আগামীকাল পৌষের দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষ হচ্ছে। মাত্র ১৪ দিনে শীত দু’দফা জেঁকে বসেছে। সেই সঙ্গে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন লেপ-তোষক তৈরির কারিগর বা ধুনহাররা। তাদের ব্যস্ততা শুরু হয়েছিল হেমন্তের শেষ দিকে। কিন্তু শীতের কাঁপুনির সঙ্গে ঘন কুয়াশায় এখন এক মুহুর্তের সময় তাদের হাতে নেই।
পত্রিকার পাতায় তীব্র শৈতপ্রবাহ আসছে এমন খবরে ভিড় বেড়েছে লেপ-তোষকের দোকানগুলোতে। সারা দেশের মতো শীতে কাঁপছে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা।স্থানীয়দের অনেকেই জানান, পৌষের শুরুতেই এভাবে শীত জেঁকে বসবে তা কেউই বুঝতে পারেননি। প্রতি বছর মধ্য পৌষের পর শীতের দেখা মিলে। এবার ব্যতিক্রম হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দরিদ্রদের।
বিশেষ করে উপজেলার গ্রামাঞ্চলের লোকজনের কথা, পৌষের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত দুপুর ছাড়া সকাল ও বিকালে হালকা শীত ঠের পাওয়া যেত। আর রাতের ঠিকই কাঁথা মুড়ি দিতে ঘুমাতে হতো।
লেপ-তোষক তৈরির কারিগররা জানান, বিত্তবানরা প্রতি বছর শীতের আগেই নতুন লেপ ও তোষকের অর্ডার দেন। অনেকেই পুরানো লেপ-তোষক একেবারে গরীবদের দেন। তারপরও এবার আগেই শীত অনুভূত হওয়ায় নতুন তৈরির পাশাপাশি পুরানো লেপ-তোষক মেরামতের কাজ পুরোদমে চলছে।
উপজেলার বিভিন্ন হাটে গিয়ে দেখা যায় কারিগররা আপন কাজে ব্যস্ত। কাজের ব্যস্ততার মধ্যেই ক্রেতাদের সাথে চলে দরদাম। উপজেলার পৌর সদর, লক্ষীগঞ্জ, মাইজবাগ, মধুপুর, উচাখিলা, তারুন্দিয়া, সোহাগি, আঠারবাড়ী, খালবলা, জাটিয়া, সুটিয়া, নশতি ও বড়িহিতের সূর্যের বাজারে ঘুরে দেখা গেছে লেপ-তোষকের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীড়।
বেচাকেনার ফাঁকে কথা হয় পৌর সদরের সাব্বির, শামছু ও মধুপুর বাজারের লেপ-তোষক কারিগর গিয়াস উদ্দিনের সাথে। তারা জানান, রাতে শীত বেশি পড়ায় কাজের চাপ অনেক বেড়েছে। অনেকেই লেপ-তোষক তৈরি ও মেরামতের জন্যে পুরাতন লেপ-তোষক নিয়ে আসছেন।
তিনি আরও জানান, তাদের ব্যবসা জমজমাট থাকে হেমন্তের শুরু থেকে পুরো শীত মৌসুম পর্যন্ত। অবশিষ্ট সময় তোষক তৈরির কাজ চলে। তবে শীতকালের মতো জমজমাট নয়। উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের বিল খেরুয়া গ্রামের ক্রেতা সাইফুল ইসলাম ও সদর ইউনিয়নের দড়িপাঁচাশি গ্রামের আব্দুর রশীদ জানান, গত বছরের চেয়ে এবার লেপ-তোষকের দাম একটু বেশি। হঠাৎ করেই তীব্র শীত অনুভূত হওয়ায় লেপ-তোষকের দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি। তারপরও অর্ডার দিয়ে বানানো কিংবা রেডিমেট হোক না কেন কিছুটা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে গার্মেন্টস তুলা ৫০, ফোম তুলা ২০০, শিমুল তুলা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে তুলার বাজার ধরে ৫ থেকে ৬ হাত একটি তোষকের খরচ পড়ে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৬ হাত একটি লেপের খরচ পড়ে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা।
কারিগররা জানান, শিমুল তুলা দিয়ে তৈরি করলে খরচ কমপক্ষে তিনগুণ বেড়ে যায়। যে কারণে স্বল্প আয়ের লোকজন শিমুল তুলা এড়িয়ে চলেন। দোকান ছাড়াও বর্তমানে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছে লেপ-তোষক তৈরির ফেরী ওয়ালারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন