বাংলাদেশের আকাশসীমায় হেলিকপ্টার ও উড়োজাহাজ চলাচল উল্লেখ্যযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও এ-সংক্রান্ত নীতিমালাটি ২০০১ সালের। প্রায় দুই দশক আগের এ নীতিমালার কারণে এ খাতে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। তাই স¤প্রতি নতুন নীতিমালা তৈরি করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটক মন্ত্রণালয়। এতে অনির্ধারিত রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় সরকারি আটটি সংস্থার অনুমোদন লাগবে। স¤প্রতি বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এ-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করেছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনির্ধারিত রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় বেবিচকে আবেদন ও অনুমোদন সংগ্রহ করে তার অনুলিপি আটটি সংস্থায় পাঠাতে হবে। কোনো সংস্থার এ বিষয়ে আপত্তি থাকলে বেবিচককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবহিত করতে হবে। অন্যথায় তাদের অনাপত্তি রয়েছে বলে বিবেচিত হবে। যে সংস্থাগুলোর অনুমোদন লাগবে, সেগুলো হলো, আকাশ প্রতিরক্ষা পরিদপ্তর, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, বিমান গোয়েন্দা পরিদপ্তর, পুলিশের বিশেষ শাখা, পুলিশ সদর দপ্তর, র্যাব সদর দপ্তর ও বর্ডার গার্ড সদর দপ্তর। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমানার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে অপারেশন পরিচালিত হলে এ সংস্থাগুলোর অনুমোদন লাগবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, বিদেশি এয়ার অপারেটর অননুমোদিত রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চাইলে বেবিচকের কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবহিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে আকাশ প্রতিরক্ষা পরিদপ্তরের অনুমোদন, সামরিক গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের অনুমোদন এবং পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ, বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের অনুমোদন নিতে হবে।
অনির্ধারিত রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় আবেদন দাখিলের সাধারণ শর্তাবলির মধ্যে রয়েছে বেবিচকের কাছ থেকে এয়ার অপারেটরদের সার্টিফিকেট (এওসি) প্রাপ্ত অথবা অনুরূপ অনুমতিপ্রাপ্ত কোনো এয়ার অপারেটর দেশের অভ্যন্তরে কোনো অননুমোদিত রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চাইলে মূল আবেদনপত্র ফ্লাইট পরিচালনার কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে বেবিচকের কাছে দাখিল করতে হবে। এক্ষেত্রে বেবিচকের নির্ধারিত শর্ত মোতাবেক আবেদনপত্রে যেসব তথ্য থাকতে হবে তা হলো ফ্লাইট প্রস্তাবিত সময়সূচি, প্রস্তাবিত রুটসহ অবতরণস্থলের নামসহ সঠিক ভৌগলিক স্থানাঙ্ক, এয়ারক্রাফট ভাড়া গ্রহণকারী সংস্থা অথবা ব্যক্তির বিবরণ, যাত্রীর পরিচয়পত্র অথবা সরকারি সংস্থা প্রদত্ত পরিচয়পত্রের কপিসহ (অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্ম সনদের কপি) বিস্তারিত বিবরণ।
যাত্রী বিদেশি হলে সংশ্লিষ্ট দেশের নাম, পাসপোর্ট নাম্বার, ভিসার ফটোকপি (মেয়াদসহ) ও বর্তমান ঠিকানা এবং টেলিফোন নম্বর আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। ভ্রমণের উদ্দেশ্য, বহনকৃত মালামালের বিস্তারিত বিবরণ ও ঘোষণা এবং রাত্রিকালীন অবস্থানের ক্ষেত্রে আবাসনস্থলের অবস্থানের কারণ-সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।
নীতিমালায় নিরাপত্তা বিধানাবলিতে বলা হয়েছে, কোনো বিমান থেকে গমনাগমনের ক্ষেত্রে উড্ডয়নের আগে এবং অবতরণের পর বেবিচকের নির্ধারিত নিয়মানুযায়ী টার্মিনাল ভবন অথবা এতদুদ্দেশ্যে নির্ধারিত কোনো স্থান থেকে বেবিচকের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী ফ্লাইটের যাত্রী ক্রু ও বহনকৃত মালামাল কার্গোর নিরাপত্তা তল্লাশি সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া বিমানবন্দর ছাড়া অন্যকোনো স্থানে অবতরণ ও উড্ডয়নকালে স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে এবং আগমন ও প্রস্থানকালে পুলিশ ফোর্সের তত্ত¡াবধানে যাত্রী ও বহনকৃত মালামালের সাধারণ নিরাপত্তা তল্লাশি নিশ্চিত করতে হবে এবং পুলিশ সদর দপ্তর বিষয়টির সমন্বয় করবে।
একমাত্র জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া অননুমোদিত স্থানে ফ্লাইট অবতরণ করানো যাবে না। জরুরি পরিস্থিতিতে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল ইউনিটকে এবং স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করতে হবে। এ ধরনের জরুরি অবতরণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে বেবিচকের সদর দপ্তরে লিখিতভাবে বিস্তারিতভাবে অবগত করতে হবে এবং অননুমোদিত রুটে চলাচলকারী সব এয়ারক্রাফটের গতিপথ বেবিচক কর্তৃক মনিটরিংয়ের উদ্দেশ্যে বেবিচকের অননুমোদিত ট্র্যাকিং ডিভাইস সংযোজিত থাকতে হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, শর্ত ভঙ্গ করলে, অত্র নীতিমালার শর্তাদি ভঙ্গ করে কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করা হলে সরকারি নিরাপত্তা/আইন প্রয়োগকারী সংস্থা/গোয়েন্দা সংস্থা/বেবিচক উক্ত এয়ারক্র্যাফট ও দোষী ব্যক্তিগণকে আটক ও ফ্লাইট বাতিল করতে পারবে। এ বিষয়ে বেবিচকের সংশ্লিষ্ট আইন ও দেশের প্রচলিত প্রযোজ্য আইনে শাস্তি প্রদান করা যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন