শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কুরআনের পয়গাম : অন্যায়ের পক্ষাবলম্বন নয়-১

মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০৭ এএম | আপডেট : ১২:১৬ এএম, ১৮ নভেম্বর, ২০২২

নবীযুগের একটি ঘটনা। বিশ্র নামে বনু উবায়রিকের এক মুনাফিক ছিল। সে একবার হযরত রিফাআ রা.-এর ঘর থেকে খাদ্যশস্য ও হাতিয়ার চুরি করে। সাহাবী নবীজীর দরবারে গিয়ে তার নামে বিচার দেন। কিন্তু ওই লোক চুরি করে যাওয়ার সময় একটা চালাকি করে। খাদ্যশস্যের বস্তার মুখ কিছুটা আলগা করে রাখে। যার ফলে রাস্তায় অল্প-অল্প শস্যদানা পড়তে থাকে। এক ইহুদির বাড়ির দরজায় পৌঁছে সে বস্তার মুখ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। শুধু তাই নয়, চোরাই হাতিয়ারও সেই ইহুদির বাড়িতেই রেখে আসে।

তারপর নিজ গোত্রের কিছু লোককে বলে- আমি হাতিয়ার অমুকের বাড়িতে রেখে এসেছি। সেখানে গেলেই পাওয়া যাবে। এতে ওই ইহুদি ফেঁসে যাচ্ছিল। কারণ সরেজমিন যাচাই করে তার বাড়ি পর্যন্ত খাদ্যশস্য পড়ে থাকতে দেখা গেল। আবার চোরাই অস্ত্রও পাওয়া গেল তার বাড়িতেই। তাই প্রথমদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্দেহে পড়ে যান- ইহুদিই বুঝি চুরি করেছে! তাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলল, হাতিয়ার তো বিশর আমার এখানে রেখে গিয়েছে। কিন্তু এর সপক্ষে সে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারছিল না।

নবীজী তো আর গায়েবের খবর জানেন না, আল্লাহর পক্ষ থেকে যা জানানো হয় তিনি কেবল তা-ই জানেন। এ জন্য ধারণা করা হয়েছিল, এই লোক নিজেকে বাঁচানোর জন্যই বিশরের নাম নিচ্ছে। অপরদিকে বিশরের খান্দান বনু উবায়রিকের কিছু লোকজনও জেনেশুনে তার পক্ষ নিলো। তারা জোর দিয়ে বলল, বিশরের নয়; ওই ইহুদিরই শাস্তি হওয়া উচিত।

আল্লাহ যখন নবীজীকে প্রকৃত ঘটনা জানিয়ে দেন তখন বিশরের মুখোশ খুলে যায়। ইহুদিকে সম্পূর্ণ নিরপরাধ ঘোষণা করা হয়। (দ্র. তাফসীরে তবারী ৯/১৮৩; তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৪০৫; তাফসীরে কুরতুবী ৫/৩৭৫; তাফসীরে বাগাভী ১/৬৯৮)।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : আপনি খেয়ানতকারীদের পক্ষাবলম্বনকারী হবেন না। (সূরা নিসা : ১০৫)। আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন : যারা নিজেদের সঙ্গেই খেয়ানত করে আপনি তাদের পক্ষে বাগি¦তÐা করবেন না। আল্লাহ কোনো খেয়ানতকারী পাপিষ্ঠকে পছন্দ করেন না। (সূরা নিসা : ১০৭)।

আয়াত যদিও নাজিল হয়েছে বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, কিন্তু এতে সকল মুমিনের জন্যই রয়েছে শিক্ষা। অপরাধ করে অন্যের ওপর দোষ চাপানো নিকৃষ্ট কাজ; মুমিন এমনটি করতে পারে না। এ বিষয়ে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : যে ব্যক্তি কোনো দোষ বা পাপকর্মে লিপ্ত হয়, তারপর কোনো নির্দোষ ব্যক্তির ওপর তার দায় চাপায়, সে (আসলে) নিজের ওপর গুরুতর অপবাদ ও প্রকাশ্য গোনাহর ভার চাপিয়ে দিলো। (সূরা নিসা : ১১২)।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Rabbul Islam Khan ১৮ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৫৭ এএম says : 0
থিবীর প্রধান সব ধর্মমত যথা ইসলাম, খ্রিষ্টান, ইহুদি, বৌদ্ধ প্রভৃতিতে ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধাচরণের কথা বলা হয়েছে। পৃথিবীর সব দেশের প্রচলিত আইনে অন্যায় গর্হিত কাজ গণ্যে মাত্রাভেদে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
Total Reply(0)
Jahirul Islam ১৮ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৫৭ এএম says : 0
একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বীর জন্য ঈমানদার হওয়া অত্যাবশ্যক। একজন ঈমানদার ব্যক্তি মনেপ্রাণে অন্যায়কে বর্জন ও ঘৃণা করে।
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ১৮ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৫৬ এএম says : 0
সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানÑ এ তিনটির একটি অপরটির পরিপূরক। সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানের পরিপন্থী যেকোনো কাজ অন্যায়। তাই সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানকে বলা হয় ন্যায়ের সমার্থক। একজন সৎ ব্যক্তির পক্ষে কখনো কোনো অনৈতিক ও নীতিজ্ঞানবহির্ভূত কাজ করা সম্ভব নয়। যেকোনো অসৎ, অনৈতিক ও নীতিজ্ঞানবহির্ভূত কাজ অন্যায় হিসেবে পরিগণিত। ন্যায়ের বিপরীত হলো অন্যায়।
Total Reply(0)
Ismail Sagar ১৮ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৫৬ এএম says : 0
ন্যায় সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানকে আকৃষ্ট করে। পৃথিবীর যেকোনো দেশ ও সমাজ যত বেশি সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানসম্পন্ন মানুষজন দ্বারা সমৃদ্ধ হবে সে দেশ ও সমাজ তত বেশি আদর্শ ও ন্যায়নিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন