ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে জাল দলিল, জাল খারিজ পর্চা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামসহ ৩ জন জাল দলিল প্রস্তুতকারিকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের হাতে আটক জাল দলিল প্রস্তুতকারিরা হলো- গৌরীপাড়া (থানাপাড়া) গ্রামের মৃত সুলতানুল আলমের ছেলে ফুলবাড়ী সাবরেজিষ্টারি অফিসের দলিল লেখক সোহবার হোসেন সুজন (৪০), উপজেলার শ্রীহরিপুর গ্রামের সোলায়মান আলীর ছেলে দলিল লেখক আব্দুল জলিল (৪৫) ও তাদের সহযোগী গৌরীপাড়া থানাপাড়া গ্রামের এনামুল হকের ছেলে নাজির ইসলাম (২৮)। গত বৃহস্পতিবার সন্ধা ৬টায় পৌর শহরের পূর্ব গৌরীপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জাল দলিল তৈরির সরঞ্জামসহ তাদেরকে আটক করা হয়। এই ঘটনায় ওইদিন রাত ৮টায় ফুলবাড়ী থানার এস আই আক্কেল আলী বাদি হয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধে ২৫ এর (ক)ধারায় ধৃত ৩ জনসহ অজ্ঞাতনামা ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ফুলবাড়ী থানার ওসি মকছেদ আলী জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এহেতেশাম রেজার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পূর্ব গৌরীপাড়া সুজন কম্পিউটারের দোকানে অভিযান চালিয়ে জাল দলিল প্রস্তুত করার সময় ৫০টির অধিক পাকিস্তানি স্ট্যাম্প, ১০টির অধিক জাল দলিল, জাল খারিজ পর্চা, খাজনার জাল রশিদপত্র, খাজনার ফি আদায়ের জাল ডিসিআর ফরমসহ দেড় শতাধিক বিভিন্ন ভূমি কর্মকর্তার নামের সীল ও সাব রেজিষ্টারি অফিসের সীল জব্দ করা হয়। এ সময় জাল দলিল প্রস্তুত করার অপরাধে ৩ জনকে আটক করা হয়। কিন্তু ভ্রাম্যমাণন আদালতের মাধ্যমে সঠিক অনুসন্ধান করার সুযোগ না থাকায় বিষয়টি অধিকতর অনুসন্ধান করে অন্যান্য অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় নেয়ার উদ্দ্যেশে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। ফুলবাড়ী সাব রেজিষ্টারি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় খানসেনারা সাব রেজিষ্টারি অফিসে অগ্নিসংযোগ করায় ওই সময়ের সাব রেজিষ্টারি অফিসে থাকা ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত রেজিষ্ট্রীকৃত দলিলের ভলিউম পুড়ে যায়। এ কারণে ওই সময়ের রেজিষ্ট্রীকৃত দলিলের ভলিউম সংরক্ষন না থাকায় ফুলবাড়ী সাবরেজিষ্ট্রারি অফিসের একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন থেকে পাকিস্তানি স্ট্যাম্প এর উপর জাল দলিল তৈরি করে আসছিল। একই সাথে সহকারি কমিশনার ভূমির সীল, স্বাক্ষর জাল করে জাল খারিজ পর্চা, জাল ডিসিআর তৈরি করে দীর্ঘদিন থেকে জমি রেজিষ্ট্রির কাজ করে আসছিল। যার ফলে ফুলবাড়ীতে অধিকাংশ জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। সহকারি কমিশনার ভূমি মহসিন মৃধা বলেন, জমির মালিকানা নিয়ে চলমান মিসকেস গুলোর অধিকাংশ দলিল ১৯৬৪ সাল থেকে ৭০ সালের একই সময়ের একই তারিখে একই নাম্বারের দলিল প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। এ সকল দলিল সবই পরবর্তীতে তৈরি করা। এ কারণে এই উপজেলায় দিন দিন জমির মালিকানা নিয়ে মামলা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন