সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান একদিনের সফরে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে আসছেন। বুধবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করে ইসলামাবাদে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত জানান, ‘দুই ভ্রাতৃত্বপূর্ণ দেশের বন্ধুত্বের বন্ধন আরও জোরদার করার জন্য ক্রাউন প্রিন্স ইসলামাবাদ সফর করছেন।’ এদিকে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ইসলামাবাদ সফর করবেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সফরকালে ক্রাউন প্রিন্স নাহিয়ান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করতে বৈঠক করবেন। এছাড়াও, পারস্পরিক স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয় এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স সর্বশেষ গত বছরের জানুয়ারীতে পাকিস্তান সফর করেছিলেন। তার এক সপ্তাহ আগেই পাকিস্তানের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল আবুধাবি।
এদিকে, কুয়ালালামপুর সম্মেলনে যোগ না দিয়ে সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো নিয়ে তুরস্ক, মালয়েশিয়াসহ মুসলিম বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা ঘোচানোর চেষ্টা করছে পাকিস্তান। এরই অংশ হিসেবে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ইসলামাবাদ সফর করবেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। এর ফলে নিশ্চিতভাবে ভারতের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যদিও ২০১৭-১৮ সালের পর এই সম্পর্কে উন্নতির আভাস দেখা গিয়েছিলো।
পাশাপাশি পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ শিগগিরই মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন। এরদোগান অভিযোগ করে বলেছিলেন যে সউদী আরবের চাপে কুয়ালালামপুর সম্মেলনে পাকিস্তান যোগ দেয়নি। রোববার মুলতানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি বলেন যে কুয়ালালামপুর সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করতে আর্থ-সামাজিক প্রকল্প গ্রহণ ও ইসলামভীতি-সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো নিরসনের চেষ্টা চালিয়েছেন। পাকিস্তান তার এসব প্রচেষ্টাকে সম্মান করে।
পাকিস্তানের সঙ্গে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক অনেক পুরনো। এই সম্পর্ক আরো জোরদার করতে এরদোগান বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছেন। কোরেশি বলেন, মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং কোন ভুলবুঝাবুঝি থাকলে তা নিরসনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। ফেব্রুয়ারিতে এরদোগান পাকিস্তান সফর করবেন এবং নিকট ভবিষ্যতে পাকিস্তানী নেতারা মালয়েশিয়া সফরে যাবেন।
কাশ্মীর ইস্যুতে তুরস্ক ও মালয়েশিয়া প্রকাশ্যে জাতিসংঘ, এফএটিএফসহ বিভিন্ন ফোরামে পাকিস্তানকে সমর্থন করছে। তবে সউদী আরব, আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, মিশরসহ ওআইসি’র অনেক সদস্য দেশের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে এফএটিএফ-এর নতুন কোন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে হলে তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার সমর্থন প্রয়োজন পাকিস্তানের।
গত বছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে কুয়ালালামপুর সম্মেলনের পরিকল্পনা করে পাকিস্তান, তুরস্ক ও মালয়েশিয়া। কিন্তু সম্মেলন শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এতে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রিয়াদের চাপে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন বলে মনে করা হচ্ছে।
বহু বছর ধরে মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে রিয়াদ। এখন মালয়েশিয়া ও তুরস্ক এই নেতৃত্বের আসনে বসার চেষ্টা করায় সউদী আরব তা মেনে নিতে পারছে না। ফলে, রিয়াদ ও আঙ্কারা-কুয়ালালামপুরের মধ্যে একই সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে পাকিস্তান কঠিন অবস্থায় পড়ে বলে একটি সূত্র জানায়।
গত সপ্তাহে সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসলামাবাদ সফর করেন। তিনি কাশ্মির ইস্যু নিয়ে ওআইসি সম্মেলন আয়োজনের ব্যাপারে পাকিস্তানকে বারবার আশ্বস্ত করেন। পরে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় বলা হয় যে আগামী এপ্রিলে ইসলামাবাদে ওআইসি’র সম্মেলনে কাশ্মির ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হবে। সূত্র: ডেইলি টাইমস, ডন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন