সীমান্তে কমছে না গরুর প্রতি অমানবিক আচরণ। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চোরাকারবারিরা গরু পাচারে বেছে নিয়েছেন ভিন্ন কৌশল। রাতের অন্ধকার আর ঘনকুয়াশাকে কাজে লাগিয়ে কলাগাছ অথবা কাশ খড়ের ভেলার সাথে গরুর পা বেঁধে ভাসিয়ে দিচ্ছেন ব্রহ্মপুত্রের স্রোতে।
গত এক মাস ধরে সীমান্তের ওপার থেকে ভেসে আসা শত শত গরু মারা যায় কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের চরে। দূষিত হয়ে পড়েছে পরিবেশ। এ অবস্থায় পরিবেশ রক্ষাসহ গরুর প্রতি এমন নির্মমতা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
শুধু একটি দুটি চর নয়, নদের বুকে জেগে ওঠা ১০ থেকে ১২টি ডুবো চরে পড়ে আছে শত শত মৃত গরু। বেশি লাভের আশায় ভারতীয় চোরাকারবারিরা ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবেশ মুখ ভারতের কালাইয়ের চর উজান থেকে বাংলাদেশি চোরাকারবারিদের কাছে স্রোতে ভাসিয়ে দেয় এসব গরু। রাতের অন্ধকার এবং ঘনকুয়াশায় দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব গরু প্রবেশ করছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। কিছু গরু এদেশের চোরাকারবারিরা উদ্ধার করলেও দৃষ্টির আড়ালে চলে যাওয়া গরুগুলো অতিরিক্ত ঠান্ডয় মারা যায়। এসব মৃত গরু আটকা পড়ছে ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন চরে।
সরেজমিনে কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর যাত্রাপুর, চিরা খাওয়া, ঝুনকার চর, অষ্টআশির চর, রলাকাটার চরসহ বেশকিছু চরে ঘুরে দেখা যায় নদের দুই পাড়ের এসব ডুবো চরে অগণিত মৃত গরু পড়ে আছে। কোন কোন গরুর চামড়া ছিলে নিয়ে গেছে স্থানীয় মুছিরা।
চর যাত্রাপুরের নৌকার মাঝি মো. কোবাদ মোল্লা জানান, চর যাত্রাপুরের ডুবো চরে গত চার/পাঁচ দিনে মৃত ৯টি গরু আটকা পড়েছে। উজানের চরগুলোতে আরো অসংখ্য মৃত গরু আটকে আছে।
আরেক মাঝি মো. শাহ্ আলম মিয়া জানান, আগে কাঁটাতারের উপর দিয়ে চাঙ্গে করে গরু পাচার হয়ে আসতো। এখন কড়া পাহারা ও বিএসএফের গুলির ভয়ে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারতের উজান থেকে গরুর পা বেঁধে রাতে কুয়াশার মধ্যে পানির স্রোতে ছেড়ে দিয়ে গরু পাচার করছে চোরাকারবারিরা। এসব গরুর যেগুলো বাংলাদেশের চোরাকারবারিরা ধরতে পারছে সেগুলো বেঁচে যাচ্ছে। আর যেগুলো ধরতে পারছে না সেগুলো পানিতে ডুবে ঠান্ডায় মারা যাচ্ছে।
চর ভগবতী পুরের জলিল মোল্লা জানান, তার বাড়ির পাশের দুইটি ডুবো চরে শতাধিক মৃত গরু পড়ে আছে। প্রতিদিনই এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব মরা গরু পচে পানি যেমন দূষিত হচ্ছে তেমনি মারাত্মক দুর্গন্ধে বাড়িতে থাকা যাচ্ছে না। আগে নদীর পানিতে গোসলসহ বিভিন্ন কাজ সারলেও এখন নদের পাড়েই আসা যাচ্ছে না।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী সরকার জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়নের ১০ থেকে ১২টি ডুবোচরে অসংখ্য মৃত গরু আটকা পড়ে আছে। এতে করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এমন অমানবিক ভাবে গরুর পা বেঁধে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে গরু পাচার রোধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি মৃত গরুগুলো অপসারণ করে পরিবেশ রক্ষারও দাবি জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবির পরিচালক মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, দু’দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কড়া নজরদারীর মাধ্যেও নদী পথে ভিন্ন কৌশলে দু’দেশের চোরাকারবারিরা গরু পাচার করায় অনেক গরু মারা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সচেতন রয়েছি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন জানান, এমন নির্দয় ভাবে গরু পাচার এবং গরুর মৃত্যুর ঘটনাটি শুনেছি। গরু পাচার রোধের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে। গরু পাচার রোধসহ ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় পড়ে থাকা অসংখ্য মৃত গরু দ্রুত অপসারণ করে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসবে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন