১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে চলে যান বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সিরাজুল হক সিরাজ। যোগ দেন মুজিব বাহিনীর গেরিলা দলে। ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর ময়মনসিংহের পলাশকান্দা গ্রামে যুদ্ধের সময় আহত অবস্থায় পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন সিরাজ। পরে ক্যাম্পে নিয়ে পাকবাহিনী তাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর ৪৮ বছর কেটে গেলেও শহীদ সিরাজের মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র এবং শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা পায়নি তার পরিবার। এ নিয়ে সিরাজের ছোট ভাই একেএম এমদাদুল হক আক্ষেপ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জানা যায়, ভারতীয় লাল মুক্তিবার্তা ও বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একেএম সিরাজুল হকের নাম তালিকাভুক্ত আছে। তালিকাভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, লাল মুক্তিবার্তা ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একেএম সিরাজুল হকের নাম রয়েছে। তার লাল মুক্তিবার্তা ক্রমিক নং ০১১৫১০৩২৪ ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে ক্রমিক নং ৫০৪৮।
একেএম সিরাজুল হক সিরাজের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামে। তার বাবা মৃত মনফর উদ্দিন। মাতা মৃত ফিরুজেন্নসা। ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সিরাজ ছিলো সবার বড়।
সরজমিনে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে চলে যান সিরাজ। যোগদেন মুজিব বাহিনীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের দলে। ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর মুজিব বাহিনীর কমান্ডার মো. মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা দল ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী পাক হানাদার বাহিনীর কনভয়ে হামলা করার জন্য গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জের সীমান্তবর্তী পলাশকান্দা গ্রামে অবস্থান নেন। প্রায় ৪০ সদস্যের মুজিব বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা দলে ছিলেন একেএম সিরাজুল হক।
মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জানতে পেরে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে পাকহানাদার রাজাকার ও আলবদরের সম্মিলিত বাহিনী পলাশকান্দা গ্রামে মুজিব বাহিনীর ওপর আক্রমণ করে। এ সময় যুদ্ধরত অবস্থায় জসিম উদ্দিন হানাদার বাহিনীর ব্রাশ ফায়ারে শহীদ হন। আহত অবস্থায় হানাদারের হাতে ধরা পড়েন আনোয়ারুল ইসলাম মনজু, মতিউর রহমান ও একেএম সিরাজুল হক। ধরা পড়া তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে হানাদার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে ব্রক্ষপুত্র নদীর চরে তাদের চোখ বেয়নট দিয়ে খুচিয়ে ওপড়ে ফেলে তারপর হত্যা করে।
গত রোববার সকালে বোকাইনগর ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শহীদ সিরাজের পাকা বাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রয়োজনীয় সংষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাড়িটি জঞ্জাল ও আবর্জনা জমে নোংরা হয়ে গেছে।
বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখতে আগমন ঘটে সিরাজের ছোট ভাই এমদাদুলের। পাকা বাড়ির পরিত্যক্ত ১টি ঘর দেখিয়ে তিনি বলেন, সিরাজ ভাই এ কক্ষেই থাকতো। এখন এখানে আর কেউ থাকে না। ভাইয়ের শহীদ হওয়ার খবর পেয়ে ব্রক্ষপুত্র নদের পাড়ে ১৭দিন ছিলাম। লাশ দেখলেই মনে হতো এটা বুঝি ভাইয়ের লাশ। কিন্তু ভাইয়ের লাশটাও আর পাইনি। আর স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এসেই ভাইয়ের শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র পাইনি। মেলেনি সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধাও।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন