শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

চলনবিলে অবাধে পাখি নিধন

আইন আছে প্রয়োগ নেই

সৈয়দ শামীম শিরাজী, সিরাজগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

আইন আছে প্রয়োগ নেই। নেই প্রশাসনের তেমন নজরদারি কিংবা তৎপরতা। ফলে শীতের শুরুতেই বিস্তীর্ণ চলনবিল এলাকার সিরাজগঞ্জ ও পাবনার বিভিন্ন স্থানে চলছে অবাধে পাখি শিকার। কেউ পাখি শিকার করছে পেটের দায়ে, কেউবা করছে শখের বসে। বন্দুক, এয়ারগান, বিষটোপ, জাল ফেলে, বড়শি দিয়েসহ নানা উপায় এসব পাখি শিকার করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ ও পাবনার নদী ও বিল এলাকায় শীতের শুরুতেই শৌখিন ও পেশাদার শিকারিরা অবাধে পাখি শিকার করছেন। এসব পাখি শহর এবং গ্রামের হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গোপনে উচ্চ দামে বিক্রি করছে। তবে প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই।
চলনবিলের বিল ও নদী এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ায় নদী ও বিলের পানি কমে গেছে। জেগে ওঠছে ফসলের মাঠ। যেসব স্থানে অল্প পানি জমে আছে, সেখানে মাছের আনাগোনা রয়েছে। ফলে মাছ খেতে মাঠে নামছে বক, ডাহুক, ঘুঘু, পানকৌড়ি, বালিহাঁসসহ বিভিন্ন জাতের পাখি। আসছে পরিযায়ী পাখির দল। আর এ সুযোগেই শিকারিরা অবাধে পাখি শিকার শুরু করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহত্তর চলনবিল এলাকার সিরাজগঞ্জের তারাশ, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া এবং পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার চলনবিল, সাঁথিয়া উপজেলার ঘুঘুদহ ও সুজানগর উপজেলার গাজনার বিল থেকে ধরা হচ্ছে বক, বালিহাঁস, পানকৌড়িসহ বিভিন্ন জাতের পাখি। জেলা সদর, বেড়া উপজেলার ঢালারচর ও ঈশ্বরদী উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর পাড় থেকে ধরা হচ্ছে সারস, রাত চরা, শামুকখোল, নীলশির, লালশির, বড় সরালী, ছোট সরালী, সাদা বক, ধূসর বক, গো বক, ছোট পানকৌড়ি, বড় পানকৌড়ি, কাদা খোঁচা, মাছরাঙ্গা ও বালিহাঁসসহ বিভিন্ন জাতের পাখি। বিষটোপ, জাল, বড়শি ও এয়ারগান দিয়ে শিকারিরা এসব পাখি শিকার করছেন এবং পরে তা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ও গোপনে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে প্রশাসনের এতে কোনো নজরদারি নেই।
চলনবিলের এক পাখি শিকারি বলেন, ‘আমরা পেটের দায়ে পাখি মারে বেচি। মেলা শিক্ষিত মানুষ তো হুদেই বন্দুক দিয়ে পাখি মারে। তা তো কেউ দেহে না।’
কিছু পাখিবিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাখি কেনার জন্য নির্ধারিত ক্রেতা আছেন। উচ্চশিক্ষিত চাকরিজীবী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশার মানুষ এসব পাখির ক্রেতা। মুঠোফোনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাখি পৌঁছে দেয়া হয়। বর্তমানে পাখির চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেশ চড়া। বিক্রেতারা বলেন, প্রতি জোড়া সাদা বক ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, কালো বক ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, ঘুঘু ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, চখা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, বালিহাঁস ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা ও বড় সারস ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
২০১২ সালের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক লাখ টাকা জরিমানা, এক বছরের কারাদন্ড বা উভয় দন্ড। একই অপরাধ পুনরায় করলে দুই লাখ টাকা জরিমানা, দুই বছরের কারাদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু এই আইন থাকা সত্তে¡ও অবাধে পাখি শিকার করা হচ্ছে।
জেলার বন্য প্রাণীবিষয়ক সংগঠন নেচার অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন কমিউনিটির সভাপতি এহসান আলী বিশ্বাস বলেন, তারা পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণীর ছবি তুলে বেড়ান। প্রতিদিন ছবি তুলতে গিয়ে দেখছেন পাখি শিকার করা হচ্ছে। কেউ পেশাদার, কেউ শৌখিন শিকারি। পাখি নিধন বন্ধে আইন থাকলেও তা প্রয়োগ হচ্ছে না। ফলে দেশ থেকে পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রাজশাহী কার্যালয়ের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, রাজশাহী থেকে পুরো বিভাগ দেখা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তবে গত সপ্তাহে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বন বিভাগকে পাখি নিধন বন্ধে চিঠি দেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে সচেতনতা ও নজরদারি বাড়ানো হলে পাখি নিধন কমে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন