শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

সংশ্লিষ্টরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা জাল কাগজপত্র তৈরি

উল্লাপাড়ায় স্কুল খুলে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য

প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

করে ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে জাতীয়করণের পাঁয়তারা
জয়নাল আবেদীন জয়, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) থেকে

ছাত্র নেই, যাতায়াতের জায়গা নেই, স্কুলের নামে জমি নেই, খোলা মাঠের মধ্যে মাটি ফেলে টিনের ঘর তোলে বানানো হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। রাতের আঁধারে ঘর তোলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে এসব স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এসব স্কুলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা না হলেও কয়েক মাস আগে স্কুল খুলে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা দেখিয়ে উল্লাপাড়ার অন্তত ১০টির মতো গজিয়ে ওঠা প্রাথমিক বিদ্যালয় বানানো হয়েছে। একটি স্কুল খোলার জন্য সরকারি যেসব নিয়ম-নীতি রয়েছে তার সামান্যতম কোনো প্রক্রিয়া না মেনে কেবল শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য করার মুখ্য উদ্দেশ্য এসব স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় নিভৃত পল্লী এলাকায় রাতারাতি এসব প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য করে জাতীয়করণের অভিযোগ গুরুতর উঠেছে। সরেজমিন উপজেলার দুর্গানগর ইউনিয়নের রাজমান এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক মাস আগে মাঠের মধ্যে রাতারাতি একটি নতুন টিনের ঘর তোলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম প্রাথমিক বিদ্যালয় সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে স্কুল খোলা হয়েছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম তার জমিতে এই ধান্ধাবাজির স্কুল খুলেছে। এই স্কুল খুলে ১ জন প্রধান শিক্ষক ৩ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। মোটা অংকের টাকা নিয়ে এসব শিক্ষক নিয়োগ করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। স্কুলটিতে ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে পুরোটাই জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ক্ষমতাসীনরা মোটা অংকের টাকা নিয়ে জাতীয়করণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই ইউনিয়নের মরিচা গ্রামে একই কায়দায় স্কুল খুলে ভুয়া শিক্ষার্থী দেখানোসহ একটি স্কুল খোলার যাতীয় প্রক্রিয়া জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে স্কুলটি জাতীয়করণের প্রক্রিয়া চলছে। এই স্কুলের সভাপতি আলহাজ আব্দুর রাজ্জাক মাস্টারের সাথে তার বক্তব্য জানার জন্য বার বার মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি। একই ইউনিয়নের দিয়ারপাড়া গ্রামে আরেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হয়েছে। এ স্কুলটিও একই জালিয়াতি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে শিক্ষক নিয়োগ করে মোটা অংকের টাকায় শিক্ষা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে জাতীয়করণের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। একইভাবে উপজেলার কয়ড়া ইউনিয়নের চড়–ইমুড়ী গ্রামে আরেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হয়েছে। এই গ্রামের পাশে আরেকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজেদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দেখিয়ে জায়গাসহ সকল বিয়য় জালিয়াতি করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকার্তাকে ম্যানেজ করে জাতীয়করণের সকল প্রক্রিয়া চলছে। উল্লাপাড়ার দুর্গানগর ইউনিয়নে ইসলামপুর রাংটিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এই স্কুলটিও রাতারাতি ঘর তোলে স্কুল বানিয়ে ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে মোটা অংকের টাকায় শিক্ষক নিয়োগ করেছে। দুর্গানগর ইউনিয়ের ইউপি সদস্য আবু সুফিয়ান এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করে নিয়োগ বাণিজ্য করেছে। এদিকে উপজেলার ভেংড়ী গ্রামে একইভাবে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়েছে। একই কায়দায় উল্লাপাড়া উপজেলায় অন্তত আরো ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে কোটি টাকার শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়েছে। এসব স্কুলগুলো ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা দেখানো হলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গত কয়েক মাস আগে নতুন টিনের ঘর তোলে এসব স্কুল বানানো হয়েছে। ঘরের আসবাবপত্র সবকিছুই চকচক করছে। স্থানীয়রা জানান, এসব স্কুলের নিজস্ব কোনো শিক্ষার্থী নেই। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের এসব স্কুলের শিক্ষার্থী দেখানোসহ সবকিছু জাল-জালিয়াতি করে জাতীয়করণের পাঁয়তারা চলছে। সরকার দেশের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো জতীয়করণের পর উল্লাপাড়ায় নতুন করে এসব ধান্ধাবাজির স্কুল খুলে লাখ লাখ টাকা নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করে জাতীয়করণের পাঁয়তারা চলছে। এসব স্কুল খোলা ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উল্লাপাড়া প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ফিরোজ এসব ধান্ধাবাজি স্কুল খুলতে সহায়তা করেছে। তিনি নিজেই নানা বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি করার পাশাপাশি ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে এসব স্কুল জাতীয়করণের জন্য শিক্ষা অধিদফতরে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। একই সাথে তিনি স্থানীয় সরকার দলীয়দের এসব অপকর্মে যুক্ত করেছেন। এসব স্কুলে ৪ জন করে শিক্ষক নিয়োগ করে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করে শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতিটি স্কুল থেকে ১০ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব স্কুলগুলো জাতীয়করণের জন্য শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষা বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে স্কুলগুলো পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়ে উল্লাপাড়ায় চিঠি পাঠিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর। সরেজমিনে উল্লাপাড়া শিক্ষা কমিটির সদস্যরা পরিদর্শনে গিয়ে এসব ধান্ধাবাজির স্কুলের জালিয়াতির কথা জানতে পারে। উল্লাপাড়ার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম আলম কয়েকটি স্কুল সরেজমিনে তদন্ত করে জালিয়াতির প্রমাণ পেয়ে জাতীয়করণের প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিলেও নতুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার যোগদানের পর শিক্ষা কর্মকর্তা অতি কৌশলে ওই স্কুলগুলো জাতীয়করণের জন্য স্বাক্ষর করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই শিক্ষা কর্মকর্তা উল্লাপাড়ায় যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জাড়িয়ে পড়েছে। তার বিরুদ্ধে শিক্ষকরা লিখিত দুর্নীতির অভিযোগ দাখিল করলেও শিক্ষা বিভাগের কথাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে তিনি স্বপদে বহাল রয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উল্লাপাড়া শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ফিরোজ জানান, এর আগে উল্লাপাড়ার ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য পাঠানো হয়েছে। নতুন ৪টি স্কুলের কার্যক্রম নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কমিটি অসন্তোষ প্রকাশ করায় সেগুলোর প্রস্তাব পাঠানো হয়নি। এসব স্কুল থেকে তিনি কোনো আর্থিক সহায়তা নেননি বলে দাবি করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন