বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

চীনে পড়তে যাওয়া ঠাকুরগাঁওয়ের শিক্ষার্থীর প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন

আমাদেরকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৩:৩০ পিএম

“ছেলে আমার বিরাট অফিসার হবে এ স্বপ্ন নিয়ে পাঠাইছিলাম চীনদেশে। এখন শুধু রাতদিন নামাজ পড়ে মোনাজাত করি আমার ছেলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুক”। বলতে বলতে চোখে জল আসলো বয়োবৃদ্ধ খাদেমুল ইসলামের,যার ছেলে মোকসেদুল মোমিন এখন চীনে পড়তে গিয়ে আটকে পড়েছে। আর বারান্দায় তখন মা মনোয়ারা বেগমের বিলাপ , “ আমার ছেলেরে আমার কাছে এনে দাও , আর কিছু চাইনা।”

মঙ্গলবার দুপুরে এমনই বাষ্পরুদ্ধ পরিবেশ দেখা গেলো চীনে পড়তে যাওয়া ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোলাখুড়ি গ্রামের মোকছেদুল মোমিনের বাড়িতে।

চীনে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে যাওয়া প্রায় চল্লিশ জন শিক্ষার্থীর বাড়িতে এখন মূর্তমান আতংক হয়ে দেখা দিয়েছে টিভি চ্যানেল সংবাদপত্র আর মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া চীনের করোনাভাইরাস। ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী রয়েছেন চীনে। দ্রæত দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি আহব্বান চীনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ চীনা প্রবাসী মানুষদের স্বজনদের। দিনের পর দিন দুশ্চিন্তা ও আতঙ্ক বেড়েই চলছে এসব পরিবারের । সেই সঙ্গে চিন্তায় রয়েছেন এলাকাবাসীও।

মোকসেদুল মোমিনের সাথে প্রায় প্রতিদিন যোগাযোগ হয় ইমোর ভিডিওকলের মাধ্যমে তার বাবা-মা’র। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে ফসলের টাকা জরো করে আর কিছু জমি বিক্রি কওে ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় পড়াশোনার জন্য চীনে পাঠায় তার পরিবার। ছেলের পড়াশুনা , নতুন জায়গায় ধীরে ধীরে খাপ খেয়ে নেয়ার খবর পেতে গিয়ে বাবা-মা’র স্বপ্ন যখন আকাশ ছুঁই ছুঁই তখনই একদিন হঠাৎ টিভিতে চীনে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর কথা শুনে আঁৎকে ওঠে পরিবারটির। দুশ্চিন্তায় পড়ে যান সকলেই। ছেলের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ হওয়ার পরও চিন্তার শেষ নেই বাবা মায়ের।

বাবা খাদেমুল ইমলাম জানান, অনেক কষ্টে কৃষিকাজ করে আদরের ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি। পড়াশোনা করে বুড়ো বাবা-মায়ের পাশে থাকবে, পূরণ করবে আমাদের সকল স্বপ্ন। কিন্তু এখন তো শুনতেছি সেখানে যে বালাই (ভাইরাস) তাতে কতো লোকই মারা গেছে। যদি এই বালাই (ভাইরাস) না কমে তাহলে আমার ছেলেকে সুষ্ঠুভাবে আমার দেশে ফিরিয়ে আনতে আমি প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন করছি।

চীন থেকে এক ভিডিও বার্তায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন মোকছেদুল মমিন। তিনি বলেন, রুম থেকে বের হতে পারছি না। আমাদের নিষেধ করা হয়েছে। আমরা যাতে খুব প্রয়োজন ছাড়া বের না হই এমনি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন করছি যাতে দ্রæত আমাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

তবে নাসির উদ্দিন নামের আরেক শিক্ষার্থী ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, আমাদের ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা সব-সময়ই আমাদের স্বাস্থ্যের খবর রাখছেন। আমরা যারা এখানে এসেছি এখন পর্যন্ত কারো কোন সমস্যা হয়নি। তবে পরিবারের স্বজনদের বলতে চাই চিন্তার কারণ নেই। আশা করি আমরা ভালো থাকবো।

চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২৬ জন এবং আক্রান্তের সংখ্যা বিশ হাজারে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ)।

ছেলে আহমেদুল হকের জন্য দুশ্চিন্তায় রাণীশংকৈলের নেকমরদে অবস্থানরত তার পিতা আব্দুল হক। ৪ বছর আগে পড়াশোনার জন্য চীনে সন্তানকে পাঠান তিনি। খুব ভালোই যাচ্ছিলো তার ছেলেসহ পরিবারের সকলের দিনকাল। চীনের এই ভাইরাসের কথা শোনার পরই যেন সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে। যদিও সন্তান বলেছেন, তিনি সুস্থ, এরপরও আমরা আতঙ্কে অভিভাবকরা।

শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বাংলাদেশ সরকার চীনে অবস্থানরত শতাধিক বাংলাদেশি যাতে দেশে আসতে পারে সেটার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলার বেশ কিছু ছাত্র ও ব্যবসায়ী এখনো চীনে রয়ে গেছে। তাদের মধ্যে সদর উপজেলার একজন ছাত্র একটি ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশে আশার আকুতি জানিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানোর।
জেলা প্রশাসক ডঃ কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, করোনা ভাইরাস প্রশ্নে সতর্কতা , আক্রান্ত হলে জরুরী ব্যবস্থা নেয়া ও জেলার যারা চীনদেশে অবস্থান করছেন পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ কওে তাদের খোঁজ খবর নেয়া জেলা প্রশাসনের এখন প্রাত্যহিক কাজ। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথেও এ ব্যাপারে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।

এদিকে চীনের উহান প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঠাকুরগাঁওয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ। ২ শ সয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্য রোগীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ৭ সয্যাবিশিষ্ট আইসুলেসন ইউনিট গঠন করা হয়েছে। একই সাথে প্রত্যেক থানা হেলথ কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিকে ১ টি করে সয্যা বা কেবিন অন্য রোগীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন।

সিভিল সার্জন ডাঃ আনোয়ারুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন , স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ি জেলার সবরকম ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সাথে এটা প্রচার করা হচ্ছে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত কোনো রোগী বা সেই রোগ বলে সন্দেহ করা হলে সঙ্গে সঙ্গে যেন সদর হাসপাতালে খবর দেয়া হয় এবং খবর পাওয়া মাত্রই নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে আনা হয়। তিনি বলেন , এই ব্যবস্থাপনার অন্যতম দিক হচ্ছে কোনোভাবেই যেন আক্রান্ত রোগীর জীবাণু অন্য কারো ভেতর সংক্রামিত হতে না পারে।

সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ চপল জানান , সদর হাসপাতাল সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগীদের বিশাল চাপের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, একই সাথে সীমিত আকারে নীপা ভাইরাস রোগের মোকাবেলার বিষয়টিও তাদের চর্চ্চায় আছে যা হাসপাতালের এই টিমকে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে তা মোকাবেলায় কাজ দেবে। যদিও করোনা ভাইরাস ডেঙ্গুর চাইতেও মারাত্মক যা মোকাবেলা করতে চীনের মতো উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে। আমরা সব ধরনের চেষ্টা করবো এই রোগ হলে রোগ মোকাবেলা করতে , লক্ষণগুলো সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে এবং রোগ যেন না ছড়ায় সে ব্যপারে কি কি ব্যবস্থা নেয়া যায় তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন