রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

কুরআন সুন্নাহের আলোকে উত্তম চরিত্রের গুরত্ব ও ফজিলত

মুফতি ইবরাহিম আনোয়ারী | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে: “আল্ল­াহ তায়ালা কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তনে এগিয়ে আসে”। (সূরা আর-রা’দ-১১)

নবী করীম সা. বলেন, “আমাকে সচ্চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের নিমিত্তেই প্রেরণ করা হয়েছে”। মানব জীবনে আখলাকের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ তার মনের আলোকেই সম্পাদিত হয়। দার্শনিক ঈমাম গাজ্জালীর মতে-যেমন গুণাবলী মানব মনে জাগরুক থাকে তারই প্রতিফলন তার বাহ্যিক কাজ-কর্মে প্রকাশিত হয়। এর আলোকে বলা যায় মানুষের কোন কাজই তার মূল চিন্তা-চেতনা বহির্ভূত নয়। এ জন্যই যুগে যুগে সংস্কারকরা মানুষের সংশোধন ও পবিত্র জীবন যাপনের পন্থা হিসেবে তাদের আত্মার পরিশুদ্ধি ও মূল্যবোধের জ্ঞান প্রথমেই শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতেন। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের উন্নতি-অবনতি, উত্থান-পতন, মান-সম্মান ইত্যাদি সব কিছুই তাদের মানসিক বিকাশ ও মূল্যবোধ জাগ্রত করার ওপরই নির্ভর করে।
উত্তম চরিত্র ইসলামী শিক্ষার অন্যতম একটি কোর্স হিসেবে পরিগণিত করা হয়। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহতে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা সমগ্র মানব সমাজের চারিত্রিক উন্নয়নে প্রচুর নির্দেশনা বিদ্যমান। মূলত মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য এ চরিত্রের আলোকেই হয়ে থাকে। আখলাকের মাধ্যমেই মানুষ মনুষ্যত্বের চূড়ান্ত মানে উন্নীত হতে পারে। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন-বিধান। এ বিধানের পরিপূর্ণতার জন্য তাতে উন্নত চরিত্রের বিধান থাকা আবশ্যক। তাই ইসলামে আখলাকুল হাসানাহ্ তথা উত্তম চরিত্রের স্থান অনেক ঊর্ধ্বে। পৃথিবীতে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের নিমিত্তে আল্ল­াহ যুগে যুগে নবী-রসূলদের প্রেরণ করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী সা. কে প্রেরণের অন্যতম কারণ সচ্চরিত্রের বিকাশ সাধন। একদা জনৈক ব্যক্তি রসূল সা. কে দ্বীনের সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেন: “উত্তম চরিত্র”। এ কথা দ্বারা বুঝা যায় সচ্চরিত্রতা বা উত্তম চরিত্র দ্বীনের অন্যতম একটি রুকন, যা ব্যতীত দ্বীনের অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না, যেমন হজ্ব সম্পর্কে রাসূলের বাণী: “হজ্বের গুরুত্বপূর্ণ একটি রুকন হচ্ছে আরাফায় অবস্থান করা” যা ব্যতীত হজ্ব আদায় হয় না, তেমনি ভাবে সচ্চরিত্রতা ব্যতীত দ্বীন ও পরিপূর্ণ হয় না।
উত্তম চরিত্র হল পরকালে মুক্তির উপায়, ইসলামের অপরিহার্য ফরজ তথা নামাজ-রোযা পালন করা সত্তে¡ও পরকালে জাহান্নাম থেকে নাজাত ও জান্নাত লাভের জন্য আখলাক তথা উত্তম চরিত্রের কোন বিকল্প নেই। একদা এক ব্যক্তি রসূল সা. কে নামাজী ও রোজাদার হওয়া সত্তে¡ও প্রতিবেশীদের কষ্টদানকারিণী জনৈকা মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই, সে জাহান্নামী” এবংকি মু’মিনদের মান ব্যবধান হবে উত্তম চরিত্র দ্বারা। জনৈক ব্যক্তি রসূল সা. কে উত্তম ঈমানদার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেন, “তাদের মধ্যে যে অধিক চরিত্রবান সেই উত্তম”। উত্তম চরিত্র দ্বারা মু’মিনরা কেয়ামতে রাসূল সা. এর ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে সবাই এক রকম হবে না। এ প্রসঙ্গে রাসূল সা. বলেন, ‘কেয়ামতের দিবস তোমাদের মধ্যে আমার নিকট বেশি পছন্দনীয় ও অবস্থানের ক্ষেত্রে অধিক নিকটবর্তী হবে তোমাদের মধ্যে যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী’। সৎ চরিত্রের অধিকারীর আমলনামাও ভারী হবে। এ প্রসঙ্গে রসূল বলেন, ‘কেয়ামতের মাঠে হিসেব-নিকাশের সময় ’আ­ল্লাহ ভীতি ও চরিত্রতার গুণ’ মু’মিনের আমলনামাকে ভারী করবে।’
রাসূল সা. এর উত্তম আখলাক সম্পর্কে দোয়া করতেন, তিনি নিজে গুণাহমুক্ত হয়েও নিজের চরিত্র সুন্দর করার তৌফিক অর্জনের জন্য আল্ল­াহর নিকট দোয়া করতেন। যেমন তিনি দোয়ায় বলতেন, “আল্ল­াহ তুমি আমার গঠন-আকৃতি সুন্দর করেছ, আমার চরিত্রকেও সুন্দর করে দাও”। আল্লাহ তায়ালা রসূল সা. এর উত্তম চরিত্রের প্রশংসাও করেছেন, তিনি বলেন, “আপনি মহান চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত”। (সুরা কলম-৪) আয়াতে মহান আল্ল­াহ কর্তৃক রসূল সা. এর আখলাকের প্রশংসা করেছেন। পবিত্র কুরআনের প্রচুর আয়াতে আখলাকের বিবরণ ও চরিত্রবানদের প্রশংসার বাণী উদ্ধৃত হয়েছে, মাক্কী ও মাদানী উভয় সূরাগুলোতে আখলাকের নির্দেশ বেশি থাকায় এর গুরুত্বেরও আধিক্য বুঝা যায়, যা থেকে কোন মুসলিমের দূরে থাকা সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার রাসূল সা. এর উত্তম চরিতে চরিত্রবান করুন। আমিন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
mia ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ৭:৩৬ পিএম says : 0
Vai arabic word dily vlo hoy..
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন