শয়তানকে যারা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত : বনী আদমকে পথভ্রষ্ট করতে শয়তানের যে প্রতিজ্ঞা আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে শয়তানের ভাষ্যে তা তুলে ধরেছেন। সাথে শয়তানকে যারা বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে তাদের পরিণতিও বলে দিয়েছেন : আর সে (আল্লাহকে) বলেছিল, আমি তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্ধারিত এক অংশকে নিয়ে নেব। এবং আমি তাদের সরল পথ থেকে নিশ্চিতভাবে বিচ্যুত করব, তাদের (অনেক) আশা-ভরসা দেবো এবং তাদের আদেশ করব, ফলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর কান ছিঁড়ে ফেলবে এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে বন্ধু বানায়, সে সুস্পষ্ট ক্ষতির মধ্যে পড়ে যায়। (সূরা নিসা : ১১৮-১১৯)।
মানুষের প্রকৃত বন্ধু হলেন আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ মানুষকে ভালোবেসে তার জন্য কল্যাণের কথা বলেছেন। তাকে কল্যাণের পথে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণকর নানা বিষয়ের আলোচনা করেছেন। সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্যরেখা এঁকে দিয়েছেন। আর শয়তান তো প্রকাশ্য শত্রæ কিন্তু শয়তান অনেক সময় বন্ধু সেজে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। সে মানুষকে নানা রকম প্রলোভন দেয়। নানা রকম মিথ্যা আশা দেয়। এতে অনেক মানুষ তার এ বাহ্যিক বন্ধুত্ব দেখে ধোঁকায় পড়ে যায়। আল্লাহ বলেন : সে তো তাদের প্রতিশ্রæতি দেয় এবং তাদের আশা-আকাক্সক্ষায় লিপ্ত করে। (প্রকৃতপক্ষে) শয়তান তাদের যে প্রতিশ্রæতিই দেয় তা ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়। (সূরা নিসা : ১২০)।
এ দুনিয়াতে শয়তান মানুষের বন্ধুর রূপ ধারণ করেছে। অথচ আখেরাতে সে তার প্রতারণার কথা স্বীকার করবে এবং যা কিছু করেছে সব থেকে নিজের দায়মুক্তি ঘোষণা দেবে : যখন সবকিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে, তখন শয়তান (তার অনুসারীদের) বলবে, বস্তুত আল্লাহ তাআলা তোমাদের সত্য প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন আর আমিও তোমাদের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদের সাথে তা রক্ষা করিনি। তোমাদের ওপর আমার এর বেশি ক্ষমতা ছিল না যে, আমি তোমাদের (আল্লাহর অবাধ্যতা করার) দাওয়াত দিয়েছিলাম আর তোমরা আমার কথা শুনেছিলে। সুতরাং এখন আমাকে দোষারোপ করো না, বরং নিজেদেরই দোষারোপ করো। না তোমাদের বিপদ মুক্তিতে আমি তোমাদের কোনো সাহায্য করতে পারি। না আমার বিপদ মুক্তিতে তোমরা কোনো সাহায্য করতে পার। এর আগে তোমরা যে আমাকে আল্লাহর শরিক সাব্যস্ত করেছিলে (আজ) আমি তা প্রত্যাখ্যান করলাম। যারা এ সীমালঙ্ঘন করেছিল আজ তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। (সূরা ইবরাহীম : ২২)।
সঠিক পথ ও পদ্ধতি অনুসরণ করে যে কাজ করে না সে ক্ষতিগ্রস্ত : আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : বলে দাও, আমি কি তোমাদের বলে দেবো, কর্মে কারা সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত? তারা সেই সব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সমস্ত দৌড়-ঝাঁপ সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, অথচ তারা মনে করে তারা খুবই ভালো কাজ করছে। (সূরা কাহ্ফ : ১০৩-১০৪)।
আমল গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য দু’টি শর্ত : এক. ইখলাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে হওয়া। দুই. সঠিক পথ ও পদ্ধতি অনুসরণ করে করা। উপরোক্ত কোনো একটি শর্ত লঙ্ঘিত হলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন : তার চেয়ে উত্তম দ্বীন আর কার হতে পারে, যে (তার গোটা অস্তিত্বসহ) নিজ চেহারাকে আল্লাহর সম্মুখে অবনত করেছে, সেই সঙ্গে সে সৎকর্মে অভ্যস্ত এবং একনিষ্ঠ ইবরাহীমের দ্বীন অনুসরণ করেছে। আর (এটা তো জানা কথা যে,) আল্লাহ ইবরাহীমকে নিজের বিশিষ্ট বন্ধু বানিয়ে নিয়েছিলেন। (সূরা নিসা : ১২৫)।
তাই কাফের যে আমল করে তা যত আন্তরিকতা নিয়েই করুক তা যেহেতু হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর আনীত দ্বীন অনুযায়ী হচ্ছে না, তাই তা গ্রহণযোগ্য নয়। আর মুনাফিক যে আমল করে যাচ্ছে, সে যত ভালো করেই আমল করুক না কেন, যেহেতু তার নিয়ত শুদ্ধ না, বরং তা লোক দেখানোর জন্য করছে, তাই তা গ্রহণযোগ্য নয়।
অনুরূপ যে বেদআত তথা নবআবিষ্কৃত কাজে লিপ্ত, মনগড়া বিভিন্ন আমল করে যাচ্ছে; সে যত আন্তরিকতা নিয়েই আমল করুক বা রাসূল (সা.)-এর প্রতি যত ভালোবাসা নিয়েই আমল করুক সে যেহেতু দ্বীন ও শরীয়তের নির্দেশিত পথে আমল করছে না; বরং নিজের মনগড়া পদ্ধতিতে করছে তাই তা গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে যাবতীয় কল্যাণের পথ অনুসরণ করে এবং সবরকম অকল্যাণের পথ পরিহার করে তাঁর সন্তুষ্টি মোতাবেক চলার তাওফিক দান করুন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন