তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বাপা’র সভাপতি সুলতানা কামাল বলেছেন, দুর্বৃত্তদের হাতে দেশ ছেড়ে দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। বর্তমানে সমাজে সহমর্মিতা ও সংবেদনশীলতার অভাব তৈরি হয়েছে। কারণ আমাদের সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাগুলোকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অথবা ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। একটা সমাজে যদি সহমর্মিতা না থাকে তাহলে তার পৌর, প্রশাসনিক কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো ব্যবস্থাই কার্যকর থাকে না। তিনি বলেন, উন্নয়ন মানে শুধু কাঠামোগত উন্নয়ন বুঝি। কিন্তু আমরা যে ভেতরে ভেতরে একে অপরের সাথে সংযুক্ত সেই বোধটাই নষ্ট করে দিচ্ছি ইট-পাথরের উন্নয়ন দিয়ে। এটা একটি ভারসাম্যহীনতা। কাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিকীকরণের উন্নতি সাধনও জরুরি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র উদ্যোগে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন : পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক প্রত্যাশা’-শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। বাপা’র সভাপতি সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল-এর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপা’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)’র সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান। এতে উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য রাখেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক মো. শাহজাহান মৃধা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য স্থপতি সালমা এ শাফী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাপা’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য এম এস সিদ্দিকী ও ইবনুল সাঈদ রানা।
সুলতানা কামাল বলেন, আমরা এখানে এসেছি আমাদের নৈতিকতার তাগিদে। কিন্তু যারা নগর পিতা হিসেবে দায়িত্ব নিতে চায় তারা নিজেরাই জানে না পরিবেশের প্রতি তাদের কি দায়িত্ব বা কর্তব্য। আজ সারা ঢাকা পলিথিন বা প্লাস্টিকে আবৃত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। তিনি এসডিজি লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে নগর নেতৃত্বের পরিবেশ সংরক্ষণে বলিষ্ট ভ‚মিকার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
শরীফ জামিল বলেন, দেশব্যাপী ডেঙ্গু বিস্তারে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতা অমার্জনীয়। অদূর ভবিষ্যতে ডেঙ্গু আক্রমণসহ ‘করোনা’র মতো মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকা নগরবাসী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীদের কাছ থেকে পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের ব্যাপারে আরো প্রতিজ্ঞা ও সংবেদনশীল আচরণ আশা করে।
ড. আদিল মুহাম্মদ খান তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ঢাকার অধিবাসীদের নাগরিক জীবনের বিভিন্ন সঙ্কটের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারী সংস্থার সাথে উত্তর ও দক্ষিণ ঢাকা কর্তৃপক্ষের অধিকতর সমন্বয় প্রয়োজন। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ ঢাকার নগর কর্তৃপক্ষসমূহের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করতে হবে।
স্থপতি সালমা এ শাফী বলেন, যে শহর বসবাসের উপযোগী না সেটা কোনো শহর হতে পারে না। ঢাকা বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ ও পানি দূষণসহ বিভিন্ন দূষণে আক্রান্ত একটি শহর। আমরা ইতিবাচকভাবে একটি গ্রহণযোগ্য উন্নয়ন চাই।
সংবাদ সম্মেলনে বাপা’র পক্ষ থেকে ১৭ দফা ইস্তেহার ও সুপারিশ প্রদান করা হয়।
এগুলো মধ্যে রযেছে নগরবাসীর জন্য বিভিন্ন নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারী সংস্থার মধ্যে এবং ঢাকা উত্তর এবং ঢাকা দক্ষিণের মধ্যে অধিকতর সমন্বয় সাধন। জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসন। জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ। বায়ুদূষণ রোধ ও পরিবেশের উন্নয়ন। প্লাস্টিক দূষণ রোধ, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ, দৃষ্টি দূষণ রোধ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, উন্মুক্ত স্থান, পার্ক, খেলার মাঠ, বিনোদন সুবিধাদি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন