শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ইংরেজি নববর্ষ ২০২০

| প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

আজ পয়লা জানুয়ারি, খ্রিস্টীয় ২০২০ সালের প্রথম দিন। আরো একটি বছরকে পেছনে ফেলে এসেছি আমরা। কালের গর্ভে আশ্রয় নিয়েছে ২০১৯ সাল। নতুন বছরের প্রথম দিনে আমরা বিগত বছরের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব মেলাতে চেষ্টা করব। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে অগ্রগতির পথে ধাবিত হওয়ার জন্য এটা অপরিহার্য। ২০১৯ সালের হিসাব-নিকাশ ও মূল্যায়নে আমরা বলতে পারি, আমাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বছরটি মিশ্রভাবেই অতিবাহিত হয়েছে। এখানে সাফল্য-ব্যর্থতা দুই-ই আছে। তুলনামূলক বিচারে হয়তো সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি। এতে বিমর্ষ বাহতাশ হওয়ার কিছু নেই। ব্যর্থতাকে সাফল্যের আলোয় উদ্ভাসিত করার জন্য নতুন বছরে আমাদের শক্তি ও সামর্থকে পূর্ণমাত্রায় নিয়োজিত করতে হবে। এটাই আমাদের অঙ্গীকার ও শপথ হওয়া উচিৎ। সন্দেহ নেই, জাতীয় জীবনে আমাদের অনেক স্বপ্ন-প্রত্যাশাই অনর্জিত রয়ে গেছে। নতুন নতুন সংকট-সমস্যার জন্ম হয়েছে। নতুন বছরে সেগুলো প্রলম্বিত হবে, স্বাভাবিক কারণেই। মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ বেড়েছে। অর্থনীতি বেহাল অবস্থায় পতিত। বিনিয়োগ-শিল্পায়ন-কর্মসংস্থান বাড়েনি। রফতানি আয়, জনশক্তি খাতের রেমিট্যান্স, রাজস্ব আদায়- সবকিছুই কমেছে। ব্যাংকিং খাত রীতিমত বিপন্ন দশায় এসে উপনীত হয়েছে। দুর্নীতি-দুষ্কৃতি ও অর্থপাচার বেড়েছে। একই সঙ্গে নাগরিক নিরাপত্তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খুন, গুম, অপহরণ, ছিনতাই, রাজাহানি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিরোধীদলের ওপর দমন-পীড়ন, হামলা-মামলার যে অবস্থা আগের বছরে ছিল তার তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর মানুষের আস্থা বাড়ার মতো কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগও দেখা যায়নি। সুশাসনের অভাব ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিস্তৃত হয়েছে। সামাজিক অবক্ষয়-অপমৃত্যুর বেশ কিছু ঘটনা পুরো সমাজকে বিচলিত-উদ্বিঘœ করেছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলেও একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালের শুরুতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধারবাহিক তৃতীয় বারের মতো নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। নির্বাচনটি দেশে-বিদেশে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও শেখ হাসিনার নতুন সরকারের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বি। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে শেখ হাসিনার সরকার বিশাল সম্ভাবনা জাগিয়ে তুললেও দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, সুশাস ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে সামনে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। বছরজুড়ে শেয়ার বাজারের ধস ও মন্দা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। বিনিয়োগ, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, ব্যাংকিং সেক্টরের দুদর্শা লাঘবে কোনো কার্যকর উদ্যোগ বা অগ্রগতি দেখা যায়নি। মানুষের প্রত্যাশিত রাজনৈতিক সমঝোতা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন খুবই ক্ষীন। জাতীয় নির্বাচনের পরেই দীর্ঘ প্রায় তিন দশক পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন গণতন্ত্রকামী মানুষকে কিছুটা আশাবাদী করে তুলেছিল। তবে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া এবং ডাকসু ভিপির উপর বার বার ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ও অভিযোগ ছিল হতাশাজনক। তবে বছরের শেষ প্রান্তিকে শুরু হওয়া ক্যাসিনো জুয়া ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযানকে দেশের মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ছাত্রলীগ-যুবরীগের কতিপয় প্রভাবশালী নেতাকে বহিষ্কার, গ্রেফতার ও আইনের আওতায় নিয়ে আসার যে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মানুষ কিছুটা হলেও আশাবাদী হয়ে উঠেছে।

আজ নতুন বছরের শুরুতে মানুষের প্রথম প্রত্যাশাই হচ্ছে দেশে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সুশাসন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন। প্রথমতঃ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি, দ্বিতীয়তঃ অর্থনৈতিক বিকাশ, উন্নয়ন ও জনগণের জীবন-মানের ইতিবাচক পরিবর্তন; মোটা দাগে, এসবই ছিল গত বছরের শুরুতে নতুন সরকারের সর্বাগ্রাধিকার দায়িত্ব। দেশের মানুষ শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায়, সব রকম গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার চায়। একই সঙ্গে চায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি। কোনো বিশৃংখলা, সংঘাত-সহিংসতা তারা দেখতে চায় না। মানুষের এ প্রত্যাশা পূরণে সরকারের প্রথম বছরটি পুরোপুরি ব্যর্থ না হলেও গৃহীত উদ্যোগগুলোর সফল অগ্রযাত্রা দেখতে চায় দেশের মানুষ। তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা ও রাজনৈতিক কমিটমেন্টের প্রতি দেশের মানুষের প্রত্যাশা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে দেশের মানুষ তাঁর সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখতে চায়। জানুয়ারির ৩০ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে সেই সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে বলে মানুষের প্রত্যাশা। বিগত জাতীয় নির্বাচন বা সিটি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি কেউ আর দেখতে চায় না। ভোটদান ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রতিটি স্থানীয় সরকার ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। হামলা-মামলা, সংশয় অনাস্থার পরিবেশের মধ্যেও ঢাকা সিটি নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার যে আশঙ্কা বিভিন্ন মহল থেকে শোনা যাচ্ছে, তা মিথ্যা হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা যদি সকলে পরিশুদ্ধ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হই, জনকল্যাণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই- তবে পথের বাধা অতিক্রম করা মোটেই কঠিন হবে না। আজকের দিনে আমাদের সংকল্পবদ্ধ হতে হবে, আগামী দিনগুলো আমরা সকলের জন্য শুভ, কল্যাণময় ও নিরাপদ করে তুলবো। পরিশেষে আমরা খ্রিস্টীয় এই নববর্ষে আমাদের পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন