ইহসান শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে- কোনো কাজ উত্তমরূপে সম্পাদন করা অথবা কাহারো প্রতি সদ্ব্যবহার। আরবি পরিভাষায় ইহসান অর্থ হচ্ছে- উত্তম কাজ সম্পাদন করা কিংবা কোনো কাজকে উত্তমরূপে সমাধা করা। গভীর দৃষ্টিতে কুরআনুল কারিম অধ্যয়ন করলে দেখা যাবে, ইহসান প্রসঙ্গটি আল কুরআনে দু’ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথমত, ‘হরফে জার’ ইলা প্রত্যয় যোগে। অথবা ‘হরফে জার’ বা প্রত্যয় যোগে। দ্বিতীয়ত, প্রত্যয় যোগহীনভাবে। যে ক্ষেত্রে ‘ইলা’ অথবা ‘বা’ প্রত্যয় যোগে ব্যবহৃত হয়েছে সে ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা বিশেষ কোনো ঘটনার সাথে এ ইহসান প্রযোজ্য বলে বিবেচিত হবে।
কিন্তু যেখানে প্রত্যয় যোগহীনভাবে মুহসিন, মুহসিনীনা এবং মুহসিনুনা শব্দের প্রয়োগ ঘটেছে, সেখানে সাধারণভাবে ভালো কাজ করা, সদ্ব্যবহার করা, উত্তমরূপে কার্য সম্পাদন করা ইত্যাদি অর্থই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। যেমন- ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ উত্তম কর্ম সম্পাদনকারীদের পারিশ্রমিক বিনষ্ট করে না।’ (সূরা তাওবাহ : রুকু ১৫)।
অপর এক আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘কি ভালো হতো যদি আমার জন্য পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করে পুনর্বার জন্মগ্রহণ করা সম্ভব হতো, তাহলে অবশ্যই আমি উত্তম কর্ম সম্পাদনকারীদের শামিল হতাম।’ (সূরা যুমার : রুকু ৬)। অন্যত্র আরো বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই আল্লাহ উত্তমকর্ম সম্পাদনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আল ইমরান : রুকু ১৪)।
বস্তুত: উত্তমকর্ম সম্পাদন করা এমন একটি গুণ যা প্রত্যেক উত্তম ও পুণ্যময় কার্যাবলিকে পরিবেষ্টন করে আছে। এ জন্য ইহসানের আকার-আকৃতি, গতি-প্রকৃতি ও শ্রেণিবিন্যাস নির্ণয় করা দুরূহ ব্যাপার। তবে ইহসানের সামগ্রিক প্রকৃতির মাঝে একটি সাধারণ প্রকৃতি হচ্ছে এই যে, অন্যের সাথে এমন সদ্ব্যবহার করা, যার ফলে তার অন্তর পুলকিত হয় এবং সে নিরবিচ্ছন্ন প্রশান্তি লাভ করে ধন্য হয়।
মহান আল্লাহপাক কোনো রকম সুপারিশ ও প্রচেষ্টা ছাড়াই হজরত ইউসুফ (আ.)কে কয়েদখানা থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং তার বাবা-মা ও ভাইদেরকে মিসরে নিয়ে এসেছিলেন। আল্লাহর এ ইহসানের শোকরগুজারি হজরত ইউসুফ (আ.) এভাবে আদায় করেছিলেন, ‘এবং আল্লাহপাক আমার ওপর ইহসান করেছেন, আমাকে কয়েদখানা থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং তোমাদের গ্রামাঞ্চল থেকে এখানে উপনীত করেছেন।’ (সূরা ইউসুফ : রুকু ১১)।
অনুরূপভাবে কারূনের কাহিনীর মাঝেও আল্লাহপাকের ইহসানের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তুমি ইহসান ও সদ্ব্যবহার করো, যেভাবে আল্লাহপাক তোমার প্রতি ইহসান করেছেন।’ (সূরা কাসাস : রুকু ৮)। মূলত ইনসাফ কারো কষ্ট, আরাম, দুঃখ ও সুখের প্রতি পরোয়া করে না। ইনসাফ প্রত্যেককেই তার অবশ্যম্ভাবী হক বা অধিকার প্রদান করে, কিন্তু ইহসানের ক্ষেত্রে এগুলোর প্রতি লক্ষ রাখা হয়।
এ জন্য আল্লাহপাক আদল ও ইনসাফের সাথে ইহসানের উল্লেখ করেছেন। তারপর ইহসানের একটি বিশিষ্ট ও প্রচলিত দিক অর্থাৎ আত্মীয়-প্রতিবেশীদের তাদের হক আদায়ের কথা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু ইহসান শুধুমাত্র হক বা অধিকার আদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এ ছাড়াও ইহসানের অসংখ্য প্রকার-প্রকরণ রয়েছে। সাধারণ মানুষ ছাড়াও বাবা-মা ও আত্মীয়, এতিম, অভাবী, আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, আশেপাশে অবস্থানকারী, মুসাফির এবং দাস-দাসীরাও ইহসান লাভের হকদার। এ জন্য মহান আল্লাহপাক তাদের সাথে বিশেষভাবে ইহসান করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইরশাদ হচ্ছে, ‘বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির প্রত্যেকটির জন্য আমি উত্তরাধিকারী করেছি এবং যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ, তাদেরকে তাদের অংশ দাও, আল্লাহ সর্ব বিষয়ের দ্রষ্টা।’ (সূরা নিসা : রুকু ৫)। তা ছাড়া বিভিন্ন আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে যে, ‘তোমরা মা-বাবার সাথে ইহসান করো।’ (সূরা ইসরাঈল : রুকু ৪, যুখরুফ: রুকু ৭)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন