শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের সড়ক ও নৌপথে বেড়েছে কিশোর চালকের সংখ্যা। বাস-টেম্পু কিংবা লেগুনা প্রতিটি যানবাহনেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে অদক্ষ কিশোর চালকদের উপস্থিতি। একই চিত্র নৌপথেও। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে এক শ্রেণির স্বার্থন্বেষী মহল নবীগঞ্জ-হাজীগঞ্জ খেয়াঘাটে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার তুলে দিচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক কিশোরদের হাতে। কোনো প্রকার সরকারি বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক সনদ ছাড়াই ওঠতি বয়সের কিশোরদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে এসব গণপরিবহন। অদক্ষ এসব কিশোর চালকদের কারণে আতঙ্কে রয়েছে যাত্রী সাধারণ।
যাত্রীদের মতে, হেলপার থেকে চালক বনে যাওয়া এ সকল কিশোরদের একটু ভুলের কারণে যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। প্রশাসনের নজরধারী না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়া থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে টেম্পু, লেগুনা, মিনিবাস, হিউম্যান হলারসহ বিভিন্ন গণপরিবহন। শিল্পনগরী হওয়াতে প্রতিদিনই এ সকল যানবাহনে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে। তবে আশ্চর্যজনক হলেও একথা সত্য যে এ সকল গণপরিবহন চলাচলে নেই সড়ক আইনের কোনো নিয়মনীতি। গণপরিবহনগুলোর অধিকাংশ চালকেরই নেই রুট পারমিট লাইসেন্স বা ড্রাইভিং লাইসেন্স।
এছাড়াও পরিবহনগুলোতে চালকের আসনে অল্পবয়সী কিশোরদের দেখা যাচ্ছে। যাদের ন্যুনতম সড়ক আইন সম্পর্কে ধারণা নেই। এতে ভয়ানক ঝুঁকিতে রয়েছে সাধারণ যাত্রীরা। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও এক্ষেত্রে সেই আইনকে প্রাধান্য দিচ্ছে না এ সকল গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা।
নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএ’র সূত্র মতে, নগরীতে চলমান লেগুনা, টেম্পু ও মিনিবাসগুলোতে যে সকল চালক রয়েছে তাদের সিংহভাগই একটা সময় দক্ষ চালকদের হেলপার হিসেবে কর্মরত ছিল। হেলপার থাকাবস্থায় দক্ষ চালকদের সাথে সমন্বয় গড়ে তুলে নাম মাত্র ড্রাইভিং শিখে একটা সময় নিজেরাই ড্রাইভার বনে যায়। অথচ এ ধরণের চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স তো দূরের কথা, নিরাপদ সড়ক চলাচল আইন সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই।
গণপরিবহন সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র অল্প পুঁজিতে অধিক মুনাফার লোভেই এক শ্রেণির পরিবহন মালিকপক্ষ এ সকল অদক্ষ কিশোর চালকদের হাতে যানবাহন তুলে দিচ্ছেন। এতে করে তারা কিশোরদের মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন, একই সাথে অদক্ষ চালকদের ভুলে সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝড়ছে অসংখ্য প্রাণ।
একই অবস্থা নৌপথেও। নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জ-হাজীগঞ্জ খেয়াঘাটে শিশুশ্রমের বিষয়ে নেই কোনো আইনের বালাই।
এখানে হাতে ৪০০ টাকা পেলেই ইঞ্জিন চালিত যাত্রীবাহী ট্রলার ভাড়া দেয়া হচ্ছে শিশু থেকে উঠতি বয়সি কিশোরদের হাতে।
অদক্ষ এসব শিশু-কিশোরদের হাতে ভাড়ার বিনিময়ে ট্রলার দিয়ে একদিকে যেমন খুশি মালিক পক্ষ, অপরদিকে আইন ফাঁকি দিয়ে আয়ের উৎস পেয়ে খুশি এসব শিশু-কিশোররাও। আইনের কঠোর প্রয়োগ না থাকায় ঘাটের একক কর্তৃত্ব নিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে এসব ট্রলার মালিক সমিতি নামে একটি সিন্ডিকেট। এমন পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন খেয়া পাড় হচ্ছেন শত সহস্র সাধারণ মানুষ।
সাধারণ মানুষের দাবি, উঠতি বয়সের এ সকল কিশোর চালকদের প্রায় সবাই মাদকসেবী। আর এ সকল মাদকাসক্তদের হাতেই তুলে দেয়া হচ্ছে গণপরিবহন, যা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী।
ফলে এ সকল অদক্ষ চালকদের কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে মারাত্মক দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে কিশোর চালক ও তাদের ব্যবহারকারী গণপরিবহনের মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি জোড়ালো দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি জানান, ফিটনেসবিহীন পরিবহন এবং শিশুশ্রমের বিষয়ে প্রতিনিয়তই আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আসছি।
যেহেতু অভিযোগ পেয়েছি, আমরা অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিব।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহউদ্দিন আহম্মদ জানিয়েছেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। দোষী মালিকদের জরিমানার সাথে সাথে যাত্রী সাধারণের জানমাল রক্ষায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকদের পরিবহন চালনায় নিয়োগ না দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন