বিষয় : বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
আছিয়া কামাল
সিনিয়র শিক্ষক (সামাজিক বিজ্ঞান)
ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ
অধ্যায় : বাংলাদেশের অর্থনীতি
সুধা ও রনি একই শ্রেণিতে পড়ে। রনির বাবা একজন কারখানার শ্রমিক। বড় ভাই বেকার তাই অসচ্ছল সংসার তাদের। অথচ সুধার বাবা বিদেশে চাকরি করেন, প্রচুর টাকা পাঠান তাই তাদের সংসার খুবই সচ্ছল। এরূপ বিভিন্ন পেশায় মানুষের আয় ও উৎপাদন জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি ঘটিয়ে দেশের উন্নতি ঘটায়।
(ক) বাংলাদেশ কী ধরনের দেশ? (খ) মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বলতে কী বোঝায়? (গ) রনির বেকার ভাইয়ের ন্যায় অন্যান্য বেকাররা দেশের মাথাপিছু আয়ে কি কোনো প্রভাব রাখে? ব্যাখ্যা কর। (ঘ) জাতীয় উন্নয়নে উদ্দীপকের সর্বশেষ বক্তব্যের ভূমিকা পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
(ক) উত্তর : বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ।
(খ) উত্তর : যা কিছু প্রতি বছর দেশের অভ্যন্তরে উৎপন্ন হয় তাকে অভ্যন্তরীণ বা দেশজ উৎপাদন বা এৎড়ংং উড়সবংঃরপ চৎড়ফঁপঃরড়হ বা এউচ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, মোট দেশজ বা অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে বা এক বছরে কোনো দেশের ভৌগোলিক সীমানার অভ্যন্তরে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবার বাজারমূল্যের সমষ্টি। এ ক্ষেত্রে বিদেশে অবস্থানরত দেশীয় নাগরিকদের দ্বারা সৃষ্ট উৎপাদন বা আয় এবং দেশীয় আমদানি রপ্তানির হিসাব ধরা হয় না। তবে এ ক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরে দেশীয় জনগণ ও বিদেশি নাগরিকদের মূলধন এবং বিনিয়োগের অবদানকে বিবেচনা করা হয়।
(গ) উত্তর : মাথাপিছু আয় বলতে কোনো দেশের জনপ্রতি বার্ষিক আয়কে বোঝায়। কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন বা আয়কে ওই বছরের মধ্যে সময়ের মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ হলে মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়।
মাথাপিছু আয় =
কোনো নির্দিষ্ট বছরের মোট জাতীয় আয়
ওই বছরের মধ্যে সময়ের মোট জনসংখ্যা
সুতরাং বলা যায়, দেশের বেকাররাও মোট জনসংখ্যার অন্তর্ভুক্ত। তাই দেশের মাথাপিছু আয়ে বেকারদেরও প্রভাব রয়েছে। কোনো দেশের মাথাপিছু আয় থেকে ওই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র পাওয়া যায়। কোনো দেশের মাথাপিছু আয় প্রতি বছর বৃদ্ধি পেলে বুঝা যায় সে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটছে। অর্থাৎ দেশের কৃষি, শিল্প, সেবাসহ যাবতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের আয় বৃদ্ধি করা। জনগণের আয় বৃদ্ধি পেলে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। দারিদ্র্য থেকে যুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষ যদি বেকার থাকে, তবে দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন ও আয়ে তাদের কোনো অংশগ্রহণ বা অবদান থাকে না। ফলে সে দেশের মাথাপিছু আয় কম হবে। মাথাপিছু আয় বা জনপ্রতি বার্ষিক আয় কম হলে বুঝতে হবে সে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। সুতরাং কোনো দেশের বেকার সমস্যা সে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির অন্তরায়।
(ঘ) উত্তর : বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নে মোট জাতীয় উৎপাদন ও মোট জাতীয় আয়ের ভূমিকা অত্যধিক। কোনো দেশের জনগণ এক বছরে দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে যত চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন করে তার আর্থিক মূল্যের সমষ্টিকে মোট জাতীয় উৎপাদন বলে। আর জাতীয় উৎপাদনের মোট আর্থিক মূল্যকে মোট জাতীয় আয় বলা হয়। বাংলাদেশ নানা সমস্যায় জর্জরিত তবু এখানে উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত। উন্নয়নশীল দেশে উৎপাদন যত বৃদ্ধি পায় আয়ও তত বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদন ও আয় যত বৃদ্ধি পাবে, উন্নয়নও ততই সহজতর হবে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি হলেও তাদের অধিকাংশই বেকার, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী শ্রেণির। যারা কোনোরূপ উৎপাদন বা আয়ের সাথে জড়িত নয়। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের সিংহভাগ উৎপাদন নষ্ট করে বিধায় প্রতি বছর বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদন হ্রাস পায়। তথাপি মোট জাতীয় আয়ও হ্রাস পায়, যা যে কোনো দেশের উন্নয়নের অন্তরায়। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য তাই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটিয়ে কৃষি, শিল্প কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। দূষিত বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করতে হবে। আমদানি-রপ্তানির সুবিধার্থে অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এভাবে বাংলাদেশের জনগণ কর্তৃক নানা কাজের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে যত বেশি চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবায় উৎপাদন ঘটবে তত বেশি দেশের আয় বৃদ্ধি পাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন