রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ভগ্নিপতিই ঘাতক

ফখরুল আহসান চৌধুরী, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউপির লহরজপুর গ্রামে কামাল উদ্দিন হত্যাকান্ডের মুল রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। প্রতিপক্ষকে ফাসাঁতে পরিকল্পিতভাবে আপন শ্যালক কামাল উদ্দিনকে হত্যা করে দুলাভাই মাখন মিয়া। এ ব্যাপারে নিহত কামাল উদ্দিনের বোন ও হত্যার পরিকল্পনাকারী মাখনের স্ত্রী প্রতিপক্ষ ২৭ জনের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় ৩ দিন পর হত্যা মামলা করেন। এদিকে ঘটনার পরপরই নিহতের ভগ্নিপতি মাখন, ফারুক, শরীফ, লেবুসহ তার স্বজনরা গাঢাকা দেয় এবং মামলার বিষয়ে কোন সহযোগিতা না করায় পুলিশের সন্দেহ হয়। এ ঘটনায় গত ৭ জানুয়ারি সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার গুচ্ছগ্রাম থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফারুক মিয়াকে আটক করে পুলিশ। আটককৃত সন্ধিগ্ধ ফারুক মিয়া গত ৮ জানুয়ারি বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দির প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার বিকালে নবীগঞ্জ থানায় এক প্রেসব্রিফিংয়ে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের তথ্য জানান বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, বিগত ৬ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলার উজিরপুর এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয় বজলু মিয়ার ছেলে ফজল মিয়া। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষ মাখন মিয়াসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে ১০ নভেম্বর বানিয়াচং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের পরিবার। আসামি পক্ষের লোকজন বিজ্ঞ আদালতে ফজল মিয়া হত্যাকান্ডের দায় স্বীকারোক্তি মূলক জবান বন্দি প্রদান করে। এই হত্যাকান্ডে বেকায়দায় পরে যায় মাখন মিয়াসহ অপরাপর আসামিরা। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পরিকল্পনা করে মাখন মিয়া। তার দলবল নিয়ে মজিদ মিয়ার বাড়িতে গোপন বৈঠকে মাস্টার প্লান করেন। বৈঠকে সহজ সরল প্রকৃতির লোক ভগ্নিপতি মাখন মিয়ার বাড়িতে আশ্রয়ে থাকা শ্যালক কামাল উদ্দিনকে হত্যা করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১ম পরিকল্পনা করা হয় ২০১৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর বানিয়াচং থানার সীমান্তবর্তী নবীগঞ্জ থানার অন্তরগত লহরজপুর গ্রামের হাওরে। ওই দিন তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরবর্তীতে ১৬ই ডিসেম্বর রাতে মাছ ধরার প্লান করে কামাল উদ্দিনকে হাওরে পাঠিয়ে হত্যার পরিকল্পনা নেয়া হয়। সেই মোতাবেক ভগ্নিপতি মাখন মিয়া প্লান অনুযায়ী কামাল উদ্দিনকে লহরজপুর হাওরে পাটানো হয়। সেখানে শাখাবরাক নদীর পাশে ধান ক্ষেতে কামাল উদ্দিনকে পিছন দিক থেকে ধরে ফেলে শরীফ। এ সময় প্রথমে লেবু মিয়া পিকল দিয়ে কামালের বুকে ঘাই মারে। এক পর্যায়ে মাখন, ফারুক, অনুসহ সঙ্গীয় লোকজন উপর্যুপুরি আঘাত করে। এ সময় হামলাকারীরাই চিৎকার করে প্রতিপক্ষের লোকজন কামাল উদ্দিনকে মেরে পালিয়ে যাচ্ছে। পরে স্থানীয় লোকজন কামালকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালে নেয়ার পথে কামাল উদ্দিনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার ৩ দিন পরে নিহতের বড় বোন এবং হত্যাকান্ডের মাস্টার প্লানকারী মাখনের স্ত্রী নবীগঞ্জ থানায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমে উপরে উল্লিখিত চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করে। ইতোমধ্যে ফারুক মিয়া ছাড়াও শরীফ মিয়া ও মুমিন মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার মুল মাস্টার প্লানকারী মাখন মিয়া শ্রীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে বলে জানান পুলিশের সার্কেল এ এসপি পারভেজ আলম চৌধুরী। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা এই মুহুর্তে নিরাপরাধ দেখা যাচ্ছে। তদন্তে প্রমানিত না হলে তাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন