শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মা-ছেলে নিহত : মাস্টার সুকানিসহ লঞ্চ আটক

মেঘনায় দুই লঞ্চে সংঘর্ষ

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

নৌপথে আবারো অনিয়মের বলি হয়েছেন এক অন্তঃস্বত্ত্বা মা ও তার শিশুপুত্র। এ নিয়ে গত একমাসে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে ৩টি বড় দুর্ঘটনায় ২টি নৌযান ডুবি এবং দুই যাত্রীর মৃত্যু ছাড়াও ১০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

সর্বশেষ গত রোববার গভীর রাতে বরিশাল থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের সাথে ঢাকা থেকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়াগামী এমভি ফারহান-৯ লঞ্চের সংঘর্ষে দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১০ জন। হতাহতদের সকলেই কীর্তনখোলা-১০ এর লোয়ার ডেকের যাত্রী। কীর্তনখোলা-১০ এর লোয়ার ডেকে থাকা যাত্রী মাহমুদা (২৩) ও তার শিশুপুত্র মমিন (৭) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। নিহত মাহমুদা ছিল অন্তঃসত্বা। সে বরিশাল থেকে ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল।

কীর্তনখোলা’র ডান পাশের লোয়ার ডেকের একটি বড় অংশ দুমড়ে মুচড়ে গেছে। দুটি নৌযানেরই সহস্রাধিক যাত্রী আতঙ্কিত হয়ে আর্তনাদ শুরু করে দেয়। সংঘর্ষে বেশিরভাগ কেবিন যাত্রী শয্যা থেকে মেঝেতে পড়ে গিয়ে কমবেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। এমভি ফারহান-৯ নৌযানটি প্রথম শ্রেণির হলেও তার হুইল হাউজে থাকা কাপ্তান আলতাফ দ্বিতীয় শ্রেণির সনদপ্রাপ্ত। এ সময় নৌযানটির হুইল হাউজে আরেকজন সুকানিও ছিল। বিধি মোতাবেক নৌযানটি প্রথম শ্রেণির কাপ্তান দিয়ে পরিচালনার কথা। চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই ঐ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

রোববার রাত ৯টার পরপরই বরিশাল থেকে ৫ শতাধিক যাত্রী নিয়ে এমভি কীর্তনখোলা-১০ ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে। রাত ১টার কিছু আগে বরিশাল ও চাঁদপুরের সীমান্তবর্তী হিজলার উজানে মেঘনা মোহনার কাছে মিয়ারচরের বিকন বাতির কাছে বিপরীত দিক থেকে আসা এমভি ফারহান-৯, কীর্তখোলা-১০’এর উপর আছরে পড়ে। ফারহান ঢাকা থেকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া যাচ্ছিল। দুটি নৌযানের একাধিক যাত্রীর অভিযোগ, দুর্ঘটনার সময় ফারহান লঞ্চটি চালকের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। কীর্তনখোলা ও পেছনে থাকা অন্য নৌযান থেকে বার বার হুইসেল দেয়া ও মাইক যোগে ডাকাডাকির পরেও ফারহানের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কীর্তনখোলা-১০ এর ডান পাশে সজোরে আঘাত করে। দুর্ঘটনার সময় মেঘনা অববাহিকায় হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা ছিল।

কীর্তনখোলা-১০ এর কাপ্তান নুরুল ইসলাম জানান, অনেক দূর থেকেই ফারহান লঞ্চটিকে নিয়ন্ত্রণহীন মনে হচ্ছিল। তাই বার বার হুইসেল বাজিয়ে ও ওয়ারলেস যোগে আমরা সতর্ক করছিলাম। কিন্তু তাতে কোন সারা দেয়নি ফারহানের চালক। শেষ পর্যন্ত আমাদের নৌযানটির ওপর আছড়ে পরে বিপুল ক্ষতি সাধন করেছে ফারহান। মূলত এই ধরনের নৌযান পরিচালনার দক্ষতা ছিল না ফারহান-৯ চালকের।

গতকাল সকাল ৯টার দিকে কীর্তনখোলা-১০ ঢাকার সদরঘাটে পৌঁছার পরে নিহত মা ও শিশু পুত্রের লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুটি নৌযানের মালিক পক্ষ ও লঞ্চ মালিক সমিতি বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসেছে বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে কীর্তনখোলা নৌযানের সত্বাধিকারীকে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার ব্যাপারে বিআইডবিøউটিএ একটি তদন্ত টিম গঠন করেছে।

ভান্ডারিয়া (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পিরোজপুর সদর উপজেলার হুলারহাট লঞ্চঘাট থেকে মাস্টার আব্দুল হামিদ ও সুকানি খন্দকার আফতাব আলীকে এমভি ফারহান-৯ লঞ্চসহ আটক করে পুলিশ। পুলিশ পাহাড়ায় লঞ্চটি চালিয়া শেষ স্টেশন ভান্ডারিয়ায় যাত্রী নামানোর পড়ে মাস্টার ও সুকানিকে পিরোজপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আটক হামিদের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দীপ উপজেলায় এবং আফতাবের বাড়ি ঢাকার উত্তর বাড্ডায়। বিআইডবিøইটিএ থেকে সহযোগিতা চাওয়ার পর তাদেরকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় বিআইডবিøইটিএ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

ভান্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস. এম. মাকসুদুর রহমান বলেন, লঞ্চের মাস্টার ও সুকানিকে পিরোজপুর সদর থানা পুলিশ আটক করে। যাত্রীদের ভান্ডারিয়া ঘাটে নামিয়ে মাস্টার ও সুকানিকে পিরোজপুর সদর থানায় নিয়ে যায়। লঞ্চটি ভাÐারিয়া থানা পুলিশের হেফাজতে রেখে যায়। বিআইডবিøইটিএর নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত ভাÐারিয়া লঞ্চঘাটে পুলিশ পাহাড়ায় থাকবে লঞ্চটি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন