সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বর্ণিল সাজে সেজেছে ফুলবাড়ীর ঈদ মার্কেটগুলো

প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. আবু শহীদ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) থেকে

রমজান শেষে আসছে খুশির ঈদ, খুশির এই ঈদকে একটু আলাদা আঙ্গিকে সাজানোর প্রাণপণ প্রচেষ্টা থাকে মুসলিম উম্মাহ্র সকলের মাঝে। তাইতো ঈদের আনন্দকে সাজিয়ে নিতে ফুলবাড়ীর দোকানগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে, কিন্তু ঈদ ঘনিয়ে আসলেও ফুলবাড়ীতে এখনো ঈদ মার্কেট পুরোপুরি জমে উঠেনি। অন্যান্য বছর যেমন রমজানের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাজারে কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়, এবার তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। ১৭/১৮ রোজা অতিবাহিত অথচ এখনো ফুলবাড়ীর মার্কেটগুলোতে ঈদের কেনাকাটায় তেমন ভিড় দেখা যায়নি। তবে কাটা কাপড়ের দোকানে রোজার প্রথম সপ্তাহ থেকেই কেনাকাটা শুরু হয়েছে। বর্তমানে পৌর বাজারের সব ধরনের দোকানে বেচাকেনা পুরোদমে শুরু না হলেও ধীরে ধীরে অবস্থা ভালোর দিকে এগুচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। অথচ অন্যান্য বছর এ সময়টায় ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম থাকত শহরের বিপণি-বিতানগুলো। গত বছরের তুলনায় এবার কাপড় জুতাসহ সব রকমের আইটেমের দাম বেশি বলে ভুক্তভোগী ক্রেতাসাধারণ অভিমত প্রকাশ করেছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্রেতা একেবারেই কম থাকে, তবে ইফতারির পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দোকানগুলোতে শিশুদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং ফুলবাড়ী ও আশপাশের এলাকায় পুরোদমে রোপা আমন চাষ শুরু না হওয়ার ফলে দিনমজুরদের হাতে এবার টাকা-পয়সা নেই বলে অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে। আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠাগুলোর সময়মত বেতন-বোনাস না থাকায় মানুষজন এখনো ঈদের কেনাকাটায় মনোযোগ দিতে পারেনি আর তাই দোকানগুলোতে ক্রেতাদের তেমন ভিড় নেই বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। এবার ফুলবাড়ী বাজারে শাড়ি, থ্রি-পিস, সালোয়ার-কামিজ, জিন্স প্যান্ট, টি-শার্ট প্রভৃতি কাপড়ের আইটেমসহ রয়েছে রকমারি জুতা-স্যান্ডেলের সমাহার। বাচ্চাদের কাপড়ের মধ্যে গত বছরের আকর্ষণীয় ডিজাইন ও বাহারি কাপড়ের সমাহার তো আছেই আবার নিত্যনতুন নামের চমক রয়েছে অনেক আইটেমের কাপড়ে। তবে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘হোম টেক্স’ থ্রি-পিস ক্রয়ে পাগল হয়ে উঠেছে। এই থ্রি-পিস ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও এবার বাজারে এসেছে গাউনের জামা, ফ্লোর টার্চ, তানশী থ্রি-পিস, পাজোসহ বাহারি ডিজাইনের পোশাক। তবে তরুণ-তরুণীরা এবার গাউনের জামার প্রতিই বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। তবে দাম বেশি হওয়ায় এসব পোশাক সব ধরণের ক্রেতা কিনতে পারছেন না বলে আফসোস করে ফিরে যাচ্ছেন। ১ বছরের শিশু থেকে ১২/১৪ বছরের বাচ্চাদের ১ সেট পোশাক বিক্রি হচ্ছে ৬’শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে পাঞ্জাবির পাশাপাশি ট্রাউজার ও চুড়িদার পায়জামা বিক্রি হচ্ছে বেশি। এবার পাঞ্জাবির বাজারে সুতি পাঞ্জাবির চাহিদাই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পাঞ্জাবির মধ্যে পুষ্পকলি, জিপসী, অক্টোপাস, মাসাককালী প্রভৃতির চাহিদা রয়েছে। নেকসাস ফ্যাশনের মালিক শিবলী সাদিক জানান, এখনো পুরোদমে বেচা-কেনা শুরু না হলেও ক্রমান্বয়ে বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। ক্রেতারা মার্কেটে এসে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক এবং মূল্য দেখে তাদের বাজেটের সাথে মিলিয়ে নিচ্ছেন। আবার কোনো কোনো ক্রেতা বাজেটের তোয়াক্কা না করে পছন্দ হলেই কিনছেন তার পছন্দের পোশাক। তবে দাম বেশি হওয়ায় ফ্যাশন পাঞ্জাবি ও রেডিমেট ফ্যাশন পোশাকের বিক্রি কম হচ্ছে। পৌর বাজারের অভিজাত জুতার দোকান সৌখিন সু-হাউজের মালিক ফুলবাড়ী থানা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মো. মানিক সরকার বলেন, দেরিতে হলেও ফুলবাড়ীতে ঈদের বাজার ক্রমেই জমে উঠছে। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন এবং তুলনামূলক কম দামের স্যান্ডেল-জুতা বেশি কিনছেন। তবে ক্রেতারা জানান, দাম বেশি হওয়ায় পছন্দ হওয়া সত্ত্বেও মনের মতো স্যান্ডেল কেনা সম্ভব হচ্ছে না। সাধ্যের মধ্যে একটু কম দামে স্যান্ডেল কিনেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। পৌর বাজারের আধুনিক মানের জুতা-স্যান্ডেলের দোকানগুলোর মধ্যে রয়েছে, পাদুকা বিপণি বিতান, পায়ে পায়ে সু-হাউজ, ফাহমিদ সু-গ্যালারি, বাটা সু-গ্যালারি। ফুলবাড়ীর ২টি অভিজাত টেইলার্স ভিআইপি ও বেনিসন তাদের অর্ডার এখনো অব্যাহত রেখেছে। অথচ গত বছর এ সময় অর্ডার নেয়া বন্ধ ছিল। শাড়ি কাপড়ের দোকানের মধ্যে রমনী শাড়ি ঘর, মনেরেখ শাড়ি ঘর, বধূ সাজ এই তিনটি দোকানে বেশি ক্রেতার ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে এখানেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। কারণ ক্রেতাদেরকে এসব দোকানেও আক্ষেপ করে বলতে শোনা গেছে, সব কাপড়ের দাম বেশি, সাধ আছে সাধ্য নেই। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি মার্কেটে দাম বেশি হওয়ায় সবখানে এর প্রভাব পড়েছে। ন্যূনতম লাভেই আমরা বেচা-বিক্রি করার চেষ্টা করছি। এবার ফুলবাড়ী বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীদের ভিড়ই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় তরুণ-তরুণীরা সন্ধ্যার পর দল বেঁধে দোকানগুলোতে কেনাকাটা করতে আসছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন