শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

নুরজাহানদের জীবনে আসে না ঈদ আনন্দ

প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে
‘গরিবের আবার ঈদ। নেত্রকোনা থাইক্যা কুমিল্লায় আইছি ছোড মাইয়াডারে লগে লইয়া। বাপহারা তিনডা পোলা-মাইয়ার লাইগা এহনো ঈদের নতুন জামা-কাপড় জুডে নাই। আমি না অয় কোনরহমে একখান জাকাতের কাপড় যুগাইয়া নিমু। তয় আমার পোলা-মাইয়ারা কী ঈদে একখান নতুন জামা পরতে পারত না? পোলা মাইয়ার লাইগা ঈদের জামা কিনুনের লাই কয়ডা টেহা দেও না সাব...।’ জীবন আর জীবিকার তাগিদে পথ চলতে চলতে হাঁপিয়ে উঠা এক হতদরিদ্র নারী নুরজাহান। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচে ছোট মেয়ে সুরমাকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজে আসা লোকজনের কাছ থেকে সাহায্যের অর্থ চেয়ে নিচ্ছেন নুরজাহান। ঈদ মৌসুমের ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ে নুরজাহানের সাথে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। এক পর্যায়ে উপরের কথাগুলো অনেক কষ্ট থেকেই বললেন নুরজাহান। নেত্রকোনার চল্লিশা গ্রাম থেকে কুমিল্লা শহরে আসা নুরজাহান থাকেন নগরীর শাসনগাছা দুলালের কলোনিতে। সাত বছর বয়সী ছোট মেয়ে সুরমাকে সাথে নিয়ে রোজা শুরুর দুইদিন আগে ওই কলোনির ভাড়া ঘরে উঠেছেন। ঈদের এক/দুইদিন আগে চলে যাবেন নিজ গ্রাম নেত্রকোনার চল্লিশায়। নুরজাহানের স্বামী রতন মিয়া রিকশা চালাতো। বছর দুয়েক আগে মারা গেছে। দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে বড় মেয়ে ১৪ বছর বয়সী সোমা নেত্রকোনায় দাদার বাড়িতে থাকে। একমাত্র ছেলে নিজাম সেও দাদার বাড়িতে থেকে নেত্রকোনা চল্লিশা হাইস্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। নুরজাহান নেত্রকোনায় মানুষের বাড়িতে একবেলা ঝিয়ের কাজ, আরেক বেলা ছোট মেয়ে সুরমাকে সঙ্গে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত দুই বছর ধরে তিন সন্তানকে নিয়ে সংগ্রামী জীবন অতিবাহিত করছেন নুরজাহান। রোজায় লোকজনের কাছ থেকে সাহায্য বা দান খয়রাত বেশি পাওয়া যায়, এমন আশায় নেত্রকোনা থেকে ছোট মেয়ে সুরমাকে সঙ্গে নিয়ে কুমিল্লা নগরীর পথে-ঘাটে সাহায্যের জন্য নেমেছেন। সাহায্যের সঙ্গে ছেলে মেয়েদের জন্য ঈদের নতুন জামা কাপড় অনুদান চেয়েও লোকজনের কাছে আকুতি মিনতি চলে নুরজাহানের। কিন্তু ঈদ ঘনিয়ে এলেও নুরজাহানের সন্তানদের জন্য জুটে না ঈদের নতুন জামা। নুরজাহানদের জন্য বয়ে আসেনা ঈদের আনন্দ বার্তা। কেবল নুরজাহানই নয়, তার মতো হাজারো হতদরিদ্র নারী পরিবার পরিজন নিয়ে একটু ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করার আশায় সাহায্যের জন্য নগরীর পথে-ঘাটে লোকজনের, দোকান-পাটে ব্যবসায়িদের আর বাসা-বাড়িতে গিয়ে গৃহিণীদের হাত-পা জড়িয়ে ধরছেন। কুমিল্লা নগরীর সংরাইশ, টিক্কাচর, শাসনগাছা, কাটাবিল, ধর্মপুর, শাসনগাছা এলাকার বস্তিবাসীদের মধ্যে অসংখ্য হতদরিদ্র নারী, কর্মঅক্ষম পুরুষ তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে এবারের রোজায় আর্থিক সাহায্যের আশায় পথে নেমেছেন। আবার হতদরিদ্র সংসারের শিশুরাও দলবেঁধে সাহায্যের জন্য লোকজনের কাছে হাত বাড়াচ্ছে। এসব শিশুর অভিভাবকরা মূলত দিনমজুরি বা ভিক্ষাবৃত্তি করেই জীবিকা নির্বাহ করে। নিষ্ঠুর বাস্তবতায় বেড়ে ওঠা সন্তানদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে পারলেও বছরের দু’টি ঈদের কোনটিতেই ওদের মুখে ভালো খাবার আর গায়ে নতুন জামা পরাতে পারেন না তাদের মা বাবা। বছর ঘুরে রোজা আসে, ঈদ আসে কিন্তু হতদরিদ্র হাজারো পরিবারে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে না ঈদ! বস্তির ছোট্র ঘরের ফাঁক দিয়ে ঈদের সোনালী সকালের সূর্যের আলো অসহায় মানুষগুলোর ওপর পড়লেও উৎসবহীন অন্ধকারেই কাটে আনন্দমুখর দিনটি। অথচ সমাজের বিত্তশালীসহ নামী-দামী প্রতিষ্ঠানগুলো হতদরিদ্র মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ালে ঈদের দিনটি ওদের জন্য হাসি আনন্দোলোয় আলোকিত ও ধনী আর দরিদ্রের ব্যবধান দূর করার এক মহামিলনের দিন হয়ে ওঠতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন