শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাণের উৎসব

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

মেলা শুরু হয়েছে। এখনো মেলা জমে উঠেনি। খ্যাতিমান লেখকদের বই আসেনি বললেই চলে। নতুনদের বইয়ে সয়লাব। বেচাকেনা শীঘ্রই বাড়বে।
-বি.স.


বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এবারের মেলা শুরু হয় ২ফেব্রæয়ারি থেকে। প্রতিদিনই আসছে পাঠকদের জন্য নতুন নতুন বই। চাহিদার কথা বিবেচায় নিয়ে প্রকাশকরাও মেলায় আনছেন সব বয়সের পাঠকের জন্য নতুন বই।
মেলা শুরুর দুই একদিন পাঠক ও দর্শনার্থী কম থাকলেও দিন বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে পাঠকের আনাগোনা। মুখরিত হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গন। বই প্রেমিদের হাতে সোভা পাচ্ছে নতুন বইয়ের ব্যাগ। অনেকে আবার মেলা থেকে কেনা প্রিয় বইটির কয়েটি পাতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই পড়ে ফেলছেন। অনেকে আবার গাছের নিচে, কেউ কেউ সোহরাওর্য়াদী উদ্যানের লেকের পাড়ে বসে বইয়ের পাতা উলট পালট করে দেখছেন আপন মনে। কোন কোন পাঠক আসছেন নতুন বইয়ের খোঁজে। কোন পাঠক আসছেন পুরোনো কোন প্রিয় বইটি কিনতে। শিশু পাঠকরা খোঁজছে রঙবেরঙের বই। তবে তাদের ছড়া ও ভুতের গল্পের বইই বেশি প্রিয়।
মাসব্যাপী গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্ববৃহৎ পরিসরে আয়োজিত হচ্ছে এবারের গ্রন্থমেলা। শুধু পরিসর নয়, বেড়েছে প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যাও। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু রচিত এবং বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।
বাঙালির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা অর্জনের এই পথচলাকে এবার উদ্যাপন করা হচ্ছে মেলাজুড়ে। মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের নামকরণ করা হয়েছে ভাষা শহীদ বরকতের নামে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণকে চারটি চত্বরে ভাগ করে উৎসর্গ করা হয় ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, জব্বার ও শফিউরের নামে।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৯৪টি ইউনিটসহ মোট ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ৩৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়। এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। ১৫২টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ এবং ছয়টি উন্মুক্ত স্টল দেয়া হয়েছে। এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। এই কর্নারকে শিশু-কিশোরদের বিনোদন ও শিক্ষামূলক উপকরণে সজ্জিত করা হয়েছে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও ‘শিশুপ্রহর’ থাকছে।
বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীসংস্থার শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ। ঐতিহাসিক ভাষার গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি পরিবেশন করা হয়।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এবারের একুশে গ্রন্থমেলার অন্যতম আকর্ষণ বঙ্গবন্ধুর নতুন গ্রন্থ আমার দেখা নয়াচীন-এর প্রকাশনা। আমি বঙ্গবন্ধুর এ গ্রন্থের প্রকাশক বাংলা একাডেমি এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করি অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং কারাগারের রোজনামচা-এর মতো এই গ্রন্থটিও দেশি-বিদেশি পাঠকের কাছে আদৃত হবে। বঙ্গবন্ধু যে কেবল রাজনীতিক ও রাষ্ট্রনায়কই ছিলেন না, একই সঙ্গে ছিলেন একজন অসামান্য লেখক- এই বইগুলোর তার প্রামাণ্য দলিল হয়ে রইল। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৩টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে যা প্রতিটি বাংলাভাষী মানুষের জন্যই আনন্দের বিষয়।
স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। প্রকাশক প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
নিখিল প্রকাশনের সত্ত্বাধিকারী নিখিল চন্দ্র শীল বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পাঠকদের জন্য তার প্রকাশনী সংস্থা থেকে এসেছে নতুন ১২টি বই। এছাড়াও নতুন পুরাতন মিলে ১৭৫টির মতো বই এ বছর পাঠকদের জন্য নিয়ে আসছেন তারা। তবে নবীন লেখকদের বই গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তাকর্মীরা। নিরাপত্তার জন্য মেলার এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রন্থমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত। পুরো ফেব্রুয়ারি জুড়ে ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা। ছুটির দিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন