বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

চারলেনের কাজে ধীরগতি

কুমিল্লা-নোয়াখালী সড়ক

কামাল আতাতুর্ক মিসেল, ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

নোয়াখালী যাওয়া মানে সাজা ভোগ করা। দেড় ঘণ্টার পথ যেতে লাগে ৩/৪ ঘণ্টা। এমনই মন্তব্য করলেন নোয়াখালী থেকে ফিরে আসা যাত্রী বিপ্লব চৌধুরী। নোয়াখালী-কুমিল্লা সড়কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে এ বক্তব্য শুধু বিপ্লব চৌধুরীই নয়। এই মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকদেরও।
নোয়াখালী-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পের কাজ মন্থরগতিতে চলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। মহাসড়কের প্রায় ৫৯ কিলোমিটার জুড়ে এই কাজ চলছে। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় এক পাশের কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। অসংখ্য খানা-খন্দকের কারণে যানবাহন চলছে কচ্ছপ গতিতে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বর্তমানে রাস্তা কাদা-পানিতে একাকার। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ দিনদিন বাড়ছেই।

সম্প্রতি ঢাকার এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘মহাসড়কের আয়ুষ্কাল, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে নিজের এলাকায় যেতে লজ্জা লাগে। সড়কের বেহাল অবস্থার জন্য লজ্জায় গাড়ির গ্লাস তুলে রাখতে হয়, নামানো যায় না। দ্রুতও যাওয়া যায় না, রাস্তা খারাপ। অর্থমন্ত্রীর এই রকম মন্তব্যের একদিন পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্মাণকাজে ধুলা ওড়াটাই স্বাভাবিক। আমি উনাকে (অর্থমন্ত্রী) বলেছি, ওই রাস্তাটি (কুমিল্লা-নোয়াখালী) ফোর লেন হচ্ছে। কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কে তো ধুলাবালি উড়বেই। তাই হয়তো উনি বাড়ি যেতে বারবার বিরক্ত হচ্ছেন। কাজের ধীরগতি আর ভাঙা রাস্তার কারণে দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীর এই রকম মন্তব্যের ফলে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক এখন জাতীয় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্রমতে, প্রকল্প শুরুর এক বছর পর লাকসাম থেকে লালমাই পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকার টেন্ডার হয় গত নভেম্বরে। এখন টেন্ডার ওপেন হবে। লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজার বাইপাস ও লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজার এলাকার বাইপাসের এখনো জমি অধিগ্রহণ বাকি। এ দুই বাজারে বেশি যানজট হয়। এতে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি বাড়ছে।

নোয়াখালীর কাপড় ব্যবসায়ী সুব্রত মল্লিক জানান, রাস্তা ভাল থাকার সময় প্রতিদিনই ঢাকা গিয়ে নিজের পছন্দমত মালামাল কিনে নিয়ে আসা যেত। কিন্তু এখন মালামাল কিনে দিনে দিনে আসা যায় না। বাস চালক তফাজ্জল জানান, আগে একাধিক ট্রিপ দেয়া যেত কিন্তু রাস্তা খারাপের কারণে এখন যাওয়া-আসাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লা পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড এলাকার দুই কিলোমিটার সড়কে ৫ মাস ধরে চার লেনের কাজ হচ্ছে। দুই লেনের কাজ একপাশের কিছুটা শেষ হলেও অন্য লেনের কাজ এখনো বাকি। সড়কে বিদ্যুতের খুঁটিগুলোও দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্নস্থানে পুরাতন সড়কের কার্পেটিং বিলীন হয়ে গেছে।

চালক গফুর মিয়া জানান, গর্ত অতিক্রমকালে যানবাহনগুলো হেলেদুলে চলে ও থরথর করে কাঁপতে থাকে। প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে চালক ও যাত্রীদের কষ্ট হয়। যন্ত্রপাতি বিকল হওয়ার ঘটনা নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, নগরীর টমছম ব্রিজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার চার লেন উন্নীতকরণের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ল²ীপুর জেলাসহ সারা দেশের মানুষ উপকৃত হবে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হওয়া কাজ ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ১৭০ কোটি টাকা।

বাগমারা বাজারের ব্যবসায়ী মোসলেম উদ্দিন বলেন, এ বাজারের সড়ক অনেক সরু। প্রতিদিন এখানে যানজট লাগছে। কুমিল্লা জেলা মোটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জামিল আহমেদ খন্দকার বলেন, যাত্রী, পরিবহন চালক ও মালিকদের ভোগান্তি রোধে দ্রুত ফোর লেনের কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মো. আহাদ উল্লাহ বলেন, ৫৯ কিলোমিটার কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে চার লেনের কাজ চলছে। খাল, বিল, গর্ত ভর্তি করা ও সড়কের পাশের বিদু্যুতের খুঁটি সরানোসহ বর্ধিতকরণের কাজ নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। সড়কের অনেক অংশের কাজ মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। এছাড়া বাকি থাকা প্রকল্পের ১৭ কিলোমিটার এলাকার টেন্ডার চলতি সপ্তাহে ওপেন করা হবে। ভ‚মি অধিগ্রহণ করে আমরা দ্রæত কাজ শেষ করার চেষ্টা করবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন