টঙ্গী তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিন গতকাল অতিবাহিত হয়েছে। আগামীকাল আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ইজতেমা। ভারতের সা’দ কান্ধলভীর অনুসারী তাবলীগ জামাতের দেশি বিদেশি শীর্ষ মুরুব্বিদের আ’ম ও খুসুসি (সাধারণ ও বিশেষ) বয়ানের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা।
দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনে টঙ্গীর তুরাগ নদীর পাড়ে লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা ও আশপাশের জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মুসল্লিরা এসে এ বৃহত্তম জুমার জামাতে শরিক হয়েছেন। জুমার নামাজে ইমামতি করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোশাররফ হোসেন।
গতকাল বাদ ফজর সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে আ’ম বয়ান করেন মাওলানা ওসমান। সকাল সাড়ে ৯টায় মুফতি আসাদুল্লাহ সুলতানপুরি তালিম বিষয়ে খুসুসি (বিশেষ) বয়ান করেন। জুমার আগে সালাতুত তাসবীহ ও ফাজায়েল বিষয়ে বয়ান করেন মুফতি ফয়জুর রহমান। জুমার খুৎবা পাঠ ও ইমামতি করেন মাওলানা মোশাররফ হোসেন। বাদ জুমা বয়ান করেন ভারতের মাওলানা চেরাগ আলী। বাদ আসর বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের আহলে শূরা সদস্য ভাই সাহাবুদ্দিন নাসিম বয়ান করেন। বাদ মাগরিব আ’ম বয়ান করেন ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা জামশেদ।
বয়ানে ওলামায়ে কেরাম বলেন, দাওয়াতের মেহনত হলো নবুওয়াতি মেহনত। এই মেহনত খুলুসিয়াত ও আজমতের সাথে যারা করবে তাদের যেকোন আমলের ফজিলত বহুগুণ বেড়ে যায়। জুমাপূর্ব বয়ানে বলা হয়, পরকালের চিরস্থায়ী সুখ শান্তির জন্য আমাদের প্রত্যককে দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বীনের দাওয়াতের কাজে জানমাল দিয়ে মেহনত করতে হবে। ঈমান আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবে না।
ইজতেমায় মূল বয়ান উর্দূতে হলেও অংশ নেয়া বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়।
এদিকে গতকাল ইজতেমা ময়দানে দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করেছেন। জুমার নামাজে অংশ নিতে প্রথম পর্বের ন্যায় গাজীপুর ও ঢাকাসহ আশপাশের জেলার মুসল্লিরা সকাল থেকে ময়দানে আসতে শুরু করেন। দুপুরের আগেই ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলে ময়দানে স্থান না পেয়ে সড়ক ও অলিগলিসহ বিভিন্ন স্থানে পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ, চাদর ও পলিথিন বিছিয়ে মুসল্লিরা জুমার নামাজে শরিক হন।
ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজে অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস.এম তরিকুল ইসলাম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রথম পর্বের ন্যায় দ্বিতীয় পর্বেও দেশের ৬৪ জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরাও অংশ নিয়েছেন। তুলনামূলকভাবে প্রথম পর্বের চেয়ে দ্বিতীয় পর্বে সাধারণ মুসল্লিদের সমাগম কম হলেও দ্বিতীয় পর্বে বিদেশি মুসল্লির আগমন বেশি হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচ হাজারের অধিক বিদেশি মুসল্লি ময়দানে এসে পৌঁছেছেন। এর মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক মুসল্লি ভারত থেকে আসেন বলে বিদেশি জামাতের জিম্মাদার ইনকিলাবকে জানিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মুসল্লিদের যা যা প্রয়োজন সবকিছুই করে দেয়া হয়েছে। কোন সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক তা পূরণ করা হবে। এ জন্য সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে। বিদেশি মুসল্লিদের প্রতি সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে যাতে তাদের কোনো সমস্যা না হয়। তাদের ওজু, গোসলের জন্য রাখা হয়েছে গরম ও ঠান্ডা উভয় প্রকার পানির ব্যবস্থা।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা : গতকাল ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনে মুসল্লিদের নিরাপত্তাদানে র্যাব, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, প্রথম পর্বের ন্যায় দ্বিতীয় পর্বেও ৫ স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। তবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ট্রাফিকের লোকবল বৃদ্ধি করে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। গতকাল থেকেই পুলিশ সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা মুসল্লিদের নিরাপত্তাদানে নিয়োজিত রয়েছেন বলে তিনি জানান।
তিন মুসল্লির মৃত্যু : গত বৃহস্পতিবার রাতে সুনামগঞ্জের ল²ীপুর চাঁনপুর এলাকার হযরত আলীর ছেলে কাজী আলাউদ্দিন (৬৬) বার্ধক্যজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেন। অপরদিকে ইজতেমায় আসার পথে পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- নরসিংদী জেলার বেলাব থানার সুরুজ মিয়া (৬০) ও গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানা এলাকার গোলজার (৪০)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন