সুনামগঞ্জের ছাতকে পাটিয়ারার খালের জায়গা দখল করে স্থায়ীভাবে গড়ে উঠেছে একাধিক কাঁচা-পাকা বসত-ঘর ও বাড়ির সীমানা প্রাচীর। দীর্ঘদিন ধরে এসব দখলে মরিয়া একটি ভূমি খেকো চক্র। আইন-কানুনকে তোয়াক্কা না করে সরকারি খালে মাটি ভরাটের পর স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের ফলে ধ্বংস হচ্ছে খাল। পানি সঙ্কটে খালের তীরবর্তী বোরো জমিগুলো বিরান ভূমিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। বর্ষায় পানি নিস্কাশনে বড় বাঁধা হয়ে দাড়াবে এসব অবৈধ স্থাপনা।
জানা যায়, উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের তেলিহাওরের পানি নিস্কাশনের অন্যতম রাস্তা হচ্ছে পাটিয়ারার খাল। এ খালটি সুরমা নদীর অন্যতম শাখা বটের খালে সংযুক্ত রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পাটিয়ারার খাল দখলে মরিয়া একটি ভূমি খেকো চক্র। দখলকারিরা মাটি ভরাট করে খালের ওপর স্থায়ী বসত-বাড়ি ও বাড়ির সীমানা প্রাচীরসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে আসছে। এ কারণে সরকারি খালটি যাচ্ছে ভূমি খেকো দখলদারদের পেটে! এক সময়ের পাটিয়ারার নদী এখন মরা খালে পরিনত হওয়ায় বোরো মৌসুমে খালের দু’তীরবর্তী কৃষকদের শত শত একর জমি বিরান ভূমিতে পরিনত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকার লোকজন একাধিক অভিযোগ করলেও কার্যকর কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এতে দখলকারিরা পার পেয়ে যাচ্ছে। উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য আরিফ আহমদ জমির বলেন, তিনি গত ২৭ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসার বরাবরে পৃথক দু’টি অভিযোগ দিয়েছেন। বারগোপী গ্রামের শফিক মিয়া কর্তৃক পাটিয়ারার খালের ১নং খতিয়ানভুক্ত ৪২৩ নং দাগের জায়গা দখল করে বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মাণে দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১ ডিসেম্বর পরিদর্শনে আসেন এসিল্যান্ড। পরিদর্শনে এসে তিনি সত্যতা পেয়ে ভূমি খেকো শফিককে তিন দিনের মধ্যে তার তৈরি করা বাড়ির সীমানা প্রাচীর নিজ উদ্যোগে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত উচ্ছেদ হয়নি। সরকারি খাল দখলের প্রতিবাদ করায় উল্টো তিনিসহ গ্রামের মুরব্বি আবদুল হদিসকে আসামি করে হয়রনী মূলক আদালতে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে ভূমি খেকো শফিক। মেম্বার জমির বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় এমপি মুহিবুর রহমান মানিক, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. গোলাম কবিরসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। শফিক মিয়া তার নিজস্ব জায়গায় বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ করছেন বলে জানান। ৩ দিনের মধ্যে নিজ উদ্যোগে স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়ার কথা স্বীকার করে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তাপস শীল বলেন, অবশ্যই এ বিষয়ে দ্রæত একটি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এদিকে পূর্ব পীরপুর মৌজার ১৬৩ নং দাগের পাটিয়ারার খাল মাটি ভরাট করে দখলে নিয়ে খাগামুড়া গ্রামের অংশে স্থায়ীভাবে কাঁচা ও দালানঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন মৃত মজর আলীর মেয়ে ফাহিমা বেগম ওরফে মালুনীসহ ৬টি পরিবার।
জেলা প্রশাসক বরাবরে দায়ের করা একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৭ ডিসেম্বর সরজমিন পরিদর্শন করেন ইউনিয়ন ভূমি অফিস পীরপুরের সহকারি (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা আববাস আলী। সরকারি খালে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থায়ী বাড়ি-ঘর, সীমানা প্রাচীরসহ অন্যান্য স্থাপনাগুলো দ্রæত উচ্ছেদ করে পাটিয়ারার খাল দখলমুক্ত করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন খালের তীরবর্তী ও এলাকার ভুক্তভোগি মানুষ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন