শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রী নিবাসে স্কুল চলাকালে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ আবু মুসা, জয়পুরহাট থেকে

জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী নিবাসকে পরিত্যক্ত দেখিয়ে ছাত্রীদের জিম্মি করে স্কুলের পাশে ওই ভবনেই স্কুল চলাকালে চলছে কোটি টাকার রমরমা অবৈধ কোচিং বাণিজ্য। জেলা সদরের একমাত্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কিছু প্রভাবশালী ও অর্থলোভী শিক্ষক ৫ শতাধিক ছাত্রীকে জিম্মি করে অবৈধ কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রভাবশালী ওই শিক্ষকরা স্কুল চলাকালীন সময়ে স্কুলের পাশেই আবাসিক ভবনে প্রতি শিফটে ৫টি আবাসিক কক্ষে গাদাগাদী করে শ্রেণি কক্ষের মত অবৈধ কোচিং বাণিজ্য করছেন কিছু শিক্ষক। সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায় আবাসিক হলের প্রতিটি কক্ষে গোয়াল ঘরের মত গাদাগাদি করে প্রায় ৬০/৭০ জন ছাত্রীকে নিয়ে ক্লাশ করছেন কতিপয় শিক্ষক। পাঠদান চলাকালীন শ্রেণি সময়ের মধ্যে কোন শিক্ষকের কোচিং করানোর উপর বিধিনিষেধ থাকলেও ওই বিদ্যালয়ের এক শ্রেণির শিক্ষক পরিচালনা করছে কোচিং বাণিজ্য। যদি আবাসিক হল পরিত্যক্ত হয় তবে ওই হলে ছাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বে¡ও কেন কোচিং করানো হচ্ছে এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি প্রতিষ্ঠান প্রধান মো. আমান উদ্দিন মন্ডল। নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি ছাত্রীর নিকট থেকে সর্বসাকুল্যে সর্বোচ্চ ১২শ টাকা নেয়ার কথা বলা হলেও মাত্র ৫ বিষয়েই ২হাজার ৫শ’ টাকা নেয়া হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের দেয়া তথ্যমতে ২০১০ সাল থেকে দিবা শিফটের ছাত্রীদের সকাল ৭ টা থেকে ১১ টা এবং সকাল শিফটের ছাত্রীদের বেলা ১২টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত কোচিং করানো হয়। অভিভাবক ও ছাত্রীদের অনিচ্ছা সত্ত্বে¡ও পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার এবং শিক্ষকদের হাতে থাকা নাম্বার কম দেয়া হবে এই ভয় দেখিয়ে ছাত্রীদের কোচিং করতে বাধ্য করানো হয়। নীতিমালায় অতিরিক্ত ক্লাশের জন্য অভিভাবক ও ছাত্রীদের আবেদনের কথা বলা থাকলেও কোন আবেদন দেখাতে পারেননি প্রধান শিক্ষক বা কোচিং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। কোচিং বাণিজ্যের সুবিধার্থে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে মাত্র ৩ ঘণ্টা কাজ করছেন। বাকি সময় নিজেদের আখের গোছাতে কোচিং বাণিজ্য নিয়ে পরে থাকছেন। এছাড়াও ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ ওই বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ করে দেয়ার লোভ দেখিয়ে নভেম্বর/ডিসেম্বর মাসে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু কোমলমতি শিশু ও তাদের অভিভাবকদের নিকট থেকে কোচিংয়ের নামে হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা। কোচিং পরিচালনাকারী ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ভর্তি পরিক্ষায় নিজেরাই ইনভিজিলেটর হিসেবে নিযুক্ত থাকা অবস্থায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনৈতিক সাহায্য দিয়ে থাকেন। ফলে ভর্তিচ্ছু সকল শিক্ষার্থীই হুমরি খেয়ে পরে ওই সব কোচিং সেন্টারগুলোতে। জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমান উদ্দিন মন্ডল বলেন, কোচং হয় আমি জানি তবে এ ব্যাপারে কোন বিধি নিষেধ কিংবা কোন নিয়ম আমার জানা নেই। কোচিং এর কোন টাকা পয়সা জমা বা এ সংক্রান্ত কোন কিছু আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই তবে স্কুল চলাকালে স্কুলের পাশে আবাসিক ভবনে কোচিং করানো একটা গর্হিত কাজ। এটা তারা করতে পারে না। ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক আঃ রহিম বলেন, কোচিংয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই, এভাবে স্কুলের নিকটবর্তী আবাসিক হলে কোচিং করানো আইন পরিপন্থী। এ ব্যাপারে রাজশাহী উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের স্কুল ইন্সপেক্টর দেবাশীষ রঞ্জন রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্কুল টাইমে কোনভাবেই কোন শিক্ষক কোচিং করাতে পারবেন না। এর কোন ব্যতিক্রম ঘটলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন