মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন
এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ রোজা রাখার পর অত্যন্ত আত্মতৃপ্তির সাথে এ দিবসটি পালন করে থাকেন। ঈদ আরবি শব্দ। এর অর্থ আনন্দ, উৎসব প্রভৃতি। ঈদের দিন হলো মুসলমানদের মহামিলন, জাতীয় খুশির দিন। এ সমন্ধে মহানবী (স.) বলেছেন, “প্রত্যেক জাতিরই উৎসবের দিন আছে। আমাদের মুসলমানদের উৎসব হলো ঈদ।” (বুখারি ও মুসলিম শরীফ)। বছরে আমাদের দুটি ঈদ। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। ঈদের দিন সকালে সকল মুসলমান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঈদগাহে যান এবং দুই রাকাত ঈদের ওয়াজিব নামাজ পড়েন। মহান আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করেন। ঈদ মানে আনন্দ এবং ফিতর অর্থ সাওয়ম বা রোজা ভঙ্গ করা। ঈদুল ফিতর অর্থ সাওয়ম ভঙ্গের আনন্দ। সুদীর্ঘ এক মাস আল্লাহর নির্দেশ মতো রোজা পালনের পর বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসে আনন্দ উৎসব করেন বলে একে ঈদুল ফিতর বলা হয়। রমজানের পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন সারা বিশ্বের মুসলামনগণ এ উৎসবটি পালন করে থাকেন। ঈদুল ফিতরের দিন দু’টি কাজ করা ওয়াজিব- (১) ফিতরা দেওয়া এবং (২) ঈদের দুই রাকাত সালাত ছয় তাকবিরের সাথে আদায় করা। ঈদুল ফিতরের দিন ১৩টি কাজ করা সুন্নাত। যেমন- (১) শরীয়তের মধ্যে থেকে যথাসাধ্য সুসজ্জিত হওয়া, (২) গোসল করা, (৩) মিসওয়াক করা, (৪) যথাসম্ভব উত্তম কাপড় পরা, (৫) খুশবো ব্যবহার করা, (৬) ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, (৭) ফজরের নামাজের পরই সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া, (৮) মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া (ঈদগাহে যাওয়ার আগে), (৯) ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতরা আদায় করা, (১০) ঈদের নামাজ মসজিদে না পড়ে ঈদগাহে গিয়ে পড়া, (১১) ঈদগাহে এক রাস্তায় যাওয়া ও অন্য রাস্তায় ফিরে আসা, (১২) ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং (১৩) ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবির বলতে বলতে যাওয়া।
ঈদের সালাত পড়ার নিয়ম : আগেই বলা হয়েছে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত সালাত ছয় তাকবিরের সহিত পড়া ওয়াজিব। ঈদের দিন সূর্যোদয়ের পর থেকে দুপুরের পূর্ব পর্যন্ত ঈদের সালাত আদায় করা যায়। প্রথমে কাতার ঠিক করে নি¤œরূপভাবে নিয়ত করবে। যেমন- ‘আমি ঈদুল ফিতরের দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ ছয় তাকবিরের সাথে এই ইমামের পেছনে আদায় করার নিয়্যত করছি।’ এভাবে নিয়্যত করার পর আল্লাহু আকবার বলে দু’হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে তাহরিমা বাঁধবে। তারপর ছানা পড়বে (কিন্তু আউযু বিল্লাহ্ বিসমিল্লহ্ পড়বে না)। তারপর ইমাম সাহেবের সাথে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলবে। তাকবির বলার সময় প্রত্যেকবার হাত কান পর্যন্ত উঠাবে। তৃতীয় তাকবির বলার পর হাত না ছেড়ে তাহরিমা বেঁধে নিবে। তারপর আউযুবিল্লাহ্ বিসমিল্লাহ্ পাঠ করে সুরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সুরা মিলিয়ে প্রথম রাকাত শেষ করবে। দ্বিতীয় রাকাতে ফাতিহার সাথে অন্য সূরা পড়ার পর অর্থাৎ রুকুতে যাওয়ার আগে আবার অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলবে। মুসল্লিরা ও ইমামের সাথে তাকবির বলবে। তাকবিরের সময় কান পর্যন্ত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দিবে, হাত বাঁধবে না। চতুর্থ তাকবিরে রুকুতে যাবে। এরপর স্বাভবিক নিয়মে সালাত শেষ করবে। সালাত শেষে ইমাম সাহেব দুটি খুতবা পাঠ করবেন। প্রত্যেক মুসল্লির খুতবা শোনা ওয়াজিব। ঈদগাহে যাবার পথে ঈদুল ফিতরের তাকবির ঈদুল আযহার তাকবিরের অনুরূপ আর ঈদের নামাজের নিয়তের সময় শুধু নাম পরিবর্তন করে পড়তে হবে।
সাদাকাতুল ফিতর : ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পূর্বে রোযার ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে গরিব-দুঃখীদের মধ্যে যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সম্পদ দান করা হয় তাকে সাদাকাতুল ফিতর বলে। মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মাালিক প্রত্যেক স্বাধীন মুসলিম নর-নারীর ওপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব। শিশু পরাধীন (গোলাম) ব্যক্তির সাদাকা অভিভাবক আদায় করবেন। যে বছর রোযা ফরজ হয়, সে বছরই আল্লাহর রাসূল (সা.) মুসলমানদের সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার নির্দেশ দেয়েছেন। মুসলমানগণ পবিত্র রমজান মাসে রোযা পালন করে সৃষ্টি কর্তার ইবাদতে মশগুল থাকেন। এসব দায়িত্ব পালনে অনেক ভুলভ্রান্তি হয়ে যায়। রোযা পালনে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয় তার ক্ষতিপূরণের জন্য শরিয়তে রমজানের শেষে সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব করে দেয়া হয়েছে। ফিতর পেলে গরিব অনাথ লোকেরা ও ঈদের খুশীতে অংশীদার হতে পারে। এভাবে ধনী ও গরিবের মধ্যে ব্যবধান কমে আসে এবং একে অপরের মধ্যে সৌহার্দ্যভাব, ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে উঠে। হাদিসে আছে সাদাকাতুল ফিতর দ্বারা রোজা পালানের সকল ত্রুটি দূরীভূত হয়। গরিবের পানাহার অর্থাৎ ঈদ আনন্দের ব্যবস্থা হয় (আবু সউদ)। ঈদের দুই একদিন আগে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা যায়। তবে ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে মাঠে যাওয়ার পূর্বে সাদা কাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। ঈদের পরে ইহা আদায় করলে আদায় হবে, কিন্তু সাওয়াব কম হবে। প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনগণ, বছরে দুদিন মহান আল্লাহতায়াল্লা মুসলমানদের জন্য ঈদ আনন্দের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সমাজের ধনী ব্যক্তিদের উচিত এ আনন্দে গরিবদের শরিক করা। সমাজের কোনো গরিব অনাহারী ব্যক্তি যেন এ উৎসব থেকে বাদ না যায় তার খোঁজখবর রাখা ধনী লোকদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। ঈদ আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে সীমাহীন প্রীতি ভালোবাসা ও কল্যাণের সংবাদ নিয়ে সেই ঈদকে যথাযথ মর্যাদার সাথে উদযাপন করা মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য।
ষ লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন