শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

পর্যটনে রাজসিক নাটোর

মো. আজিজুল হক টুকু, নাটোর থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

আসছে শীতকাল। গরমের অস্বস্তি আর কাজের চাপের একঘেঁয়েমী থেকে পরিত্রাণের জন্য শীতকালেই এই দেশের স্থানীয় পর্যটকেরা বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করে। বনভোজন-শিক্ষা সফরের ব্যানারে জেলায় জেলায় বিভিন্ন এতিহ্য সম্বলিত রাজবাড়ি, স্থান, রিসোর্ট বা সমুদ্রতটে চলে ভ্রমণের ধুম। এরই ধারাবাহিকতায় নাটোরের বিভিন্ন এতিহ্য মন্ডিত স্থানেও আসছে শীতকালে স্থানীয় ও অন্যান্য জেলা থেকে পর্যটকের আনাগোনা হবে চোখে পড়ার মত।
তবে নাটোরে প্রধান পর্যটন স্থান হিসেবে নাটোর রাজবাড়ি উল্লেখযোগ্য। নাটোর সদর উপজেলায় অবস্থিত এই রাজবাড়ি নাটোর রাজবংশের স্মৃতিচিহ্ন। ইতিহাস থেকে জানা যায় অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি হয়। রাজবাড়িটির মোট আয়তন ১২০ একর। ছোট-বড় ৮টি ভবন ও ৭টি পুকুর আছে। রাজবাড়িটি বেষ্টন করে আছে দুই স্তরের বেড়চৌকি। পুরো এলাকা ২টি অংশে বিভক্ত ছোট তরফ ও বড় তরফ। রাজবাড়ির উল্লেখযোগ্য মন্দিরগুলো হল শ্যামসুন্দর মন্দির, আনন্দময়ী কালিবাড়ি মন্দির, তারকেশ্বর শিব মন্দির।
এরপর নাটোরের ঐতিহাসিক দিঘাপতিয়ার রাজবাড়ি বর্তমানে উত্তরা গণভবন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এটিকে উত্তরা গণভবন হিসেবে ঘোষণা দেন। তিনি ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রæয়ারি এই ভবনের মূল প্রাসাদের ভেতর মন্ত্রিসভার বৈঠক আহŸান করেন। সেই থেকে ভবনটি ‘উত্তরা গণভবনের প্রকৃত মর্যাদা লাভ করে। প্রায় তিনশ’ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক দিঘাপতিয়া রাজবাড়িটি বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন দয়ারাম রায়। প্রবেশ পথের বিশাল ফটকটি আসলে একটি বিরাটাকৃতির পাথরের ঘড়ি। প্রাসাদের প্রবেশ পথের চারিদিকে প্রাসাদঘেরা পরিখা। এখানে রয়েছে কুমার প্যালেস, ৪টি কামান, বিশাল রাজদরবার সংলগ্ন বাগানে জমিদার দয়ারামের একটি ভাস্কর্য, যাদুঘর, বহু দর্শনীয় স্মৃতিস্তম্ভ, ভাস্কর্য ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য। আরোও আছে ইতালীয় গার্ডেন, ছিপ হাতে কালো রঙের মার্বেল পাথরের মূর্তি। এছাড়াও উত্তরা গণভবন চত্বরে গোলপুকুর, পদ্মপুকুর, শ্যামসাগর, কাছারিপুকুর, কালীপুকুর, কেষ্টজির পুকুর নামে ছয়টি পুকুর আছে। রাজবাড়ির টিকিট কাউন্টারের তথ্যমতে প্রতি বছরে ১২ লক্ষাধিক পর্যটকের রাজসিক নাটোরে নাটোর রাজবাড়ি ও উত্তরা গণভবন পর্যটনে সমাগম ঘটে।
তাছাড়াও নাটোরে পর্যটনের জন্য লালপুরে আছে গ্রিনভ্যালি পার্ক, গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর গ্রামে চলনবিল জাদুঘর, নলডাঙ্গা উপজেলার পাটুলে মিনি কক্সবাজার, সিংড়া চলনবিল, গুরুদাসপুরের বিলসা নয়নাভিরাম স্থান উল্লেখযোগ্য।
যেভাবে যাবেন :
ঢাকা থেকে নাটোর প্রায় ১৯৬.২ কিলোমিটার। সড়কপথ ও রেলপথ দু’ভাবেই নাটোরে পৌছানো যাবে। ঢাকার গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নাটোর যাবার জন্য এসি-ননএসি বাস আছে। এর মধ্যে দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, হানিফ ইন্টারপ্রাইজ, তুহিন এলিট, গ্রামীণ ট্রাভেলস উল্লেখযোগ্য। ঢাকা থেকে নাটোর পর্যটনে এসে বাস ভাড়া থেকে শুরু করে ২ দিনের থাকা-খাওয়া-বেড়ানো সবমিলিয়ে জন প্রতি ৪-৫ হাজার টাকা লেগে যাবে।
ঢাকা ও নাটোরের মধ্যে প্রতিদিন প্রচুর বিলাসবহুল রেল ইন্টারসিটি সার্ভিস আছে। একতা, দ্রæতযান, রংপুর, লালমণি, নীলসাগর এক্সপ্রেসে নাটোর শহরের রেল স্টেশনে পৌঁছানো যাবে। নাটোর জেলায় থাকার জন্য হোটেল ও গেস্টহাউজের মধ্যে ভিআইপি, হোটেল মিল্লাত, জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, হোটেল প্রিন্স, হোটেল রাজ, নাটোর বোর্ডিং, নাটোর সুগার মিলস গেস্ট হাউজ আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন