শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল-কুরআনের এই কি মর্যাদা আমাদের কাছে

মুহাম্মদ হেদায়াতুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিয় রাসূলে কারীম (সা.) বলেছেন, ‘আহসানুল কালামি কালামুল্লাহ’ (সর্বোত্তম কালাম আল্লাহর কালাম) অন্যত্র বলেছেন- ‘খাইরু বিকাইল আরদি মাসাজিদুহ’ (জমিনের সর্বোত্তম স্থান মসজিদ)। আল-কুরআনের এই শ্রেষ্ঠত্বের কথা শুধু মুসলমানরাই নয়, বরং পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সেই জাহেলী ভাষাবিদদের আত্মসমর্পণের ঘোষণা ‘লাইসা হাযা-মিন কালামিল বাশার’-এর সূত্র ধরে এ যাবৎ বিশ্বের যে কোনো ধর্মাবলম্বী কুরআনের শত্রæ-মিত্র সকলেই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন।

আমরা মুসলমানরা বাস্তব জীবনে যতটুকুই মানি আর না মানি, কথাটি কিন্তু মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি। অন্তত যারা মসজিদের মুসল্লি তারা তো অবশ্যই বিশ্বাস করে যে, জীবনে-মরণে প্রধান অবলম্বন আল-কুরআন এবং একমাত্র কেন্দ্রস্থল সেই বাইতুল্লাহর প্রতিচ্ছবি মসজিদ ঘর।

আল্লাহ ওয়াদা করেছেন, যাদের অন্তরে কুরআন থাকবে জাহান্নামের আগুন তাদের স্পর্শ করবে না। আর যাদের অন্তর মসজিদের সাথে লেগে থাকবে হাশরের ময়দানে তারা আরশের ছায়া পাবে। তাই কুরআনের সঙ্গে এবং মসজিদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আত্মার সম্পর্ক এবং হৃদয়ের গভীরের সম্পর্ক।

কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্য ও আফসোসের ব্যাপার হলো আমাদের মসজিদগুলোতে কুরআন মাজীদের দুরবস্থার দিকে তাকালে তা বিশ্বাস হয় না; বরং এমন অবস্থা হয়ে থাকে যা দেখলে শত্রæদেরও করুণা না হয়ে পারবে না। শত্রুদেরও করুণা হবে কুরআনের প্রতি। করুণা হবে মসজিদের প্রতি-সর্বোপরি আমাদের মুসলমান নামের মানুষগুলোর প্রতি। কারণ, না মানলেও কুরআনের মর্যাদা সম্পর্কে এখন তারাও অনেকটা অবগত। একদম অজপাড়াগাঁয়ের জীর্ণ ছাপড়ার মসজিদ বলুন আর শহরের অভিজাত এলাকায় কোনো আলীশান মসজিদ বলুন, অধিকাংশ মসজিদে ঢুকলেই কুরআন মাজীদগুলোর যে করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে তা অবাক করার মতো এক লজ্জাজনক ব্যাপার।

কিছু ছেঁড়া-ফাড়া, কিছু বাঁধাই ছুটা, সেলাই খোলা- এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। আর ধুলামলিন যে কী পরিমাণ হয় তা তো সবার চোখের সামনে। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর হাত না লাগলে যা হবার তাই হয়ে থাকে। ধুলা-বালি জমতে জমতে ময়লার এমন স্তর পড়ে যায়, যা শুধু মসজিদের মতো পবিত্র জায়গাই নয় মানববসতির যেকোনো একটি সাধারণ পরিবেশেও বেমানান। যে মসজিদের এমন করুণ পরিস্থিতি এবং যে কুরআন মাজীদ আমাদের হাতে এমন নিগ্রহের শিকার সেই মসজিদে গিয়ে সেই কুরআন থেকে কীভাবে আমরা আত্মার পরিশুদ্ধির দীক্ষা নিব? অন্তরের পরিচ্ছন্নতার খোরাক পাব?

নিশ্চয়ই কুরআন ও মসজিদের সঙ্গে ভালোবাসার বিষয়টি ঈমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু তবুও বলতে হয় এবং বাস্তবতাও এটাই যে, একটি মসজিদে শত শত নিয়মিত মুসল্লি আসেন। একজন মুসল্লিও যদি এমন থাকতেন যার অন্তরে কুরআন ও মসজিদের কিংবা যেকোনো একটির পূর্ণ ভালোবাসা আছে অথবা তার গুরুত্বের উপলব্ধিটুকু অন্তত আছে তাহলেও মনে হয় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারত না।

কারণ আমরা যারা শহরের বসতিতে কিংবা গ্রামের জীর্ণ কুটিরে বাস করি তাদের কারো ঘরেই আমার মনে হয় সাধারণ একটি বই কিংবা একটি খাতা এমন অযতœ অবহেলায় ধুলামলিন হয়ে পড়ে থাকার কোনো সুযোগ কখনো পায় না। পড়ে থাকা বস্তুটা যদি আদবযোগ্য হয় তাহলে অন্তত কুঁড়েঘরের শ্রী রক্ষার জন্য হলেও তা সঙ্গে সঙ্গেই গুছিয়ে রাখা হয়। আর আমরা যারা আলীশান প্রাসাদের বাসিন্দা তাদের প্রাসাদে তো এমন দৃশ্য কখনো কল্পনা করাও কঠিন। অথচ যে মসজিদের কথা বলছি আমরা কিন্তু সে মসজিদেরও বাসিন্দা। শুধু ইহকালের নয় চিরকালের বাসিন্দা।

একটু লক্ষ করে দেখুন তো আপনার বুকসেলফে গল্প-উপন্যাসের যেসব বই আছে তার ওপরও কি এরকম ধুলাবালি কখনো জমেছে, যা আপনার মসজিদের কুরআন মাজীদের ওপর জমে আছে। আপনার কোনো অসুস্থতার সময় বা জীবনের সবচেয়ে ব্যস্ততার সময়েও কি আপনার বসবাসের কামরা এবং কামরার বইপত্র বা অন্য কোনো আসবাবপত্র এমন এলোমেলো হয়ে পড়েছিল যেমন এলোমেলো হয়ে বছরের পর বছর পড়ে আছে আপনার মসজিদের কুরআন মাজীদগুলো।

এখন যদি আমরা ভাবি যে, এটা আসলে কুরআনের প্রতি মসজিদের প্রতি আমাদের হৃদ্যতার অভাব, ভালোবাসার অভাব, সর্বোপরি আমাদের ঈমানের দুর্বলতা তবে কি আমাদের এ ভাবনা অমূলক হবে? অবশ্য শহরের এবং গ্রামের বিশেষ বিশেষ মসজিদগুলো যেহেতু সাধারণ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকরী কমিটির অধীনে থাকে তাই এ সমস্যার সমাধানে যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার হয় তা যেকোনো সাধারণ মুসল্লির পক্ষে অনেক ক্ষেত্রে একক ও পরিপূর্ণভাবে নেয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। যদিও যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব ততটুকুও আমরা সাধারণত করি না

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Riyazuddin Raju ২৬ আগস্ট, ২০২২, ৮:৪৯ এএম says : 0
মানব অন্তর কালিমাযুক্ত হয়ে কঠিন হয়ে যায়। দুনিয়ার প্রাচুর্যের মোহ ও প্রবৃত্তির চাহিদা নফসকে দুর্বল ও অসাড় করে ফেলে। মানুষকে এ পৃথিবীতে নফস প্রবৃত্তি ও শয়তানের সাথে যুদ্ধ ও সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। একজন যোদ্ধাকে যদি অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় প্রকার অস্ত্রের মুখাপেক্ষী হতে হয় তাহলে চিরন্তন সফলতা যে যুদ্ধে বিজয় লাভের উপর নির্ভরশীল এমন যুদ্ধের যোদ্ধাকে অবশ্যই সক্রিয় ও কার্যকর অস্ত্রে সজ্জিত হতে হবে। আর তা হচ্ছে স্বীয় নফসকে সংশোধন ও পবিত্রকরণ। এ ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহ ভিন্ন অন্য কোনো পথ ও পদ্ধতি নেই।
Total Reply(0)
Rabbul Islam Khan ২৬ আগস্ট, ২০২২, ৮:৫০ এএম says : 0
মহান আল্লাহ তা‘আলা এর নাম দিয়েছেন ফুরকান (পার্থক্যকারী) যা হালাল-হারাম হিদায়াত-গোমরাহি এবং হক ও বাতেলের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করে।
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ২৬ আগস্ট, ২০২২, ৮:৫০ এএম says : 0
“হে মানবকুল! তোমাদের কাছে উপদেশ বাণী এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময় হিদায়াত ও রহমত মুমিনদের জন্য।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৭]
Total Reply(0)
Antara Afrin ২৬ আগস্ট, ২০২২, ৮:৫০ এএম says : 0
কুরআনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো, যে ব্যক্তি এটি বুঝার ও অনুধাবন করার চেষ্টা করে সে তাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে হৃদয়ে নাড়া দেয়। অন্তরকে মার্জিত ও পরিশীলিত করে। আত্মাকে করে সংশোধিত। মানুষকে নেক আমলের প্রতি উৎসাহী করে তোলে। তার প্রভাব ও আছর শুধু মানবকুল পর্যন্তই সীমিত নয়; বরং একে যদি খুব মজবুত ও শক্ত পাহাড়ে অবতীর্ণ করানো হত তাহলে অবশ্যই সেটি কেঁপে উঠত।
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ২৬ আগস্ট, ২০২২, ৮:৫১ এএম says : 0
পৃথিবীতে অনেক মুসলিম আছেন, যারা তার পক্ষে যতটুকু সহজ ততটুকু শুধু তিলাওয়াতকেই কুরআনের যথাযথ হক আদায় ও মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট মনে করেন। তাদের সম্পর্কে প্রখ্যাত আল্লাহওয়ালা আলেম ও আবেদ ইমাম ফুদাইল ইবন ‘আইয়াদ্ব রহ. চমৎকার বলেছেন: إنما نزل القرآن ليعمل به، فاتخذ الناس قراءته عملا. “কুরআন-তদনুযায়ী-আমল করার জন্য অবতীর্ণ হলো আর লোকেরা শুধু তিলাওয়াতকেই আমল বানিয়ে বসে আছে।” [আখলাকু হামালাতিল কুরআন লিল-আজুররী, ৩৮] বলা হলো, কিভাবে আমল করবে? তিনি বললেন, তার হালালকে হালাল করবে, হারামকে হারাম করবে, আদেশ পালন করবে, নিষেধ থেকে বিরত থাকবে, আশ্চর্য বিষয়গুলো যথাযথভাবে অবহিত হবে।” এ কথাটি হাসান বসরী রহ. থেকেও বর্ণিত আছে।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন