সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে গতকালও ভারতজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল রাজধানী দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থান। আসামের গুয়াহাটিতে বিক্ষোভে গুলিবিদ্ধ আরও তিন জনের মৃত্যু। এই নিয়ে আসামে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হল পাঁচজনের। খবর টিওআই, এনডিটিভি ও ইন্ডিয়া টুডে।
গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজের সুপার রমেন তালুকদার জানিয়েছেন, শনিবার রাতেই এক গুলিবিদ্ধের মৃত্যু হয়। আরও দুইজনের মৃত্যু হয় রোববার সকালে। এছাড়া, এনআরসি আতঙ্কে জামালপুরের তেলেগ্রামে শিপ্রা শিকদার (৩৪) নামে এক নারী আত্মহত্যা করেন। এ দিন মুম্বাইয়ে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সামিল হন বলিউডের চিত্রনির্মাতা মহেশ ভাট। তিনি বলেন, ‘এই দেশটা যে সবার, সেই বার্তা দেওয়ার সময় এসেছে। সবাইকে জোটবদ্ধ হতে হবে।’
বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভের মাঝেই এ দিন অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে রাজধানী। পরপর বাসে আগুন ধরিয়ে দিল বিক্ষোভকারীরা। চলে ভাঙচুর। বিক্ষোভে যোগ দেন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ছাত্ররা। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির মথুরা রোড এলাকায় পরপর গাড়ি ও বাসে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে যায় দমকলের চারটে ইঞ্জিন। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ছাত্ররা বিক্ষোভে অংশ নিলেও তারা বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেয়, ‘আমাদের প্রতিবাদ যাতে অহিংস ও শান্তিপূর্ণ থাকে, আমরা বরাবর সেই চেষ্টা করি।’ এই ঘটনার পর ডিএনডি থেকে মহারানিবাগ ফ্লাইওভার ও কালিন্দী কুঞ্জ যাওয়ার পথে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদের জেরে সুখদেব বিহার, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, ওখলা বিহার ও যশোলা বিহার শাহিন বাগ মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দিল্লি মেট্রোর পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, আপাতত এই স্টেশনগুলিতে ট্রেন দাঁড়াবে না।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভ আরও চরম আকার নিচ্ছে। রোববার স্টেশন-ট্রেন ভাঙচুর, আগুন, পুলিশকে ইটবৃষ্টির সাক্ষী থাকল বাংলা। রাস্তা ও রেল অবরোধে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। বাতিল করতে হয়েছে বহু ট্রেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খড়গপুর ডিভিশনে বিভিন্ন স্টেশনে বিক্ষোভের জেরে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে রেলের।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে শুক্রবার অশান্ত হয়েছিল হাওড়ার উলুবেড়িয়া, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা। গতকাল দক্ষিণ ২৪ পরগনার আকড়া স্টেশনে দুটি ট্রেনে ভাঙচুর হয়। তছনছ করা হয় টিকিট কাউন্টার। রেললাইনের উপর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে, তাদের লক্ষ করে ইটবৃষ্টি করা হয়। আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। নুঙ্গি ও আকড়া স্টেশনের মাঝে চলে অবরোধ। বন্ধ হয়ে যায় শিয়ালদহ-বজবজ শাখার আপ ও ডাউন লাইন। উত্তর ২৪ পরগনায় আমডাঙার কাছে জাতীয় সড়ক আটকে গাড়ি ও বাস ভাঙচুর হয়। আহত হন অনেক মানুষ। ছাড় পায়নি অ্যাম্বুল্যান্সও।
পরিস্থিতি দেখে বারবার আন্দোলনকারীদের শান্ত-সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশেষে হিংসা রুখতে কড়া পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। আসামের পর এবার পশ্চিমবঙ্গের মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, হাওড়ায় বন্ধ করে দেয়া হল ইন্টারনেট পরিষেবা। বারাসাত মহকুমা, বসিরহাট মহকুমা, বারুইপুর ও ক্যানিং মহকুমাতেও বন্ধ করা হচ্ছে ইন্টারনেট। এ বিষয়ে রাজ্যসরকারের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার বারবার বলা সত্বেও কিছু বহিরাগত অন্যদের ফাঁদে পা দিয়ে অশান্তি করছে। নিরুপায় হয়ে সরকারকে কিছু এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ করতে হচ্ছে।
জেলায় জেলায় অবরোধ বিক্ষোভ ক্রমেই হিংসাশ্রয়ী হয়ে ওঠায় কঠোর অবস্থান নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিবাদের নামে যথেচ্ছ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, রাস্তা অবরোধ যারা করবে তাদের কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে কড়া বিবৃতি দিয়েছেন মমতা। অশান্তি ছড়ানোর ইঙ্গিত আসতেই কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত থেকে বিশেষ আমাদের সংবাদদাতা জানিয়েছেন, এনআরসি আতঙ্কে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তের ওপারে আসছেন বাংলাভাষীরা। সীমান্ত সূত্র বলছে, বিএসএফ তাদের এপারে ঢোকার ব্যাপারে সহায়তা করছে। রোববারও ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তপথে ৬জনের অনুপ্রবেশ ঘটে। বিজিবি তাদের আটক করে মহেশপুর থানায় হস্তান্তর করেছে।
ঝিনাইদহ সংবাদদাতার বরাতে তিনি জানান, ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের সময় ৬ জন অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে বিজিবি। এনিয়ে বিজিবির হিসাব মতেই ডিসেম্বর মাসে ৬১ জনকে আটক করা হয়।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ মহেশপুর উপজেলার সস্তার বাজার এর সামনে রাস্তার উপর হতে (ভৈরবার নিকট) তিন পুরুষ ও দুই শিশু সন্তানসহ এক নারীকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আটক করা হয়।
৫৮ বিজিবির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খাঁন জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধ্যাদেশ ১৯৭৩ এর ১১ (১) (গ) ধারায় মামলা করে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন