে এবং শেওলা জিরো পয়েন্ট দিয়ে সিএনজি কিংবা অন্য বাহন দিয়ে নিয়মিত মাদক পাচার করছে মাদক পাচারকারী চক্র। ভারত থেকে সীমান্তপথে আসা এসব মাদক বিভিন্ন পথ ঘুরে রাজধানী পর্যন্ত পৌঁছে বলে সম্প্রতি পুলিশের হাতে আটক কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন। এদিকে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে বিজিবি থাকলেও মাদক উদ্ধারে তাদের নেই কোনো কার্যকর ভূমিকা। তাই সীমান্ত এলাকা এখন মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ স্থান বলে পরিচিতি পাচ্ছে। এ নিয়ে বিজিবি ৫২’র সিইও কর্নেল মো. নিয়ামুল কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি এখানে নতুন যোগদান করেছেন। বিষয়টি সম্পর্কে তিনি খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দেন। এ প্রসঙ্গে বিয়ানীবাজার থানার ওসি (তদন্ত) আবুল বাশার মো. বদরুজ্জামান বলেন, পুলিশ মাদক উদ্ধারে সক্রিয় রয়েছে। ইতোমধ্যে ওই এলাকা থেকে বেশকিছু মাদকের চালানও পুলিশ আটক করেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন